বিএনপিকে অকৃতজ্ঞ বললেন আমান আযমী
জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযমের মৃত্যুতে শোক না জানানোয় বিএনপিকে অকৃতজ্ঞ বলেছেন তাঁর চতুর্থ ছেলে আবদুল্লাহিল আমান আযমী।
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে এমন ক্ষোভ প্রকাশ করে আযমী বলেন, জামায়াত ছাড়া বিএনপি কখনো ক্ষমতায় যেতে পারেনি। ভবিষ্যতেও পারবে না।
২৮ অক্টোবর সন্ধ্যা ছয়টা ২৬ মিনিটে আবদুল্লাহিল আমান আযমী ‘তারেকের নির্দেশে আযমের জানাজা বর্জন করল বিএনপি’ শিরোনামে ফেসবুকে একটি নিউজ শেয়ার করেন। নিচে প্রতিক্রিয়ায় ইংরেজিতে লেখেন, ‘গোলাম আযমের মৃত্যুর পর বিএনপির নীরবতায় পুরো জাতি হতাশ। আমি জানি না, কেন তারা এমনটি করল। এটা বলতে আমার কোনো দ্বিধা নাই যে জামায়াতের সমর্থন ছাড়া বিএনপি কখনোই ক্ষমতায় যেতে পারত না। জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা আমির এবং আজীবন আধ্যাত্মিক গুরু গোলাম আযমের মৃত্যুতে দলটির নীরবতা অপ্রত্যাশিত ও অগ্রহণযোগ্য। বিএনপির মঙ্গল হবে যদি তারা মনে রাখে যে জামায়াতের সমর্থন ছাড়া তারা কখনোই আবার ক্ষমতায় যেতে পারবে না। এটা আমার উন্মুক্ত চ্যালেঞ্জ। কতই না অকৃতজ্ঞ তারা!’
আযমীর এই বক্তব্যে ফেসবুকে বিএনপি-জামায়াতের সমর্থকদের মধ্যে আলোচনার ঝড় ওঠে। তবে জামায়াত বা বিএনপি এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দেয়নি। জামায়াত বলছে, তারা আযমীর ব্যক্তিগত মত নিয়ে কোনো কথা বলবে না। বিএনপিও এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হয়নি।
জানতে চাইলে আবদুল্লাহহিল আমান আযমী প্রথম আলোকে বলেন, কোনো ক্ষোভ বা আক্রোশ থেকে নয়, জেনে-বুঝেই তিনি এ কথা বলেছেন। তবে এই বক্তব্য নিয়ে জামায়াতের কোনো নেতার সঙ্গে তাঁর কোনো কথা হয়নি। কেউ তাঁকে এই বক্তব্য প্রত্যাহার করতেও বলেননি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা ও গণহত্যার প্রতীক গোলাম আযমকে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের দায়ে ৯০ বছরের সাজা দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। আদালত বলেন, গোলাম আযমের অপরাধের মাত্রা ছিল মৃত্যুদণ্ডযোগ্য। কিন্তু বয়স ও শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় তাঁকে এই সাজা দেওয়া হয়। এই সাজা চলা অবস্থায়ই ২৩ অক্টোবর রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) মারা যান গোলাম আযম। ২৫ অক্টোবর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে জানাজার পর মগবাজারে তাঁকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। দল হিসেবে বিএনপির পক্ষ থেকে কেউ গোলাম আযমের জানাজায় যাননি। বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে শোকও জানায়নি।
ফেসবুকে আযমীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় নাজমুল নামে একজন মন্তব্য করেন, ‘আমি শতভাগ নিশ্চিত, বিএনপি জামায়াতের সমর্থন ছাড়া ক্ষমতায় যেতে পারবে না।’ শাহিন সাঈদা নামে একজন মন্তব্য করেন, ‘বিএনপি মুনাফেকের দল।’ মোক্তার হোসেন নামের একজন মন্তব্য করেন, ‘এটি বিএনপির জন্য লজ্জার।’ আহমেদ দেওয়ান লেখেন, ‘বিএনপি পরগাছা।’ মোহাম্মদ ওয়ালিউল্লাহ, রেদোয়ানুল ইসলাম, জয়নাল আবদিন, আবুল মনসুর, আশরাফুল ইসলামসহ অনেকে আযমীর বক্তব্য সমর্থন করেন। আযমীর সমালোচনা করেও অনেকে মন্তব্য করেন। ছদ্মনামে তাঁকে গালিগালাজও করা হয়।
