প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ অতঃপর পাচারের চেষ্টা
মোবাইলফোনে ফ্রেক্সিলোডের মাধ্যমে পরিচয়। এরপর কথা। সপ্তাহ না পেরুতেই বিয়ের প্রস্তাব। এরপর বিয়ের কথা বলে খুলনায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে যশোরের বেনাপোল দিয়ে ওপারে পাচারের চেষ্টা। কিন্তু তার আগেই র্যাবের হাতে ধরা পড়ে নারী পাচারকারীরা।
সীমা ও কুলসুমকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে এভাবেই পাচার করতে চেয়েছিল পাচারকারী চক্রের মূল হোতা জোব্বার হোসেন ওরফে মারুফ এবং সাকিব। সীমাকে মারুফ নিজেকে আর্মি অফিসার এবং কুলসুমকে সাকিব পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলে পরিচয় দিয়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলেন।
পাচারের আগে দুই গার্মেন্টস কর্মীর একজন কুলসুমকে কৌশলে লঞ্চের কেবিনে ধর্ষণ করা হয়। আর অপর কর্মী সীমাকে কেবিন না পাওয়ায় লঞ্চের ছাদে স্টাফদের কক্ষে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়।
মঙ্গলবার বিকেলে র্যাব-২-এর মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিও লে. কর্নেল কে এম আজাদ গ্রেফতারসম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। সংবাদ সম্মেলন শেষে উদ্ধারকৃত দুই নারী সীমা ও কুলসুমকে হাজির করা হয়। তারা দুজনই গার্মেন্টসকর্মী।
এই দুই নারীর ভাষ্য অনুযায়ী, ১৫ দিন আগে সীমার মোবাইল ফোনে ভুল করে ৫০ টাকার ফ্লেক্সি আসে। এর কিছুক্ষণ পর ওই নম্বর থেকে সীমার মোবাইলে কল করে মারুফ নামে এক ব্যক্তি। যিনি নিজেকে সেনাবাহিনীর একজন ক্যাপ্টেন হিসেবে পরিচয় দেন। সেই সূত্র ধরে কথা চলতে থাকে। প্রথমে ভাই-বোনা হিসেবে তাদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে যা প্রেমে গড়ায়।
অপরদিকে রং নম্বরে কল করার সুবাদে কুলসুমের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে পাচারকারী আরেক সদস্য সাকিব। যিনি নিজেকে পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দেন। সীমা ও কুলসুম একই রুমে বাস করার পরও জানেন না যে, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনকারী ওই দুজন একে অপরের পূর্ব পরিচিত।
সীমাকে একদিন সাভার স্মৃতিসৌধে দেখা করতে বলে মারুফ। দেখা করার সময় মারুফ সীমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। অপরদিকে কুলসুমও সাকিবের কথায় একই এলাকায় দেখা করতে যায়। দেখা শেষে সাকিব কুলসুমকে যশোর বেনাপোলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করার প্রস্তাব দেয়। সাভারেই প্রথমে সবাই একই সঙ্গে মিলিত হয়। নতুন করে সবাই সবার সঙ্গে পরিচিত হয়। এসময় তাদের কাছে আইডি কার্ড দেখতে চায় সীমা ও কুলসুম। তারা ভূয়া আইডি কার্ড দেখায়। স্মৃতিসৌধ এলাকা থেকে সীমা ও কুলসুম চলে যেতে চাইলেও তারা জোর করে জুস খাওয়ায়। এরপরই তাদের মাথা ঘোরা শুরু হয় এবং অজ্ঞান হয়ে যায়।
সীমা ও কুলসুম জানায়, সদরঘাট লঞ্চঘাটে গিয়ে তাদের জ্ঞান ফেরে। তাও ঠিকভাবে মাথা কাজ করছিল না। সাকিব ও কুলসুম কেবিন ভাড়া করে। সেখানেই তাকে রাতভর ধর্ষণ করে সাকিব। আর সীমা ও মারুফ কেবিন না পাওয়ায় তারা লঞ্চের ছাদে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর স্টাফদের স্বামী-স্ত্রীর পরিচয় দিয়ে এক হাজার টাকায় স্টাফদের থাকার কেবিন ভাড়া করে। সেখানে মারুফ সীমাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় বলে সীমা জানায়।
ধর্ষণের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে মারুফ সীমাকে আড়াল করে ঢাকায় ফেরত আসে। এরপর সীমা কুলসুম ও সাকিবকে সব খুলে বলে। সাকিবও মারুফকে ভণ্ড আখ্যায়িত করে নিজেকে ভালো সাজায় তাদের কাছে। লঞ্চটি খুলনার তুশখালি এলাকায় থামলে সেখানে তারা নেমে যায়। সেখান থেকে বাস যোগে যশোর বেনাপোলে যায়। সেখানেই র্যাব তাদের গ্রেফতার করে। উদ্ধার হয় সীমা ও কুলসুম।
কুলসুম বলেন, কেউ যেন মোবাইল ফোনের এমন কোনো প্রতারকের ফাঁদে পা না বাড়ায়। কাউকে যেন বিশ্বাস না করেন।
সীমা ও কুলসুম বলেন, পাচারকারিদের যেন দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি হয়। যাতে আর কোনো নারীকে এভাবে চক্রান্তের শিকার হতে না হয়।
র্যাব-২ এর অধিনায়ক(সিও) কেএম আজাদ জানান, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ভারতে পাচার করার উদ্দেশ্যে সীমা ও কুলসুমকে যশোরে নিয়ে যান পাচারকারীরা।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পাচারকারি চক্রের সদস্য ডালিম মোল্যা (২৭), পল্টু সরদার (৪২) ও সাকিব (৩০)কে গ্রেফতার করা হয়।
তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সাভার থেকে মারুফকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত চারজন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে একথা স্বীকার করেছেন যে, দুই লাখ টাকার চুক্তিতে সীমা ও কুলসুমকে ভারতে পাচার করার কথা ছিল।