কেশবপুর কলেজে অনিয়ম দুর্নীতি অধ্যক্ষসহ দুজন বরখাস্ত ২১ শিক্ষক চাকরিচ্যুত
যশোরের কেশবপুর কলেজে প্রায় দুই কোটি টাকার অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে অধ্যক্ষ রফিকুল বারীসহ দুজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একই কলেজে জাল নিবন্ধন সনদ দিয়ে চাকরি করা ২১ জন শিক্ষককে চূড়ান্তভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির সুপারিশ মোতাবেক কলেজের পরিচালনা পর্ষদ গতকাল বৃহস্পতিবার সভা করে এ সিদ্ধান্ত নেয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পর্ষদের সভাপতি রেবা ভৌমিক।
কলেজের পরিচালনা পর্ষদ ও তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাজেট অধিশাখার যুগ্ম সচিব মো. মজিবুর রহমান এবং পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. রাশেদুজ্জামান ১১ ও ১২ জুন কেশবপুর কলেজের প্রশাসনিক ও আর্থিক অনিয়মের তদন্ত করেন। তদন্তে কলেজের প্রায় দুই কোটি টাকার অনিয়মের প্রমাণ পান। পাশাপাশি ২১ জন শিক্ষক জাল নিবন্ধন সনদ দিয়ে চাকরি করছেন বলে প্রমাণ পান। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত হিসাব নির্দেশিকা মোতাবেক প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের হিসাব সংরক্ষণ করা হয়নি। প্রতিষ্ঠানের লাখ লাখ টাকা অনিয়মতান্ত্রিকভাবে ব্যয়ের মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খাতওয়ারি অনিয়মের ক্ষেত্রে কলেজে আপ্যায়ন বাবদ প্রায় চার লাখ ৬৩ হাজার টাকা এবং বিগত পরিচালনা পর্ষদের সভার সদস্যদের সম্মানী বাবদ ৪৮ হাজার টাকা খরচ করা হয়। ২০১৩ সালের ১০ মার্চ যশোর শিক্ষা বোর্ড কলেজের খেলাধুলা বাবদ তিন লাখ ৯৫ হাজার টাকা অনুদান দেয়। ওই খেলা পরিচালনার জন্য প্রতিষ্ঠানের তহবিল থেকে অতিরিক্ত চার লাখ ৬৫ হাজার টাকার খরচ দেখানো হয়। এসবের কোনো ভাউচার না থাকায় অধ্যক্ষ তদন্ত কমিটির কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে এ রকম অসংখ্য প্রশাসনিক ও আর্থিক অনিয়মের জন্য ৩৩ রকমের মন্তব্য সুপারিশ করে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে এমপিও (মান্থলি পে-অর্ডার) বাতিল করে আইনানুগ ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এবং কলেজের পরিচালনা পর্ষদকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি রেবা ভৌমিকের সভাপতিত্বে গতকাল বিকেলে কলেজে পর্ষদের সভা হয়। সেখানে অধ্যক্ষ রফিকুল বারী ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের বই বিক্রির অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে কলেজের কম্পিউটার বিভাগের শিক্ষক বুলবুল কুদ্দুসকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। জাল নিবন্ধন সনদ দিয়ে চাকরি করায় ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা (বিএম) শাখার এমপিওভুক্ত শিক্ষক কবিরুল ইসলাম, রাবেয়া খাতুনসহ সম্মান শ্রেণির ২১ জন শিক্ষককে চূড়ান্ত চাকরিচ্যুত করা হয়।
রেবা ভৌমিক বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদন পেয়ে তা বাস্তবায়নের জন্য সভা আহ্বান করি। সভায় প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের অভিযোগে কলেজের অধ্যক্ষকে সাময়িক বরখাস্ত ও ২১ জন শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।’
চাকরিচ্যুত শিক্ষক বাহারুল আলম বলেন, ‘আমার কোনো জাল সনদ নেই। পরিচালনা কমিটি অন্যায়ভাবে আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। আমি এর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব।’
অধ্যক্ষ রফিকুল বারী বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অর্থ আত্মসাতের যে অভিযোগ করা হয়েছে, সেটিও সত্য নয়।’ ভুয়া নিবন্ধনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নিয়োগ বোর্ডের সদস্যদের এসব দেখার দায়িত্ব। বিগত কমিটির সভাপতি ও হুইপ শেখ আবদুল ওহাব বিভিন্ন সময়ে সভায় আমাকে আপ্যায়ন করতে বলেন। সেখানে প্রতিবার লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করতে হতো। আমি অবস্থার শিকার হয়ে তখন এই ব্যয় করি।’