আবদুল্লাহহিল আমান আযমী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বাবার জন্য সারা বিশ্ব শোক পালন করেছে, বিভিন্ন জায়গায় জানাজা হয়েছে। গোলাম আযম একজন ক্ষণজন্মা মানুষ। অথচ তাঁর সম্পর্কে বিএনপি নিশ্চুপ থাকল। কোনো শোক জানাল না। আমরা এটা আশা করিনি। আত্মীয়স্বজন-বন্ধুদের কাছ থেকে আমি হাজারবার এই প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছি, বিএনপি কেন শোক জানাল না। আমি উত্তর দিতে বিব্রত বোধ করেছি। এর চেয়ে অনেক কম জনপ্রিয় কেউ মারা গেলেও তো শোক দেওয়া হয়। আমি কোনো ক্ষোভ বা আক্রোশ থেকে এ কথা বলিনি। আমার কাছে এটি বিস্ময়কর মনে হয়েছে। আমার কাছে মনে হয়েছে, এটি বিএনপির দীনতা।’
আযমী বলেন, ‘ফেসবুকে বেশির ভাগই আমাকে সমর্থন জানিয়েছেন। বিএনপির কেউ কেউ আশালীন, অশোভন মন্তব্য করেছেন। যাচ্ছেতাই ভাষায় গালিগালাজ করেছেন। এর মাধ্যমে তাঁরা তাঁদের পারিবারিক পরিচয় প্রকাশ করেছেন।’
জামায়াত ছাড়া বিএনপি ক্ষমতায় যেতে পারবে না—এমন মন্তব্য সম্পর্কে আযমী বলেন, ‘অমি আমার মত দিয়েছি। আমি দেখতে চাই, তারা (বিএনপি) বা দেশের জনগণ কী মনে করে। বিএনপির নতুন করে হারাবারই বা কী আছে?’
আপনার এই বক্তব্যের সঙ্গে জামায়াত কি একমত? জামায়াতের কেউ কি আপনার এই বক্তব্যের বিরোধিতা করেছেন বা বক্তব্য প্রত্যাহার করতে বলেছেন? আযমী বলেন, ‘জামায়াতের নেতাদের সঙ্গে আমার কেবল জানাজা নিয়ে কথা হয়েছে। গোলাম আযম তাঁদের আধ্যাত্মিক নেতা। কাজেই তাঁদের সহযোগিতা ছাড়া জানাজা করতে পারতাম না। তবে আমার এই স্ট্যাটাস নিয়ে তাঁদের সঙ্গে আমার কথা হয়নি। আর আমি দলটিরও কেউ না। আমার সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ নেই। সংগঠনের কোনো সম্পর্ক নেই। আমি বলতে পারব না জামায়াত এ নিয়ে কী ভাবছে।’
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আযমীর বক্তব্য একান্তই তাঁর ব্যক্তিগত। কারও ব্যক্তিগত মতামতের ওপর জামায়াতের কোনো বক্তব্য নেই।’
তবে জামায়াতের নির্বাহী কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, গোলাম আযমের জানাজায় বিএনপির কারও না যাওয়া তাঁদের দুর্বল নেতৃত্বেরই বহিঃপ্রকাশ।
এ বিষয়ে বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানতে স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা কেউ নাম প্রকাশ করে বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তবে তাঁরা বলেছেন, গোলাম আযমের ছেলের এই বক্তব্যকে তাঁরা শোকাহত ছেলের বক্তব্য হিসেবেই দেখছেন। এর সঙ্গে রাজনীতি মেলাচ্ছেন না।
আযামীর বক্তব্যেরে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বে থাকা যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গতকাল বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করব না।’