শেখ হাসিনাকে হত্যার ছক কষছে জামায়াত-জঙ্গিরা!
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনা করেছিল জামায়াত নিয়ন্ত্রিত জঙ্গিরা। আর এ পুরো প্লট তৈরি হয়েছিল ভারতের পশ্চিতবঙ্গ রাজ্যের বর্ধমান জেলার মাটিতে। আজ বুধবার ভারতের জনপ্রিয় গণমাধ্যম জি নিউজের বাংলাভার্সন ২৪ ঘণ্টার এক খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার ছক কষছে নিষিদ্ধ জঙ্গিগোষ্ঠী জামাতুল মুজাহিদিন? বর্ধমানকাণ্ডে এনআইএ তদন্তে উঠে এল এমনই বিস্ফোরক তথ্য। খাগড়াগড়ে বিস্ফোরক বানানোর অন্যতম উদ্দেশ্য যে বাংলাদেশে নাশকতা ঘটানো ছিল তাও জানা গেছে তদন্তে। বাংলায় ঘাঁটি গাড়া জঙ্গিদের সঙ্গে হাসিনা হত্যার ছকের কোন যোগ আছে কিনা সে নিয়েও সন্দেহ দানা বাঁধছে।
ডোভাল পশ্চিমবঙ্গ সফরের পর সরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের কাছে যে রিপোর্ট পেশ করেছিল তাতেই তিনি স্পষ্ট করেছেন জামায়াতের ছক। হাসিনাকে হত্যার ছক কষছিল জামাত জঙ্গিরা। সেটাই জানানো হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়কে। বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ও এ খবরে বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
এদিকে অপর এক খবরে বলা হয়, ইসলামি সংগঠন জামায়াতের হাত ধরে কয়েকশ বাংলাদেশি ও ভারতীয় তরুণ আইএস জঙ্গিদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা এনআইএ এ দাবি করেছে। গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম ২৪ ঘণ্টা জানায়, ২০১০ সাল থেকে ভারতের মাটিকে কাজে লাগিয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছে এ অঞ্চলের জঙ্গিরা।
সোমবার বর্ধমান বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্তের অগ্রগতি খতিয়ে দেখতে পশ্চিমবঙ্গে আসেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল ও ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড- এনএসজি’র প্রধান জয়ন্ত চৌধুরী। এদিন প্রকাশিত গোয়েন্দা তথ্যমতে, বাংলাদেশে জামায়াতের জঙ্গিগোষ্ঠীও নিয়ন্ত্রিত হয় ভারত থেকে।
এর আগে গত সপ্তাহে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা এনআইএ’র এক বিবৃতিতে বলা হয়, পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান থেকে জঙ্গিরা বাংলাদেশে বিস্ফোরক জাতীয় দ্রব্য ও সরঞ্জাম পাচারের প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আটক ৪ জন ও তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশি জঙ্গি গোষ্ঠী জেএমবির সদস্য বলেও জানানো হয়। প্রসঙ্গত গত ২ অক্টোবর বর্ধমানের খাগড়াগড়ে একটি বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণে ২ কথিত বাংলাদেশির মৃত্যু ঘটে।
অন্যদিকে ‘হাসিনা হত্যার ছকে জামাত, বর্ধমান ঘিরে সন্দেহ বাড়ছে’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরে ভারতের সর্বাধিক জনপ্রিয় বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিক বলেছে, বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জঙ্গিগোষ্ঠী জামাতুল মুজাহিদিন সে দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করার ছক কষছে বলে জানতে পেরেছেন জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ-র গোয়েন্দারা।
এ দিন দিল্লিতে এনআইএ’র ৩ পদস্থ কর্তা সংবাদসংস্থা রয়টার্সকে জানান, এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য-সম্বলিত ডশিয়ার বাংলাদেশ সরকারের হাতে তুলে দেয়া হবে। বর্ধমান বিস্ফোরণ কাণ্ডে জামাতের হাত রয়েছে বলে আগেই জানা গিয়েছিল। খাগড়াগড়ের সেই বাড়িতে বিপুল পরিমাণে বিস্ফোরক বানানোর অন্যতম উদ্দেশ্য যে বাংলাদেশে নাশকতা ঘটানোই ছিল, তা-ও জানা গিয়েছে তদন্তে। এ বার সরাসরি হাসিনা হত্যার ছক সামনে আসার পরে তার সঙ্গেও বাংলায় ঘাঁটি গাড়া জঙ্গিদের যোগ আছে কি না, সে সন্দেহ দানা বাঁধতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ সরকারও সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করছে।
