নারীর সঙ্গে বিবস্ত্র করে ছবি তুলে মুক্তিপণ দাবি, অতপর আটক চার পুলিশ
রাজধানীতে অপহরণ করে নারীর সঙ্গে বিবস্ত্র ছবি তুলে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে ধরা খেয়েছে চার পুলিশ সদস্য ও এক নারী। প্রথমে নারীকে দিয়ে ঐ ব্যক্তিকে ডেকে আনা হয়। এরপর অপহরণ করে নারীর সঙ্গে বিবস্ত্র ছবি তুলে মুক্তিপণ দাবি করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, রাজধানীর ভাটারা থানার এএসআই মীর সিরাজুল ইসলাম, এএসআই কায়সার আহমেদ, কনস্টেবল আব্দুর রহমান ও গাড়ি চালক আসাদুজ্জামান এবং বর্ষা। এ ঘটনায় অপহৃদ ব্যক্তিকে র্যাব উদ্ধার করেছে।
শুক্রবার রাতে রাজধানীর পূর্ব ভাটারার সাঈদনগরে লিটন মিয়ার বাড়ি থেকে অপহূত শাহজাহান সামসুকে (৪৫) র্যাব উদ্ধার করে। এ ব্যাপারে অপহৃতের ভাগ্নে আবু জাফর বাদী হয়ে ভাটারা থানায় চার পুলিশ সদস্য ও এক নারীকে আসামি করে অপহরণের মামলা করেছেন।
ভাটারা থানার ওসি সারোয়ার আলম জানান, র্যাব চার পুলিশ সদস্য ও একজন নারীকে গ্রেফতার করে থানায় দিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে একটি অপহরণের মামলা হয়েছে।
অপহৃতের ভাগ্নে আবু জাফর জানান, তার মামা মহাখালীতে ফিলিপস বাংলাদেশ ফ্যাক্টরিতে টেকনিশিয়ান হিসাবে কর্মরত। খিলক্ষেতের খাঁ পাড়ার বাড়িতে তিনি সপরিবারে ভাড়া থাকেন। শুক্রবার রাত সোয়া ৮টার দিকে একটি মোবাইল থেকে তার মামা ফোন করেন। তিনি তাকে একটি মোবাইল ফোন নম্বর দিয়ে জানান যে, দ্রুত ঐ নম্বরে এক লাখ টাকা বিকাশ করতে হবে। তা না হলে তাকে মেরে ফেলা হবে।
ঘটনার পর আবু জাফর খিলক্ষেত থানায় একটি জিডি করেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি র্যাব-১ এর কাছে অভিযোগ করেন। রাত ১২টার দিকে আবু জাফর তার ভাই-বোনদের সঙ্গে নিয়ে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে র্যাব-১ কার্যালয়ে যান। র্যাবের একটি টিম তাদের নিয়ে অভিযানে নামে। রাত সোয়া ১টার দিকে অপহরণকারীরা জানান যে কুড়িল বিশ্বরোডের প্রগতি সরণির উত্তর মাথায় একটি সাদা রঙের মাইক্রোবাস দাঁড়ানো আছে। মাইক্রোবাসের কাছে এসে মুক্তিপণের টাকা দিতে হবে। এসময় র্যাব সদস্যরা ছদ্মবেশে মাইক্রোবাসটি ঘিরে ফেলেন। মাইক্রোবাসের ভিতর থেকে শাহজাহান সামসুকে উদ্ধার করার পর সেখান থেকে চার পুলিশ সদস্য ও এক নারীকে র্যাব গ্রেফতার করে।
উদ্ধার হওয়া শাহজাহান সামসু জানান, শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে বর্ষা নামের ঐ নারী তাকে ফোন দিয়ে ভাটারার লিটন মিয়ার বাড়ির চারতলায় ডেকে নেন। বর্ষার সাথে এর আগেও মোবাইল ফোনে বেশ কয়েকবার কথা হয়েছিল। ঐসব কথোপকথনের সূত্র ধরে তিনি বর্ষার সঙ্গে পরিচিত হতে গিয়েছিলেন। সেখানে বর্ষা তাকে আটক করে মোবাইল ফোনে তার বিবস্ত্র ছবি তুলে রাখেন। এরপর বর্ষা পুলিশ সদস্যদের ঐ বাসায় ডেকে আনেন।
পুলিশের এএসআই মীর সিরাজুল ইসলাম তার কাছ থেকে ২ লাখ টাকা চান। এ টাকা না দিলে তাকে ছিনতাইকারী হিসাবে গ্রেফতার করে থানায় চালান দেয়ার হুমকি দেন। এক পর্যায়ে তাকে টেনে হিঁচড়ে ঐ বাসা থেকে বের করেন। এসময় আশপাশের বাড়ির লোকজন বিষয়টি জানার চেষ্টা করলে, পুলিশ তাদের বলে যে, তিনি নাকি বর্ষা নামের ঐ মেয়েকে ধর্ষণ করার চেষ্টা করেছেন। পরে তাকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে কুড়িল বিশ্বরোডের প্রগতি সরণীতে যায়।
তিনি আরো অভিযোগ করেন, বর্ষা নামে ঐ মেয়ের সাথে পুলিশ সদস্যদের গভীর সম্পর্ক ছিল। এর আগেও বর্ষা এইভাবে মোবাইল ফোনে বিভিন্ন মানুষকে ডেকে ফাঁদে ফেলে পুলিশ সদস্যদের মাধ্যমে মুক্তিপণ আদায় করেছিলেন।