বকশীগঞ্জে আনন্দ স্কুলের নামে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি
সরওয়ার জামান রতন, বকশীগঞ্জ থেকে: ভুয়া শিক্ষার্থীর নাম ও সাইনবোর্ড সর্বস্ব স্কুল দেখিয়ে বকশীগঞ্জে আনন্দ স্কুলের নামে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে ২৫ কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। ফলে প্রাথমিক স্তরে ঝরেপড়া শিশুদের শিক্ষার আলো পৌঁছানোর কার্যক্রম ভেস্তে গেছে। ঝরেপড়া শিশুরা অধরাই থাকছে। উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে বকশীগঞ্জ উপজেলায় প্রাথমিক স্তরে ঝরেপড়া শিশুদের শিক্ষার আলো পৌঁছাতে সরকার বিশেষ ব্যবস্থাপনায় রিচিং আউট অব চিলড্রেন (রস্ক) প্রকল্পের বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ৩০৭টি আনন্দ স্কুলের যাত্রা শুরু করে। অভিযোগে রয়েছে, বকশীগঞ্জে আনন্দ স্কুল প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে নামে-বেনামে সাইনবোর্ড সর্বস্ব প্রতিষ্ঠান দেয়া হয়। গত তিন বছরে কমতে কমতে তা এখন ১৪৫টিতে পৌঁছেছে। এ বছর আনন্দ স্কুলের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার জন্য কথিত ২ হাজার ৬০৯ জন শিক্ষার্থীর নামের তালিকা ডিআর ফরম শিক্ষা অফিসে জমা হয়েছে। ডিআর ফরমে তালিকায় ৮৫ ভাগ শিক্ষার্থীর নাম ঠিকানা ভুয়া বলে সূত্রে জানায়। সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, উপজেলার ১৪৫টি আনন্দ স্কুলের ৯৮ ভাগ সাইনবোর্ড সর্বস্ব অস্তিত্বহীন। এলাকায় সাইনবোর্ড সর্বস্ব স্কুল দেখা গেলেও শিক্ষার্থীর দেখা মেলেনি। স্কুলের অস্তিত্ব না থাকলেও নামসর্বস্ব সাইনবোর্ড ঝুলতে দেখা গেছে। আবার কোথাও স্কুল ঘরে রাখা হয়েছে খড়কুটো ও গরুর গাদা। বোঝার উপায় নেই, এখানে আনন্দ স্কুল চলছে। দুএকটি আনন্দ স্কুলে গুটিকয়েক শিক্ষার্থী থাকলেও বাকি সবকটি স্কুলের চিত্র খুবই ভয়াবহ। মূলত আনন্দ স্কুলের কার্যক্রম কাগজে-কলমে বাস্তবায়িত হচ্ছে। অভিযোগে জানা গেছে, আনন্দ স্কুলের শিক্ষার্থীদের পোশাক, শিক্ষা উপকরণ, পরীক্ষা ফি ও উপবৃত্তির টাকা দেয়ার নিয়ম থাকলেও শিক্ষার্থীরা তা পায় না। ব্যাংকের একটি সূত্রে জানায়, আনন্দ স্কুলের উপবৃত্তির টাকা স্কুল কেন্দ্রে না গিয়ে ব্যাংকে বসে নিজেরাই টিপসই দিয়ে সিন্ডিকেট করে ভাগবাটোয়ারা করে আত্মসাৎ করেছে। এমনকি তাদের বিরুদ্ধে শিক্ষিকার বেতনের টাকা থেকেও কেটে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। আনন্দ স্কুলের নামে বছরে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হলেও জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সংশ্লিষ্টদের কাছে কোনো তথ্য নেই। ফলে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা লুটপাট হলেও দেখার কেউ নেই। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিটি আনন্দ স্কুলের শিক্ষার্থীর মাঝে শিক্ষা উপকরণ ও পোশাক বিতরণের জন্য বছরে বরাদ্দ হয়েছে প্রায় দেড় কোটি টাকা। উপবৃত্তি বাবদ প্রায় ৪ কোটি টাকা, ঘর ভাড়া বাবদ প্রায় ৬০ লাখ টাকা এবং শিক্ষকদের বেতন বাবদ ৩ বছরে পেয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকা। ব্যাংক থেকে বেতন, শিক্ষা উপকরণ, পোশাক ও ঘর ভাড়ার টাকা উত্তোলন হলেও সংশ্লিষ্টদের কাছে পৌঁছেনি। এ বিষয়ে আনন্দ স্কুলের শিক্ষিকাদের সঙ্গে কথা বললে জানা গেছে, স্কুল পরিচালনা করতে তাদের অনিয়ম হয়েছে। তাই গত ৩ বছরে তাদের দুর্বলতাকে পুঁজি করে উপজেলা শিক্ষা কমিটি স্থানীয় কতিপয় আলীগ নেতা ও বকশীগঞ্জ সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসূত্রে একটি সিন্ডিকেট ব্যাংকের স্বাক্ষরযুক্ত ব্লাংক চেকের মাধ্যমে আনন্দ স্কুলের নামে বরাদ্দকৃত ২৫ কোটি টাকা ইচ্ছামতো লুটপাট করেছে। এভাবে বকশীগঞ্জ আনন্দ স্কুলের নামে বিশ্ব ব্যাংকের টাকা হরিলুট হচ্ছে। বকশীগঞ্জ সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক একেএম আযহারুল ইসলাম দুর্নীতির বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আনন্দ স্কুলের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা প্রতিটি ইউনিয়নে একটি কেন্দ্র স্থাপন করে শিক্ষা অফিস ও টিসির উপস্থিতিতে উপবৃত্তির টাকা বিতরণ করা হয়। এছাড়া বেতন-ভাতা শিক্ষিকার হাতে দেয়া হয়েছে। বকশীগঞ্জে এ প্রকল্পে দায়িত্বরত কো-অর্ডিনেটর ফরহানা আক্তার জানান, আনন্দ স্কুল ভালোভাবে চলছে।