গোলাম আযম ও প্রতিরোধের পরাজয়
জীবিত অবস্থায় যা-ই হোক না কেন, মৃত মানুষকে সম্মান-শ্রদ্ধা করার একটা প্রচলন আমাদের সমাজে, ধর্মে দেখতে পাই। এ রকম একটি প্রচারণাও নানা সময়ে কিছু মহল থেকে চালানো হয়। সম্প্রতি গোলাম আযমের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে আর একবার বিষয়টি আলোচনায় এলো। এই গোলাম আযম কে? ১৯৭১ সালে সে কী করেছিল- কোনো কিছুই অজানা নয়। কিছু নিজে মুখে স্বীকারও করে গেছে বিভিন্ন সময়। তার কর্মকাণ্ডের যাবতীয় তথ্যপ্রমাণ ইতিহাসে রয়ে গেছে।
যুদ্ধাপরাধের বিচার, গোলাম আযমের মৃত্যু, তার জানাজায় লোক সমাগম, সরকার ও সরকার সংশ্লিষ্টদের ভূমিকা… প্রভৃতি বিষয় নিয়ে কিছু কথা।
১. জীবিত বা মৃত যা-ই হোক, চাইলেই কি সবাইকে শ্রদ্ধা করা যায়? সম্মান দেখানো যায়? শ্রদ্ধা বা সম্মান দেখানোর বিষয়টি তো মানুষের ভেতর থেকে আসে। একজন কুখ্যাত ডাকাত বা সন্ত্রাসীর মৃত্যুর পর কি আমরা সম্মান দেখাতে পারি? সম্মান দেখানো হয়? উত্তর নিশ্চয়ই ‘না’। তাহলে গোলাম আযমকে কী করে দেশের মানুষ সম্মান দেখাবে? একজন সন্ত্রাসী কিছু মানুষ হত্যা করে, চাঁদাবাজি করে, সন্ত্রাস করে। আর গোলাম আযম জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্মের বিরোধিতা করেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যার জন্য রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনী গঠন করেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যার আহ্বান জানিয়েছে। ধর্মের কথা বলে মানুষ হত্যা করেছে। নারীদের অসম্মান-অশ্রদ্ধা করেছে। তার গঠিত বাহিনীকে দিয়ে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করিয়েছে।
সেই মানুষটিকে বাংলাদেশের মানুষ সম্মান জানাতে পারে না।
২. গোলাম আযমের অপরাধ আদালত দ্বারা স্বীকৃত। সে আদালত দ্বারা দণ্ডপ্রাপ্ত প্রমাণিত যুদ্ধাপরাধী। দেশের মানুষের প্রত্যাশা ছিল সর্বোচ্চ শাস্তি, তা হয়নি। মানুষের ভেতরে ক্ষুব্ধতা ছিল, আছে। এ কারণে সরকার যথেষ্ট সমালোচনার মুখে পড়েছে। দণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযম বিষয়ে সরকারের যে আচরণ তাতে সমালোচনা হওয়া খুবই স্বাভাবিক। বিচারের আগেও গোলাম আযমের প্রতি সরকারের একটা সহানুভূতিশীল আচরণ দৃশ্যমান ছিল। বিচার এবং মৃত্যুর পরও তা অব্যাহত। এ প্রেক্ষিতে সরকারের সমালোচনা করছি। আরও সমালোচনা করা যায়। সেই সমালোচনা হবেও।
তবে এ বিষয়টিও আমাদের মনে রাখতে হবে যে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ছিল বলেই যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হতে পেরেছে। তদন্ত, তথ্যপ্রমাণে দুর্বলতা, কাক্সিক্ষত গতি পায়নি বিচার, ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বৃদ্ধি না করা- স্বয়ংসম্পূর্ণ না করা, নিম্নমানের প্রশ্নবিদ্ধ আইনবিদ নিয়োগ দেয়া… ইত্যাদি কারণে শেখ হাসিনা সরকার সমালোচিত। এই সমালোচনা অসত্য নয়। তারচেয়েও বড় সত্য এই যে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, কয়েকটি রায় হয়েছে, একজন অপরাধীর ফাঁসি হয়েছে, অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের বেশ কয়েকজনকে গত কয়েক বছর জেলে রাখা গেছে। এটা খুব ছোট বিষয় নয়। শেখ হাসিনা সরকারকে বড়ভাবে ধন্যবাদ দিতে হবে এ কারণে, বেশকিছু দুর্বলতা, টালবাহানা সত্ত্বেও এই কাজটি আওয়ামী লীগ সরকার ছাড়া আর কেউ করত না, করবে না।