বর্ধমান বিস্ফোরণের তদন্তে নেমে এনআইএ গোয়েন্দারা ইতিমধ্যেই জানতে পেরেছেন, ২০১১ সাল থেকেই শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে সক্রিয় ছিল মৃত শাকিল ও তার সঙ্গীরা। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বিস্ফোরণ ঘটানো ছাড়াও হাসিনার দল আওয়ামী লীগের নেতাদের হত্যার জন্য বিস্ফোরকগুলো ব্যবহার করার পরিকল্পনা ছিল তাদের। গোয়েন্দাদের মতে, গত ৩ বছরে ৪ দফায় ৩০টি করে আইইডি (ইম্প্রোভাইজ্ড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) অর্থাৎ মোট ১২০টি বিস্ফোরক প্রতিবেশী দেশে পাঠানো হয়েছে। সে সব কোথায় পৌঁছেছে, সে বিষয়ে ঢাকাকে প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য ইতিমধ্যে দিয়েছে ভারত। ভবিষ্যতে একটি পূর্ণাঙ্গ ডশিয়ারই দেয়া হবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, এত দিন বাংলাদেশের মাটি ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের কাজে ব্যবহার হতো বলে অভিযোগ করে এসেছে দিল্লি। এখন পাল্টা অভিযোগ আমাদের বিরুদ্ধে উঠছে! প্রত্যাশিতভাবেই এনআইএ এ দিন যা বলেছে, তার নিরিখে বর্ধমান বিস্ফোরণের ঘটনার তাৎপর্য আরও কয়েক গুণ বেড়ে যাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলিতে যে ভাবে জঙ্গি নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে পড়েছে, তাতে রীতিমতো উদ্বিগ্ন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ।
গতকাল পশ্চিমবঙ্গ সফরের পর আজ সকালে রাজনাথের সঙ্গে বৈঠকে বসেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, ওই বৈঠকেও জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) পশ্চিমবঙ্গকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন রাজ্যে কী ভাবে নিজেদের শিকড় ছড়িয়ে দিয়েছে, তার সার্বিক চিত্র রাজনাথের সামনে তুলে ধরা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, জঙ্গি রাডারে পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেন রাজনাথ। তিনি অবিলম্বে জঙ্গিদের ওই নেটওয়ার্ককে চিহ্নিত করে তা নির্মূল করার নির্দেশ দেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছ থেকে পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি সম্পর্কে জেনে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রীও। তিনি অবিলম্বে এ বিষয়ে কড়া পদক্ষেপ করার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন।
এ দিন পশ্চিমবঙ্গে জঙ্গিদের কার্যকলাপ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে রাজনাথকে দেখানো হয়, কীভাবে গোটা অপারেশনে মহিলারা সক্রিয়ভাবে যুক্ত। ওই মহিলাদের মূলত শিমুলিয়া ও লালগোলার প্রতিষ্ঠানে জেহাদি প্রশিক্ষণ দেয়া হতো। এ নিয়ে নিয়মিত ক্লাস করানো ছাড়াও অস্ত্রশিক্ষার বিভিন্ন কলাকৌশল, বিস্ফোরক বানানো এবং তার ব্যবহারও শেখানো হতো তাদের। মন্ত্রক জানিয়েছে, গোটা রাজ্যে খাগড়াগড়ের মতো ২৫টি মডিউল এক সঙ্গে কাজ করত। তবে বর্ধমান বিস্ফোরণের পর ধরপাকড়ের আশঙ্কায় তাদের কাজকর্ম আপাতত বন্ধ রয়েছে। জড়িতদের অধিকাংশই ফেরার। প্রাথমিক ভাবে তিরিশ জনের একটি দলকে চিহ্নিত করে তাদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে এনআইএ। পলাতকেরা নেপাল বা বাংলাদেশে পালিয়ে যেতে পারে এই আশঙ্কায় সতর্ক করা হয়েছে দু’দেশের প্রশাসনকেও।
বর্ধমানের জঙ্গি নেটওয়ার্কের সঙ্গে দেশের অন্যান্য প্রান্তের জঙ্গিদের যোগাযোগও সামনে এসেছে। গতকাল ডোভালের সঙ্গে ছিলেন এমন এক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তা আজ বলেন, ইতিমধ্যেই আসাম ও চেন্নাইয়ের বিভিন্ন জঙ্গি নেটওয়ার্কের সঙ্গে বর্ধমানের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ মিলেছে। সব কটি ক্ষেত্রেই একই ভাবে কাজ করত জঙ্গিরা। গোয়েন্দারা বিশেষভাবে চিন্তিত বর্ধমানের সঙ্গে অসমের যোগাযোগ নিয়ে। বর্ধমান কাণ্ডের পর বরপেটা থেকে ৬ জনকে গ্রেফতার করে অসম পুলিশ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এক জনের সঙ্গে বর্ধমান কাণ্ডে মৃত এক জনের সরাসরি যোগ থাকার প্রমাণ মিলেছে।
আনন্দবাজারের খবরে আরও বলা হয়, কেন্দ্র মনে করছে, এখন সব রকম সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিলেও প্রাথমিকভাবে রাজ্য পুলিশের তদন্তে ঢিলেমি ছিল। বর্ধমান-কাণ্ডের মূল চক্রী শেখ কৌসর ২ থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত বর্ধমানেই ছিল। পরে সে নদিয়া-হাকিমপুর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে বলেই ধারণা গোয়েন্দাদের। তাদের অভিযোগ, তখন রাজ্য পুলিশ আরও সক্রিয় হলে কৌসরসহ অন্য অভিযুক্তদের ধরা সহজ হতো। পশ্চিমবঙ্গের এ পরিস্থিতি নিয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে ফের নালিশ করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহও। রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলেও দিল্লিকে জানিয়েছেন। যদিও কেন্দ্র তা মনে করে না। তবে পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রাখা হচ্ছে বলে বার্তা দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।