বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ফলে সারাদেশে ভোগান্তি, উদ্বেগ
জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের ফলে শনিবার সকাল সাড়ে ১১টা থেকে সারাদেশে বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ফলে হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি অফিস,ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীলরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। কতক্ষণে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। তবে ছুটি থাকায় সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরতদের এ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে না।
শুধুমাত্র ময়মনসিংহ জেলায় দুপুর দেড়টায় ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিকেল সোয়া ৩টায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সচল হয়। তবে এর দেড় ঘণ্টা পর ঢাকা মেডিকেলে আবার বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দেয়। এর বাইরে অন্যসব বিভাগীয় শহর, জেলা-উপজেলা ও প্রত্যন্ত গ্রাম এখনো বিদ্যুৎহীন।
খুলনা: বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে খুলনাবাসী চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। পানির অভাব দেখা দিয়েছে অফিস-আদালত ও বাসা বাড়িতে। অফিস-আদালতে লিফট বন্ধ রয়েছে। হিমায়িত খাদ্য নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ফ্রজেন ফুড এক্সপোর্টের খুলনা অঞ্চলের সহ-সভাপতি খলিলউল্লাহ ঝড়ু বিকেল সাড়ে ৪টায় বলেন, আর এক ঘণ্টার মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক না হলে কয়েক শ’ কোটি টাকার চিংড়ি নষ্ট হয়ে যাবে। ডাচ-বাংলা ব্যাংকের খুলনা শাখার ব্যবস্থাপক আকবর হোসেন জানান, তিন ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ না থাকায় এটিএম বুথগুলো বন্ধ রয়েছে। ফলে গ্রাহকরা ভোগান্তিতে পড়েছেন।
ওজিপাডিকোর ম্যানেজিং ডিরেক্টর প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ জানান, দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য কাজ চলছে।
বরিশাল: বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ফলে অফিস-আদালতে কাজকর্মে চরম ব্যাঘাত ঘটছে। পাশাপাশি পানির সমস্যায় পড়েছেন নগরবাসী। ন্যাশনাল ব্যাংকের কর্মকর্তা অরুণ গুদা বলেন, সকাল থেকে বিদ্যুৎ না থাকায় জেনারেটর চালিয়ে গ্রাহকসেবা দেওয়া হচ্ছে।
জেলার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. হাসান বলেন, ২০০৫ সালে এ রকম বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটেছিল একবার। এর ৯ বছর পর আবার বিপর্যয়। জাতীয় গ্রিডের দুটি ইউনিট চালু হওয়ার পর ২টা ৫৫ মিনিটে কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ দেওয়া হয়েছে।
রাজশাহী: হঠাৎ করে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় বিদ্যুৎনির্ভর প্রতিষ্ঠানগুলো বিকল হয়ে পড়েছে। রাজশাহীর বিসিক শিল্পনগরীর বিভিন্ন কলকারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বন্ধ রয়েছে নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে গড়ে উঠা ওয়েল্ডিংয়ের কারখানা।
এদিকে, বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানি রবির মাধ্যমে রাজশাহীতে পিডিবির (বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড) বিদ্যুৎ বিল দেওয়ার সেবা চালু করার অনুষ্ঠানে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে যোগ দেন পিডিপির চেয়ারম্যার ইঞ্জিনিয়ার আবদুহু রুহুল্লাহ। তিনি বলেন, ভারত থেকে ইন্টার কানেক্টটিভ সংযোগটি ট্রিপ করায় তা জাতীয় গ্রিডে প্রভাব ফেলেছে। ফলে সারাদেশের পাওয়ার স্টেশনগুলো বিকল হয়ে পড়েছে। তবে কাজ চলছে, খুব শিগগিরই বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হবে।
রাজশাহী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী এম মাসুম আল ফারুক বিকেলে বলেন, শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কাপ্তাই ও ঘোড়াশাল বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করা হয়েছে। রাজশাহীর বিসিক শিল্পনগরীর সপুরা সিল্ক মিলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ সদর আলী দ্য রিপোর্টকে বলেন, বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কারখানা শ্রমিকদের ছুটি দেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম: জাতীয় গ্রিড বিপর্যয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হওয়ায় নগরবাসী চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টের এলাকা দোহাজারী, চন্দনাইশ কিংবা আনোয়ারায়ও বিদ্যুৎ নেই। বিদ্যুৎ নেই তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র সরবরাহ এলাকা রাউজানেও।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রামের প্রধান প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম জানান, জাতীয় গ্রিড বসে গেছে। তাই সারাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। কখন নাগাদ ফের বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে তা বলা মুশকিল। তবে আমাদের চট্টগ্রামের কোনো সমস্যা নেই।