সরকারকে, শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি এই কথাটিও মনে রাখতে অনুরোধ করব, এটা কিন্তু জনগণের প্রতি দয়া বা করুণা নয়। বিচার করতে চেয়েছিলেন বলেই দেশের মানুষ আপনাদের ভোট দিয়েছিল, একথা ভুলে যাবেন না।
৩. জামায়াতের পক্ষ থেকে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে প্রচারণা চালানো হয়েছে, হচ্ছে যে, মিথ্যা অভিযোগে তাদের নেতাদের বিচার চলছে। ট্রাইব্যুনাল আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন নয়।
বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। সেই রাষ্ট্রের যাবতীয় আইন মেনে, দেশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে নাগরিকরা বসবাস করেন। তাদের অনেক অভিযোগ থাকে। অভিযোগ থাকে আইন-আদালত, বিচার ব্যবস্থা, আইন শৃঙ্খলা… ইত্যাদি নিয়ে। একটি দেশের সামগ্রিক যে অবস্থা, তার সব প্রতিষ্ঠানের চিত্র এর চেয়ে খুব আলাদা হওয়ার সুযোগ থাকে না। উন্নয়ন চাই, তবে উন্নয়ন যতদিন হবে না, ততদিন আইন মানব না- সেটা করার কোনো সুযোগ নেই।
আদালত গোলাম আযমের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিয়েছিল। দেশের নাগরিক হিসেবে আমি খুশি নই। কিন্তু সেটা মানতে আমি বাধ্য, মেনে নিয়েছি। গোলাম আযমের সর্বোচ্চ শাস্তি না হওয়ায় খুশি না হলেও তা মেনে নিতে হয়েছে।
আপনাকে নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিলে, রায় আপনার পক্ষে গেলে মেনে নেবেন, আর দণ্ডপ্রাপ্ত হলে মানবেন না- এই দ্বিমুখিতা কেন?
এটা জামায়াতের স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য। সারাজীবন জামায়াত এমন স্ববিরোধী, বিভ্রান্তিকর, দ্বিমুখী রাজনীতি করেছে, এখনও করছে।
৪. লেখার শুরুতে উল্লেখ করেছি সম্মান ও শ্রদ্ধার প্রসঙ্গ। সমাজ ধর্মে আর একটি বিষয় প্রচলিত আছে, মৃত্যুর আগে বা মৃত্যুর পরে তার আত্মীয় পরিজন মৃত ব্যক্তির জানা-অজানা যাবতীয় অন্যায়-অপরাধের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। গোলাম আযম মৃত্যুর আগে স্বীকার করেনি যে, সে ১৯৭১ সালে মানুষ হত্যা করে, করিয়ে, বাংলাদেশের জন্মের বিরোধিতা করে, ভুল-অন্যায় করেছিল। পরিবারের পক্ষ থেকেও জানাজায় ১৯৭১ সালের ভূমিকার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা বা এমন কিছু করা হয়নি।
সুতরাং এই মানুষটিকে শ্রদ্ধা-সম্মান দেখানোর প্রসঙ্গটিও অবান্তর।
৫. বিতর্ক তৈরি হয়েছে তার দাফন-জানাজার প্রসঙ্গ নিয়েও। জাতীয় মসজিদে একজন যুদ্ধাপরাধীর জানাজা করতে দেয়া হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছিল কয়েকটি সংগঠন। জানাজায় লোক সমাগম হয়েছে উল্লেখ করার মতো, প্রচুরসংখ্যক। প্রতিরোধের ডাক দেওয়াওয়ালাদের অস্তিত্ব ছিল না কোথাও।
একটি জুতা নিক্ষেপ প্রতীকী প্রতিবাদ বলা যায়। অবিবেচকের মতো কর্মসূচি দিয়ে ব্যর্থ হওয়াটা লজ্জার।
এমনটা কেন ঘটল? প্রতিরোধের ডাক যারা দিল, তারা কারা, তারা কী করল?
