আনন্দবাজার পত্রিকাকে শেখ হাসিনা ; জঙ্গিদের মদদ দিলে ভয়ঙ্কর ফল হবে
জঙ্গিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিলে তার ফল ভয়ঙ্কর হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি কারও নাম করেননি ঠিকই, তবে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বোমা বিস্ফোরণে যেভাবে পশ্চিমবঙ্গের শাসকদলের নাম জড়িয়েছে, তাতে এই সতর্কবার্তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের জন্য বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবনে শুক্রবার কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকরে এমন কথা বলেছেন। আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত সাক্ষাৎকারটির শিরোনাম ‘জঙ্গিদের মদদ দিলে ভয়ঙ্কর ফল হবে, সতর্কবার্তা হাসিনার’।
দ্য রিপোর্টের পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি হুবহু তুলে ধরা হলো :
হাসিনা বলেন, ‘ভারতবিরোধী জঙ্গিদের উৎখাত করেছে তার সরকার। এবার ভারতের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার পালা। কোনো কোনো জঙ্গি ভিন্ন দেশে গিয়ে ষড়যন্ত্র করেছে, সে ব্যাপারে বাংলাদেশের কাছে বিস্তারিত তথ্য আছে।’
খাগড়াগড় বিস্ফোরণের তদন্তে নেমে ওই ঘটনার সঙ্গে জামাআতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ পেয়েছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। জানা গেছে, সেখানে তৈরি হওয়া বিস্ফোরকের অন্যতম গন্তব্য ছিল বাংলাদেশ। এমন কী খোদ হাসিনাকে হত্যা করে অভ্যুত্থান ঘটানোর পরিকল্পনাও ষড়যন্ত্রকারীদের ছিল বলে জানা গেছে। এনআইএর তিন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে সম্প্রতি এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স।
তিনি বলেন, ‘এই খবরে আমি উদ্বিগ্ন নই। আমি তো এক্সটেনশনে চলছি। বহু আগেই আমার মরে যাওয়ার কথা। কিন্তু মরিনি। এখন আর মরার ভয় পাই না।’
খাগড়াগড়কাণ্ডে জঙ্গিদের মদদদাতা হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের শাসকদলের নাম উঠে এসেছে। অভিযোগ, জঙ্গিদের নিরাপদ ঘাঁটি গড়ার ব্যাপারে সাহায্য করেছিলেন তৃণমূলের কেউ কেউ। এমন কী তৃণমূলের রাজ্যসভার এক সাংসদ জামায়াতের জঙ্গিদের সাহায্য করতে সারদার টাকা বাংলাদেশে পাচার করেছিলেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যেই দিল্লিকে অবহিত করেছে ঢাকা। সম্প্রতি নিউইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের বার্ষিক অধিবেশনের ফাঁকে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আলাদা বৈঠকে বাংলাদেশের জঙ্গিদের সঙ্গে ভারতের যোগ নিয়ে তথ্যাদিও দিয়েছেন হাসিনা।
সরাসরি তৃণমূলের নাম না করলেও হাসিনার মন্তব্য, ‘জঙ্গিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়াটা যে কী মারাত্মক, সবাইকে তা উপলব্ধি করতে হবে। যখন খবর পাই, পশ্চিমবঙ্গেই আশ্রয় নিয়ে জঙ্গিরা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে, সরকারের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে, মানুষের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে, তখন খুব খারাপ লাগে।’
মুক্তিযুদ্ধের সময় পশ্চিমবঙ্গের মানুষের অকুণ্ঠ সহযোগিতা এবং সে জন্য বাংলাদেশের মানুষের কৃতজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে হাসিনা আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের মানুষ কিছুতেই এ জিনিস সহ্য করবেন না। তারাই তাদের মাটি থেকে জঙ্গিদের শেষ করবেন।’
ভারতবিরোধী জঙ্গি দমনে অতীতে বাংলাদেশ সক্রিয়ভাবে সাহায্যের যে হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল, সে কথাও মনে করিয়ে দেন হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মাটি থেকে ভারতীয় জঙ্গিদের আমরা সমূলে উৎখাত করেছি। অনেকের অনেক প্রভাবশালী বন্ধু ছিল। আমরা কাউকে রেহাই দেইনি। আমরা আমাদের অঙ্গীকার পালন করেছি। ভারতের মানুষ এবার তাদের মাটি থেকে বাংলাদেশের জঙ্গি ঘাঁটিগুলো উচ্ছেদ করুক। ও দেশের যে সব মানুষ এই জঙ্গিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে, তাদের খুঁজে বের করে শাস্তি দিক।’ পশ্চিমবঙ্গ সরকারও এ কাজে সাহায্য করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
হাসিনা জানান, খাগড়াগড়ে বোমা বিস্ফোরণের তদন্ত নিয়ে বাংলাদেশের নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে ভারতীয় গোয়েন্দাদের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। তদন্তের ব্যাপারে ভারতকে সবরকম সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ। তদন্তের কাজে সাহায্য করতে শিগগির ভারতে যাবেন বাংলাদেশের গোয়েন্দারা।
হাসিনা আরও বলেন, ‘এখান থেকে তাড়া খেয়ে জঙ্গিরা এখন পড়শি দেশে আশ্রয় নিয়েছে। কারা এদের আশ্রয় দিয়েছে, কী চক্রান্ত চলেছে, এ সব নিয়ে অনেক খবর আমাদের কাছে রয়েছে। তবে সব কথা এখনই বলা যাবে না।’