চার জয়ের সাক্ষী ওঁরা তিন আহা, টেস্ট জয়!
সকালে অনুশীলন ছিল না। বিকেলে খুলনার ফ্লাইট। আগের রাতটা তাই অনেক ক্রিকেটারই কাটালেন নিজের বাসায়। যাঁরা হোটেলে ছিলেন, তাঁদের মধ্যে শাহাদাত হোসেনকে পাওয়া গেল সোনারগাঁওয়ের ব্রেকফাস্ট রুমে। এ কথা সে কথার পর ভুলটা ধরিয়ে দিতেই চমকে উঠলেন শাহাদাত, ‘তাই নাকি!’
ভুলটা তিনি করেছেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট জয়ের পর। আনন্দের আতিশয্যে বলে ফেলেছিলেন, টেস্ট জয়ের স্বাদ নাকি এবারই প্রথম পেলেন। আসলে তা নয়। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২-০ টেস্টে হারানো সিরিজেও খেলেছেন শাহাদাত, দুই টেস্টে উইকেট পেয়েছিলেন ৩টি। টেস্ট জয়ের এমন রোমাঞ্চকর স্মৃতি কীভাবে তিনি ভুলে গেলেন? জুসের গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে বললেন, ‘আমার দেড় বছর আগের কথাই মনে থাকে না, এটা তো পাঁচ বছর আগের কথা।’
তবে মনে করিয়ে দেওয়ার পর শাহাদাতের খুব ভালোভাবেই মনে পড়ল ২০০৯ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের কথা, ‘এখন মনে পড়েছে…সাকিব অধিনায়ক ছিল না! জেতার পর আমরা বিচে গিয়ে লাফালাফি করেছিলাম। আমাদের সেলিব্রেশন মানে তো এ-ই…।’
বাংলাদেশ যে পাঁচটি টেস্ট জিতেছে, তার তিনটিতেই খেলেছেন শাহাদাত। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওই দুটি টেস্ট ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এবারের প্রথম টেস্ট। শাহাদাতের চেয়েও বেশি টেস্ট জয়ের স্বাদ পেয়েছেন বাংলাদেশের বর্তমান দলের তিন ক্রিকেটার—তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসান। ২০০৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চট্টগ্রামে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়ের আনন্দ অবশ্য কারোরই পাওয়া হয়নি। তখনো যে টেস্ট অভিষেকই হয়নি এঁদের কারও। তবে অভিষেক হওয়ার পর বাংলাদেশ দল যে চারটি টেস্ট জিতেছে, সেই চারটিতেই ছিলেন এই ত্রয়ী। তামিম অবশ্য এটাকে খুব বড় কোনো অর্জন মনে করছেন না, ‘শুনে ভালো লাগছে যে বাংলাদেশের হয়ে চারটা টেস্ট জয়ের ম্যাচে আমি ছিলাম। তবে এটাতে গর্বিত হওয়ার কিছু নেই। আমাদের উচিত ছিল এই কয় বছরে আরও টেস্ট জেতা, টেস্টখেলুড়ে দল হিসেবে আরও অনেক ভালো করা।’
সাকিব, তামিম, মুশফিক ছাড়া চারটি টেস্ট জয়ের স্বাদ পেয়েছেন, বাংলাদেশে এমন ক্রিকেটার আছেন আর একজনই—
মোহাম্মদ আশরাফুল। নিষেধাজ্ঞার কারণে আশরাফুল এখন ক্রিকেট থেকে নির্বাসিত। নইলে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঢাকায় সর্বশেষ জয়টি ছাড়া বাংলাদেশের বাকি সব টেস্ট জয়ী দলেই ছিলেন তিনি।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের বাংলাদেশ দলে শাহাদাতের মতো টেস্টে তিন জয়ের স্বাদ পেয়েছেন আরও একজন—মাহমুদউল্লাহ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশ যে তিনটি টেস্ট জিতেছে, তার প্রথম দুটিতেই শুধু ছিলেন না তিনি। টেস্ট জয়ের আনন্দের কথা বললে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মুমিনুল হককে সৌভাগ্যবানই বলতে হয়। মাত্র ১০ টেস্টের ক্যারিয়ারেই যে দুবার তা পেয়ে গেছেন। মুমিনুলের খেলা বাকি আট টেস্টের মধ্যেও চারটি ড্র। ক্যারিয়ারের প্রথম ১০ টেস্টের মাত্র ৪টিতে হার—এমন শুরু বাংলাদেশের বেশির ভাগ ক্রিকেটারের জন্য সুখকল্পনার মতো।
৮৬টি টেস্ট খেলে বাংলাদেশের জয় এখন পর্যন্ত মাত্র ৫টি। কে কয়টা টেস্টে জয়ের স্বাদ পেয়েছেন, এই হিসাব করাটাও এ কারণেই তাই এমন সহজ। একসময় ওয়ানডেতেও বাংলাদেশের জয়গুলো এমন মুখস্থ বলে দেওয়া যেত। অনেক দিনই সেই চিত্রটা বদলে গেছে। টেস্টেও হয়তো একদিন বদলাবে। জয়ের সংখ্যাটা রাতারাতি বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগ তো এখন দুয়ারে দাঁড়িয়ে। এই সিরিজের বাকি দুটি টেস্টে জয়ের আশাটা মোটেই বাড়াবাড়ি কিছু নয়। শাহাদাতের চোখেও বাকি দুই টেস্টে বাংলাদেশই ফেবারিট, ‘খুলনায় যদি ঢাকার মতো উইকেট হয়, ওখানেও ওরা (জিম্বাবুয়ে) পারবে না।’