ক. জামায়াত-শিবির প্রতিরোধের ডাককে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিল। তাদের মত ও পথের সব মানুষকে তারা জানাজায় অংশগ্রহণ করিয়েছে।
খ. জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের জানাজা যাতে নির্বিঘেœ হয়, সরকার তার সব রকমের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে।
গ. যারা মনে করেছেন জাতীয় মসজিদে যুদ্ধাপরাধীর জানাজা হওয়া উচিত নয়, সরকার তাদের মতের সঙ্গে মোটেই একমত নয়- তা প্রমাণ হয়েছে। ফলে নির্বিঘেœ বিপুলসংখ্যক জামায়াত-শিবিরের অংশগ্রহণে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জে জয়ী হয়েছে জামায়াত-শিবির। পরাজয় ঘটেছে প্রতিরোধের ডাক দেয়াওয়ালাদের।
ঘ. সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে প্রতিরোধের নামে আস্ফালন করানো হয়েছে কয়েকজন নির্বোধকে দিয়ে। কিন্তু ব্যর্থতার গ্লানি বহন করতে হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব মানুষকে।
৬. এই প্রতিরোধের ডাক দেয়াওয়ালারা কারা? আইয়ুব খান এক সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের দমন করার জন্য তার অনুগত ছাত্র নামধারী মাস্তান-ক্যাডার ‘পাচ পাত্তুর’দের হাতে সাপ তুলে দিয়েছিল। সেই সাপ নিয়ে তারা ক্যাম্পাসে ঘোরাফেরা করত। ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, কর্মচারীদের ভয় দেখাত। তাদেরকে কেউ ভয় বা সমীহ করেনি। পতন হয়েছে তাদেরই। তারই ধারাবাহিকতায় এখন দেশের মানুষ একদল নির্বোধের আস্ফালন দেখছেন। তারা মুখে বলছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা। আর যত রকমের অপকর্ম করা সম্ভব, তার সবই করছে। এরা সরকারের পোষ্য, সরকারের তোষামোদকারী-চাটুকার। সরকার বা পুলিশ কোনো কাজ করে দিলে তারা নিজেদের নামে চালাতে পারে, বাধা না দিলেও নিজেদের যোগ্যতায় কিছু করতে পারে না। সেই নীতি-নৈতিকতা, যোগ্যতা তাদের নেই। স্থূল নোংরা মানসিকতার ‘হঠাৎ নেতাদের’ পরিচালনায় এদের এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং শহীদ মিনার এলাকায় মাঝেমধ্যে আস্ফালন করতে দেখা যায়।
যেহেতু গোলাম আযমের জানাজা প্রতিরোধের কাজটি সরকার করে দেয়নি। সুতরাং তারাও কিছুই করতে পারেনি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মুখে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের কাছে পরাজয় মেনে নিয়েছে।
সরকার এবং আওয়ামী লীগ নীতি-নৈতিকতাহীন, বোধবুদ্ধিশূন্য, অবিবেচক, ইতিহাস না জানা একদল নির্বোধের হাতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তুলে দিয়ে, তাদেরকে দিয়ে ‘পুতুল নাচ’ দেখাচ্ছে দেশের মানুষকে। মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে তাদেরকে দিয়ে সমাজের গুণী মানুষদের অসম্মান, অশ্রদ্ধা করানো হচ্ছে প্রতিনিয়ত। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে, যুদ্ধাপরাধের বিচারের পক্ষের সবচেয়ে সক্রিয় মানুষদেরও অসম্মান করানো হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে।
