টানাপোড়েনে বিএনপি-জামায়াত সম্পর্ক
টানাপোড়েন শুরু হয়েছে বিএনপি-জামায়াতের দীর্ঘদিনের সম্পর্কে। জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের মৃত্যুতে শোক না জানানো, তার জানাজায় দলগত অংশ না নেওয়া এবং বর্তমান আমির মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ডের আদেশে নীরবতাকে কেন্দ্র করেই শুরু হয়েছে এ শীতলতা।
গত ২৯ অক্টোবর জামায়াতের আদর্শিক নেতা গোলাম আযমের মৃত্যুতে বিএনপি কোনো প্রতিক্রিয়া না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তার ছেলে আব্দুল্লাহিল আমান আযমী বিএনপিকে ‘অকৃতজ্ঞ’ বলে নিজ ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, আমি দ্বিধাহীনভাবে বলতে পারবো, জামায়াতের সমর্থন ছাড়া বিএনপি কথনোই ক্ষমতায় আসতে পারবেনা। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এই দলের প্রতিষ্ঠাতা আমির এবং আমৃত্যু আধ্যাত্মিক গুরুর মৃত্যুতে তাদের নীরবতা ছিল একেবারেই অপ্রত্যাশিত ও অগ্রহণযোগ্য! অধ্যাপক গোলাম আযমের মৃত্যুর পর পুরো বিশ্ব শোক করলেও বিএনপির নীরবতায় পুরো জাতি হতাশ। আমি জানি না কেন!
বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি লিখেছেন, জামায়াতের সমর্থন ছাড়া তারা ফের কখনো ক্ষমতায় যেতে পারবে না-এটা মাথায় রাখলে বিএনপি ভালো করবে। এটা আমার প্রকাশ্য চ্যালেঞ্জ। তারা কতো অকৃতজ্ঞ হতে পারে!!!
ওই স্ট্যাটাসে তিনি একটি সংবাদের লিংকও শেয়ার করেন, যেখানে বলা হয়েছে- তারেক রহমানের নির্দেশেই বিএনপি গোলাম আযমের জানাজা বর্জন করেছে।
এর আগে জোটের কর্মসূচিতে কিছুটা নিষ্ক্রিয়তা এবং আপিল বিভাগে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায়সহ কয়েকটি ঘটনায় সরকারের সঙ্গে জামায়াতের গোপন সমঝোতা হয়েছে বলে সন্দেহ ছিল বিএনপির ভেতরে।
দৈনিক প্রথম আলো তাদের এক প্রতিবেদনে জানায়, ১৯৯৯ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিএনপি ও জামায়াতের নেতৃত্বে চারদলীয় জোট গঠিত হয়। শুরু থেকেই জামায়াতকে নিয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের একটি অংশের মধ্যে অস্বস্তি আছে। প্রায়ই দল দুটির মধ্যে সম্পর্কের অবনতি, এমনকি কখনো কখনো জোটে ভাঙনের মতো খবরও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে গত ২৩ অক্টোবর রাতে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধী গোলাম আযমের মৃত্যুর পর দুই দিন পর্যন্ত বিএনপির কেউ তাঁর মরদেহ দেখতে না যাওয়ায় এবং জানাজায় অংশ না নেওয়ায় জামায়াতের কেন্দ্রীয় ও মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীরা বেশ ক্ষুব্ধ ও মনঃক্ষুণ্ন হন। দলটির নেতারা মনে করছেন, হয়তো বিএনপির উচ্চপর্যায়ের কারও নির্দেশনায় দলের নেতা-কর্মীরা একযোগে জানাজায় অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকেন।
যদিও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল শুক্রবার সংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, তাঁরা আবদুল্লাহিল আমান আযমীর বক্তব্যকে আমলে নিচ্ছেন না। কারণ, তিনি জামায়াতের প্রতিনিধিত্ব করেন না।
বিএনপির দলীয় সূত্রের বরাত দিয়ে প্রথম আলো জানায়, মুখে প্রকাশ না করলেও জামায়াতের সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে বিএনপি একটি কৌশলগত নীতি বা অবস্থান নিয়েছে। তা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বা উচ্চ আদালতে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে সাজাপ্রাপ্তদের বিষয়ে সরাসরি না জড়ানো। এ জন্য ‘চুপ’ থাকার কৌশল নেওয়া হয়েছে।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ২০-দলীয় জোট যে লক্ষ্যে গঠিত হয়েছে, সে লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয়নি। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার রক্ষা এবং নির্দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচনের দাবিতে আমরা যে আন্দোলন শুরু করেছি, তা এখনো লক্ষ্যে পৌঁছেনি। এ অবস্থায় জোটের ভেতরে অনৈক্য কিংবা ভুল-বোঝাবুঝির কোনো অবকাশ নেই।
সূত্র: প্রথম আলো