জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা: প্রথম দিনে অনুপস্থিত ৪৬ হাজার পরীক্ষার্থী
হরতালের কারণে পাঁচ দিন পেছানোর পর অবশেষে ছুটির দিনেই শুরু হলো জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা।
জেএসসির বাংলা প্রথম পত্র এবং জেডিসির কোরআন মজিদ ও তাজবিদ বিষয়ের পরীক্ষার মধ্য দিয়ে আজ শুক্রবার সকাল নয়টায় সারা দেশে আড়াই হাজার কেন্দ্রে একযোগে এই পরীক্ষা শুরু হয়। তবে প্রথম দিনেই ৪৬ হাজার ৪০ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল।
পরীক্ষা শেষে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তশিক্ষা বোর্ডের সমন্বয়ক দিলারা হাফিজ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, এই পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১৯ লাখ ৯৯ হাজার ২৬১ জন। আট শিক্ষা বোর্ডে ১ হাজার ৮৯৫টি এবং মাদ্রাসার ৭২২টি কেন্দ্র মিলিয়ে দুই হাজার ৬১৭টি কেন্দ্রে আজ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম দিনে ১৯ লাখ ৫৩ হাজার ২২১ জন পরীক্ষা দিয়েছে। অনুপস্থিত ছিল ৪৬ হাজার ৪০ জন।
বিভিন্ন বোর্ডে অনুপস্থিত
পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ঢাকা বোর্ডে ১২ হাজার ৭৩৮, রাজশাহী বোর্ডে ৩ হাজার ২৯০, কুমিল্লা বোর্ডে ৩ হাজার ৫৪২, যশোর বোর্ডে ৩ হাজার ৪৯৭, চট্টগ্রাম বোর্ডে ২ হাজার ৯৫, সিলেট বোর্ডে ১ হাজার ৮৩২, বরিশাল বোর্ডে ২ হাজার ২০৫ ও দিনাজপুরে ২ হাজার ৫৯৮ জন অনুপস্থিত ছিল। এ ছাড়া আজ পাঁচজন পরীক্ষার্থীকে নকলের কারণে বহিষ্কার করা হয়েছে।
ছুটির দিনে যানজট
ছুটির দিন হওয়া সত্ত্বেও পরীক্ষার কারণে আজ রাজধানীতে গাড়ির প্রচণ্ড চাপ ছিল। বিশেষ করে স্কুলগুলোর সামনে। যানজটের কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আসতে গিয়ে অনেককেই দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।
হরতালে পেছাল পরীক্ষা
২ নভেম্বর জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা শুরুর কথা ছিল। কিন্তু জামায়াতের ডাকা টানা হরতালের কারণে ২ ও ৩ নভেম্বরের পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তী সময় ৫ ও ৬ নভেম্বরও হরতাল ডাকে জামায়াত। ফলে এই দুদিনের পরীক্ষাও পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। শেষ পর্যন্ত আজ থেকেই পরীক্ষা শুরুর সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, এবার দেশের আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে ভিন্ন ভিন্ন প্রশ্নপত্রে জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
হরতালের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে
আজ সকালে মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ে গিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্র পরিদর্শন করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এবার সংকটের মধ্য দিয়ে পরীক্ষা শুরু হয়েছে। গত বছরও আমাদের এ সংকট মোকাবিলা করতে হয়েছে। এত কিছুর মধ্যেও শিক্ষার্থীরা আনন্দের সঙ্গে পরীক্ষা দিচ্ছে।’
হরতাল প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭১ সালে যারা দেশকে পরাধীন করতে চেয়েছিল, মানুষ হত্যা করেছিল, তারাই হরতালের নামে মানুষ হত্যা করছে। এদের হিংস্রতা থেকে শিক্ষার্থীদের বাঁচাতেই পরীক্ষা পেছানো হয়েছে।’
আইন করে হরতাল বন্ধ করা হবে কি না, সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আইন করে হরতাল বন্ধ করার দরকার নেই। আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াতের এ হরতাল বেআইনি এবং রাষ্ট্রবিরোধী। এর বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে।’
উদ্বিগ্ন অভিভাবকেরা
এর আগে মন্ত্রী কেন্দ্রে প্রবেশের সময় উপস্থিত অভিভাবকেরা হরতালের কারণে পরীক্ষা পেছানো এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্ক ও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এ সময় মন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান দিলারা হাফিজ, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফাহিমা খাতুন প্রমুখ।
জেএসসি শেষ হলে ২৩ নভেম্বর থেকে শুরু হবে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা। হরতালের কারণে এই পরীক্ষা নিয়েও অভিভাবকেরা উদ্বিগ্ন। রাজধানীর মোহাম্মদপুরে রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুলের সামনে বেশ কয়েকজন অভিভাবকের সঙ্গে কথা হয়। প্রত্যেকেই রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে অনুরোধ করলেন, পরীক্ষার এই সময়ে যেন হরতাল না দেওয়া হয়।
প্রশ্নপত্র ফাঁস না হওয়ায় ধন্যবাদ
এদিকে জেএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস না হওয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছে অভিভাবক ঐক্য ফোরাম। আজ সংগঠনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়। এ ছাড়া পরীক্ষা চলাকালে হরতাল কর্মসূচি না দেওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়।