কামারুজ্জামানের ফাঁসি বহালের অপেক্ষায় শেরপুরের শহীদদের স্বজনরা
যুদ্ধাপরাধের মামলায় কামারুজ্জামানের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাসির রায় বহালের আদেশের অপেক্ষায় রয়েছেন শেরপুরের মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, মুক্তিযোদ্ধা, সোহাগপুর বিধবা পল্লীর সদস্য ও শহীদদের স্বজনরাসহ প্রগতিশীল শান্তিকামী সচেতন মহল। তাদের বহু কাঙ্খিত প্রত্যাশার প্রতিফলনের এখন শেষ অপেক্ষা। তাদের মতে, কেবল প্রত্যাশার পুরোপুরি প্রতিফলনের মধ্য দিয়েই শহীদদের আত্মার শান্তি নিশ্চিতকরণ এবং শেরপুরবাসীসহ জাতিকে কলংকমুক্ত করা সম্ভব।
এ বিষয়ে শেরপুর জেলা সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সভাপতি মুক্তিযুদ্ধের যুব সংগঠক মোঃ আমজাদ আলী এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, মোস্তফাসহ সোহাগপুরের গণহত্যায় শহীদদের স্বজনরা দীর্ঘ ৪৩ বছর শেরপুরের ‘কুলাঙ্গার সন্তান’ হিসেবে চিহ্নিত ঘাতক কামারুজ্জামানের শাস্তি দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন। এখন তার সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির আদেশ বহাল এবং তা দ্রুত কার্যকর হলে শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে। সেই সাথে তাদের স্বজনদের প্রতীক্ষার অবসানসহ জাতি কলংকমুক্ত হবে। একই কথা জানান শেরপুর পৌরসভার মেয়র হুমায়ুন কবীর রুমান, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মুহসীন আলী মাষ্টার, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট একেএম মোছাদ্দেক ফেরদৌসী, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সংগঠনের সভাপতি, চেম্বার সভাপতি গোলাম মোঃ কিবরিয়া লিটন, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ মুহাম্মদ আখতারুজ্জামান, জেলা আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক আলহাজ্ব আব্দুল ওয়াদুদ অদু, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডার এডভোকেট মোখলেসুর রহমান আকন্দ ও সোহাগপুর শহীদ পরিবার কল্যাণ সমিতির সভাপতি মোঃ জালাল উদ্দিন। পৃথক প্রতিক্রিয়ায় বয়সের ভারে ন্যুজ হওয়া বিধবা পল্লীর বিধবা জড়িতন বেওয়া ও দিলমনি রাকসাম ৭১’র সেই নির্যাতন ও হত্যাকান্ডের বিবরণ দিতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে বলেন, ৪৩ বছর ধরে কাঁদতে কাঁদতে তাদের চোখের পানি শুকিয়ে গেছে। পাক বাহিনী ও আলবদর- রাজাকাদের সোহাগপুরে নৃশংসতা ও তাদের স্বামী সন্তানদের হত্যার নায়ক কামারুজ্জামানের ফাঁসির আদেশ বহাল হোকÑএখন এটাই তাদের প্রাণের দাবি এবং তা কার্যকর দেখার জন্যই তাদের বেঁচে থাকা। একই কথা জানান হাজেরা বেওয়া ও হাসিনা বেওয়াসহ বিধবা পল্লীর অন্য বিধবারা।
উল্লেখ্য, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি ও আলবদর কমান্ডার হওয়ার সুবাদে কামারুজ্জামান নিজ জেলা শেরপুরসহ বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটসহ নানা মানবতাবিরোধী অপরাধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নেতৃত্ব দেন। ওই সময় শেরপুর ও ময়মনসিংহের ১৭জন ছাত্র-যুবক এবং সীমান্তবর্তী পল্লী সোহাগপুর গ্রামে ১২০জন কৃষককে নির্মমভাবে হত্য্ াকরা হয়। এছাড়া ওইসব কৃষকদের ঘরের নারীদের উপর চালানো হয় পৈশাচিক নির্যাতন। এরপর থেকে গ্রামটি পরিচিতি পায় বিধবাপল্লী হিসেবে।