সরকারের অনিয়ম-দুর্নীতির সমালোচনাকে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধের বিচারবিরোধী প্রচারণা হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে অত্যন্ত স্থূল ও অরুচিকরভাবে। স্বাধীন বাংলাদেশে এদেরকে আইয়ুব খানের সেই সাপ ওয়ালা’দের ভূমিকায় অবতীর্ণ করা হয়েছে।
৭. এরা ইতিহাসের সত্য জানে না, জানার যোগ্যতাও নেই। এই সমাজে যারা জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাস নিয়ে সবচেয়ে বেশি লিখেছেন, যারা যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে সবচেয়ে বেশি তৎপর, তাদেরই চরিত্র হনন করা হচ্ছে নির্বোধদের দিয়ে। এরা এতই কম জানা এবং অপরিণত মানসিকতার যে, মুক্তিযুদ্ধের সনদ জালিয়াতি করা আমলাদের নিয়ে তারা কথা বলতে পারে না। বিদেশি বন্ধুদের দেয়া ‘পদক কেলেঙ্কারি’ নিয়েও তারা নড়েচড়ে না। ১৯৭১ সালে যাদের বয়স ১৫ বছর ছিল না, তারা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাবেন না- সরকারের করতে যাওয়া উদ্ভট নীতিও তারা চোখে দেখে না, কানে শোনে না। এই আইন কার্যকর হলে বীরপ্রতীক তারামন বিবি আর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাবেন না। কারণ তার বয়স ১৯৭১ সালে ছিল ১৪ বছর। এমন যোদ্ধা আছেন হাজার হাজার। এসব নিয়ে সরকার পুতুল নাচায় না, পুতুল নাচায় তার অপকর্মের সমালোচনাকারীদের বিরুদ্ধে। ব্যবহার করে মুক্তিযুদ্ধকে।
৮. কথা বলছিলাম মৃত গোলাম আযম প্রসঙ্গে। বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান যুদ্ধবিমান নিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে আসার সময় নিহত হয়েছিলেন। পাকিস্তানের মাটিতে তাকে কবর দেয়া হয়েছিল। পাকিস্তানিরা বীরশ্রেষ্ঠ মতিউরের কবরে লিখে রেখেছিল ‘গাদ্দার’।
পাকিস্তানিদের কাছে তিনি ছিলেন ‘গাদ্দার’, আমাদের কাছে তিনি বীর, বীরশ্রেষ্ঠ। বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর বাংলাদেশের পক্ষে যুদ্ধে অংশ নিয়ে পাকিস্তানিদের হত্যা করতে পারেননি। তার আগেই তিনি নিহত হয়েছেন। তার কবরস্থান পাকিস্তান থেকে দেশে আনা হয়েছে। সম্মান দেখানো হয়েছে।
গোলাম আযমরা পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে থেকে, পাকিস্তানি বাহিনীকে সহায়তা করেছে, বাহিনী তৈরি করে সাধারণ মানুষ, মুক্তিযোদ্ধা, বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করিয়েছে। স্বাধীন দেশের বিচারে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।
সেই গোলাম আযম, সেই গোলাম আযমদের জানাজা বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলা ধর্ম বিরোধিতা নয়, কোনো অপরাধও নয়।
এখন কি গোলাম আযমের কবরে আমরা ‘গাদ্দার’ লিখে রাখব?
