রেলমন্ত্রীর ৬৭ বছরের একাকী জীবনের অবসান
রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক মুজিবের ৬৭ বছরের একাকী জীবনের অবসান ঘটলো আজ। জীবন সঙ্গী হিসেবে হনুফা আক্তার রিক্তাকে কবুল বলেছেন তিনি। শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়। দেশের মানুষ এই প্রথম কোনো মন্ত্রীর বিয়ে দেখছে।
মহা ধুমধামে মন্ত্রীর বিয়ের আয়োজন করা হয়। সারাদেশ জুড়েই চলছে এ বিয়েকে ঘিরে চরম উৎসাহ এবং উত্তেজনা। মানুষের মুখে মুখে রেলপথ মন্ত্রী এবং হনুফা আক্তার রিক্তার গল্প।
৬৭ বছর বয়সী বর মুজিবুল হক মুজিবের বাড়ি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম। অপরদিকে ২৯ বছর বয়সী কণে হনুফা আক্তার রিক্তার বাড়িও কুমিল্লাতেই। ইতোমধ্যে অনেকেই রিক্তাকে ‘রেল ভাবী’, ‘রিক্তা ভাবী’ বলে সম্বোধন করা শুরু করেছেন। আসুন এবার জেনে নেওয়া যাক বর ও কণে পরিচিতি।
বর-পরিচিতি
রেলমন্ত্রীর গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বসুয়ারা গ্রামে। ১৯৪৭ সালে ৩১ মে চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বসুয়ারার এক সম্ভ্রান্ত বংশে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মৃত রজ্জব আলী। মাতা মৃত সোনাবান বিবি। আট ভাই ও এক বোনের মধ্যে মুজিবুল হক সবার ছোট।
উত্তর পদুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা লাভের পর মুজিবুল হক কাশিনগর বিএম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন ১৯৬৬ সালে। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে তিনি ১৯৬৮ সালে এইচএসসি এবং ১৯৭০ সালে বিকম পাস করেন। তিনি বর্তমানে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক।
কনে-পরিচিতি
কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার মীরাখোলা গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুন্সীবাড়ির মৃত আবদুল হাবিব উল্লাহ মুন্সীর দুই ছেলে ও পাঁচ মেয়ের মধ্যে সবার ছোট হলেন কনে হনুফা আক্তার রিক্তা। ১৯৮৫ সালের ২০ মে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
তিনি কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে চান্দিনা আবেদা নূর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০১ সালে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৩.৫০ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড, ঢাকার অধীনে আবেদা নূর উচ্চ মাধ্যমিক বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট থেকে ২০০৩ সালে অনুষ্ঠিত এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৩.৬৩ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।
চান্দিনা রেদোয়ান আহমেদ কলেজ থেকে ২০০৬ সালে অনুষ্ঠিত বিএ পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হন রিক্তা। পরে ঢাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। পাশাপাশি তিনি ব্যাচেলর অব ল (এলএলবি) পাস করেন। তার বড় ভাই নাছির উদ্দিন মুন্সী দুবাই প্রবাসী। ছোট ভাই আলাউদ্দিন মুন্সী সম্প্রতি মালদ্বীপ থেকে দেশে এসেছেন।
এর আগে গত ২৯ অক্টোবর ঢাকার শেরেবাংলানগর খামারবাড়ী কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে অনুষ্ঠিত হয় রেলমন্ত্রীর গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান। গায়ে হলুদের আগের দিন বরের বাড়ি চৌদ্দগ্রামের শ্রীপুর ইউনিয়নে বসুয়ারা গ্রাম থেকে কনের বাড়ি চান্দিনা উপজেলার মিরাখোলা গ্রামে সুসজ্জিত মাঙ্গলিক ডালা পাঠানো হয়।
ডালায় কনের জন্য নাকফুল, প্রসাধনীসহ গায়ে হলুদের সাজানি, হলুদের শাড়ি, জুতা ইত্যাদি পাঠানো হয়। এদিকে কনেপক্ষ গায়ে হলুদের দিন মাঙ্গলিক ডালা সজ্জিত করে ঢাকায় নিয়ে আসে। গায়ে হলুদের জন্য তিনটি মঞ্চ তৈরি করা হয়। একটিতে বর মুজিবুল হকের গায়ে হলুদ দেয়া হয়, আরেকটিতে কনে হনুফা আক্তার রিক্তার গায়ে হলুদ দেয়া হয়।
অপর মঞ্চে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মঞ্চস্থ হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সমন্বয়ক জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী মমতাজ এমপি। ওই মঞ্চে দেশের স্বনামধন্য শিল্পী আঁখি আলমগীর, কণা ও লিজা গান পরিবেশন করেন। জাতীয় সংসদের মহিলা সদস্য তারানা হালিমের নেতৃত্বে সাত মহিলা সংসদ সদস্য এ গায়ে হলুদের দায়িত্বে ছিলেন। তারাই সবকিছু করেছেন।