সাবেক এমপির বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা সনদ জালিয়াতির অভিযোগ
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক এক সংসদ সদস্যসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধার সনদ জালিয়াতির অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। ভুয়া সনদ জমা দিয়ে প্রাপ্ত সুযোগ সুবিধা নেওয়ার কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী বরাবর অভিযোগ করা হয়েছে। ওই ১১ জনের মধ্যে দুজন ‘রাজাকার’ বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বর্তমান শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক এবং দুইবারের সাবেক সংসদ সদস্য মো. আব্দুছ ছাত্তারসহ আটজন মুক্তিযোদ্ধা সম্প্রতি ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত হয়েছেন। সাবেক সংসদ সদস্য ছাত্তারের নাম গত মুক্তিযোদ্ধা নির্বাচনের আগে গেজেটভুক্ত হয়। একই সময় আব্দুর রশিদ, রফিকুল ইসলাম, দেলোয়ার হোসেন এবং সাইফুল ইসলাম জায়গীরদারও গেজেটভুক্ত হন। উপজেলা পরিষদ থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পূরক ভোটার তালিকা থেকে তাঁদের নাম পাওয়া গেছে। তবে তাঁদের সবার মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
সাবেক সংসদ সদস্য সাত্তার জালিয়াতির মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন আবুল কাসেম নামের এক মুক্তিযোদ্ধা (মুক্তিবার্তা নং ২৪৫১)। সাবেক ওই সংসদ সদস্যের নাম মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেট থেকে বাতিলের জন্য গত ১৬ অক্টোবর মহাপরিচালক, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) বরাবর আবেদন করেছেন উপজেলার উচাখিলা ইউনিয়নের ওই মুক্তিযোদ্ধা। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, সাবেক সংসদ সদস্য ছাত্তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে জামুকায় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নাম অন্তর্ভুক্ত করিয়েছেন, যার আগে কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই করা হয়নি। তা ছাড়া বিভিন্ন সরকারের আমলে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করা হলেও তাঁর নাম কোনো তালিকায় নেই। এর পরও তিনি কিভাবে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন- এ বিষয়ে অধিকতর তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জামুকার মহাপরিচালক, মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ পাঠানো হয়েছে। সেই সঙ্গে ১৬ অক্টোবর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের ডেপুটি ও ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার তোফাজ্জল হোসেন ভূঞা সাবেক সংসদ সদস্য ছাত্তারসহ ১১ জন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী বরাবর অভিযোগ করেছেন। বাকি যে ১০ জনকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বলা হচ্ছে তাঁরা হলেন আব্দুর রশিদ (গেজেট নম্বর ৫২৮৩), রফিকুল ইসলাম (গেজেট নম্বর ৫২৮৪), দেলোয়ার হোসেন (গেজেট নম্বর ৫২৯০), আব্দুল জলিল (গেজেট নম্বর ৪৯৪৯), আলাল উদ্দিন (গেজেট নম্বর ৪৯৫৩), সোহরাব উদ্দিন (মুক্তিবার্তা নম্বর ০১১৫০২০১৮০), মর্তুজ আলী (মুক্তিবার্তা নম্বর ০১১৫০২০১৭৪), আনোয়ার হোসেন ভূঞা (গেজেট নম্বর ৪৯৪৩), প্রদীপ কুমার বণিক (গেজেট নম্বর ৫০৬৭) এবং আব্দুল বারিক (গেজেট নম্বর ৪৯৫৭)।
তাঁদের মধ্যে আব্দুল জলিল ও আনোয়ার হাসেন ভূঞা ‘রাজাকার’ বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার দেশের বাইরে থাকায় এ ব্যাপারে তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এদিকে অভিযোগের ব্যাপারে সাবেক সংসদ সদস্য ছাত্তারের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তাঁকে পাওয়া যায়নি।