প্রশ্ন আসবে পাকিস্তানিরা যা করেছিল, আমরাও তা-ই করব কি না? না, আমরা তো পাকিস্তানিদের মতো বর্বর নই। পাকিস্তানিরা যা করেছিল আমরা তা করতে পারি না। কিন্তু মানুষের ঘৃণা প্রকাশে বাধা দেয়া যাবে না। যুদ্ধাপরাধীর জানাজায় এভাবে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া যাবে না।
৯. আবার অন্যভাবে বলি, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় যুদ্ধাপরাধীদের দাফন সম্পন্ন হওয়া উচিত। কোনো হইচই, লোক সমাগমের আয়োজন করার রাজনৈতিক সুযোগ না দিয়ে, আত্মীয় পরিজনদের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় দাফনের ব্যবস্থা করতে হবে। আজিমপুর কবরস্থানের একটি অংশে বিশেষভাবে আলাদা করে সব যুদ্ধাপরাধীর দাফনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তাহলে ইতিহাসে থেকে যাবে না যে, এখানে যুদ্ধাপরাধীদের দাফন হয়েছিল। মানুষ তার মনের ভাব সেখানে প্রকাশ করতে পারবে।
১০. বাস্তবে এমন কিছু না করে, একদল নির্বোধ পুতুলকে দিয়ে সরকার পুরো বিষয়টিকে বিতর্কিত করে দিচ্ছে। যাদেরকে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের মানুষদের অসম্মান করানো হচ্ছে, তাদেরকে দিয়েই আবার যুদ্ধাপরাধীদের প্রতিরোধের নামে নিস্ফল আন্দোলন করানো হচ্ছে। জনমানুষের কাছে এসব ‘জড় পদার্থতুল্য’ পুতুলদের কথা কোনো গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে না। প্রকারান্তরে সুচতুরভাবে ক্ষতি করা হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তির। উপকার করা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তির।
সরকার একাজ জেনে বুঝে করছে না, এমনটা বলার সুযোগ থাকছে না।
১১. এটা করে সরকার বা আওয়ামী লীগের কী লাভ?
সরকার, আওয়ামী লীগ চায় নির্বাচন ছাড়া আজীবন ক্ষমতায় থাকতে। যারা এর সমালোচক, সরকার তার পুতুলদের দিয়ে এদেরকে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করতে চায়।
বিএনপি নামক রাজনৈতিক দলটির ধ্বংস চায়। রাজনৈতিক দল হিসেবে থাকবে আওয়ামী লীগ এবং প্রতিপক্ষ হিসেবে থাকবে নিয়ন্ত্রিত জামায়াত-জঙ্গি।
বিশ্বকে দেখানো যাবে জামায়াত এবং জঙ্গিদের বিপক্ষে একমাত্র প্রগতিশীল শক্তি আওয়ামী লীগ। সুতরাং নির্বাচন মুখ্য নয়, মুখ্য নয় গণতন্ত্র। মুখ্য জামায়াত-জঙ্গি ঠেকাতে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকা।
এমন পরিকল্পনা নিয়েই চলছে দেশ।
কিন্তু সব পরিকল্পনা কি বাস্তবায়ন হয়? জামায়াত-জঙ্গিরা কি সব সময় নিয়ন্ত্রণে থাকবে?
আজ যাদের পৃষ্ঠপোষকতায় ক্ষমতায়, তারা কি সব সময় পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েই যাবে?
নিজেদের দলীয় শক্তি ধ্বংস করে অন্যের করুণায় ক্ষমতায় থাকা আর ভয়ঙ্কর বিপদ ডেকে আনা একই কথা।
বিষয়গুলো ভাবতে হবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে। নির্বোধ পুতুলদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক-বাহক বানানোর অপরাজনীতি বুমেরাং হচ্ছে, হবে।
এর দায় বহন করার শক্তি শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের থাকবে না। এই দায় বড় রকমের বিপদ ডেকে আনবে। শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ আরও কিছু বছর হয়ত ক্ষমতায় থাকতে পারবেন। তবে বড় বিপদেও পড়তে হবে। সেই বিপদে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশ, দেশের মানুষ
(সাপ্তাহিক ‘সাপ্তাহিক’ থেকে সংকলিত)