ঝিনাইগাতী-নালিতাবাড়ী সীমান্ত গারো পাহাড় পল্লীতে এক অলৌকিক কবিরাজের সন্ধ্যান ॥ প্রতিদিন হাজার হাজার রোগী নারী-পুরুষের ঢল
মুহাম্মদ আবু হেলাল, ঝিনাইগাতী: শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী-নালিতাবাড়ীর সীমান্তবর্তী মধুটিলা ইকোপার্ক থেকে আধা কিলোমিটার উত্তর পশ্চিম পার্শ্বে সমশ্চুড়া গ্রামে একটি পাহাড়ী টিলায় বসবাস এক আদিবাসী পরিবারের। পরিবার প্রধানের নাম নিতাই মারাক। তিনি একজন অবসর প্রাপ্ত বিজিবি সদস্য। তার ছেলের নাম যাকুব সাংমা (৩০)।
তিনি খ্রীষ্ঠান ধর্মাবলম্বী গারো সম্প্রদায়ের লোক। তিন মাস আগেও তিনি ছিলেন সাধারণ একজন মানুষ। এখন তিনি অলৌকিক ক্ষমতার বলে মানুষের বিভিন্ন রোগীদের তেল পড়ায় আর হাতের স্পর্শে দূরারোগ্য ব্যধি সারিয়ে তুলে তিনি হয়েছেন একজন অসাধারণ কবিরাজ। এলাকায় তার তেল পড়া আর আঙ্গুলের স্পর্শে ও ঝাঁড়-ফুকের মাধ্যমে বিনা পয়সায় বহু দূরারোগ্য রোগী ভাল হয়েছেন বলে এলাকায় বহুল জনস্রোত রয়েছে। তাই প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে সিএনজি, অটোরিক্সা, ভটভটি, লেগুনা গাড়ি সহ বিভিন্ন লোকাল যানবাহন দিয়ে হাজার হাজার রোগী, নারী-পুরুষ ভীড় জমাচ্ছে যাকুব সাংমার বাড়িতে। বিশেষ করে যেসব রোগ অল্প সময়ের মধ্যেই আরোগ্য হচ্ছে সেগুলো হচ্ছে অর্ধাঙ্গ, প্যারালাইসিস, বাক-প্রতিবন্ধী, অন্যান্য প্রতিবন্ধী সহ বিভিন্ন প্রকার রোগ। প্রতিদিন রোগীদের ভীড় সামলাতে এলাকায় স্বেচ্ছাশ্রমে অর্ধশত ভলেন্টিয়ার কাজ করে যাচ্ছে। সরেজমিনে যাকুব সাংমার বাড়িতে গিয়ে দেখা হয় তার সাথে। আলাপ হয় ২০ মিনিট। তার এই অলৌকিক চিকিৎসা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, গত তিন মাস আগে সে বাড়ি থেকে উত্তরে পাহাড়ী জঙ্গলে গিয়েছিলেন। নির্জন জঙ্গলে তার সাথে দেখা হয় যীশু খ্রীষ্ঠ রূপী এক দরবেশের। সেই দরবেশ তাকে মানুষের কল্যাণের জন্য বিভিন্ন রোগ বালাই চিকিৎসা করার অলৌকিক ক্ষমতা প্রদান করেন। এর পর থেকেই তিনি তেল পড়া, পানি পড়া, ঝাঁড় ফুক দিয়ে অনেক রোগীদের সুস্থ্য করেছেন। যাকুব সাংমা বলেন, রোগ সারিয়ে তোলার আমার কোন সাধ্য নেই। মানুষের আত্ম বিশ্বাসে রোগ মুক্তি পাওয়ার শক্তি যোগায়। মহান সৃষ্টিকর্তা ও দরবেশের উছিলায় তিনি কবিরাজি চিকিৎসা করে যাচ্ছেন। একটি ছোট্ট টিলার উপরে মাটির দেওয়ালে ঘরের ছাউনিতে তার বাস। তার আর্থিক স্বচ্ছলতা নাই। এসব চিকিৎসার বিনিময়ে তিনি কোন টাকা পয়সা নেন না। কেউ স্ব-ইচ্ছায় টাকা পয়সা দিতে চাইলেও তিনি গ্রহণ করেন না। শেরপুর জেলা সদর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরত্বে পাহাড়ী সীমান্তঘেষা সমশ্চুড়া গ্রাম। এখানে মুসলমান, গারো, কোচ, হিন্দু সহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের বাস। শেরপুর থেকে সিএনজি অথবা বাসযোগে আসা যায় ঝিনাইগাতী উপজেলা সদরে। সেখান থেকে সিএনজি, অটোরিক্সা, ভটভটি সহ বিভিন্ন লোকাল যানবাহন দিয়ে পৌঁছা যায় যাকুব সাংমার বাড়িতে। এই অলৌকিক কবিরাজকে ঘিরে বাড়ির পার্শ্ববর্তী এলাকায় বসানো হয়েছে বিভিন্ন খাবারের দোকান পাট। এসব দোকানপাট বসিয়ে এলাকার ব্যবসায়ীদের উন্নয়নের ছোয়া লেগেছে বলে গ্রামবাসীরা জানান। গ্রামবাসীরা জানান, প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে গড়ে ১২ থেকে ১৫ হাজার মানুষ কবিরাজ যাকুব সাংমার বাড়িতে ভীড় জমাচ্ছে। এ ব্যাপারে শেরপুরের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডাক্তার সেলিম মিয়া জানান, সীমান্তের যে গারো কবিরাজের তেল পড়ায় রোগবালাই ভালো হওয়ার যে খবর ছড়িয়েছে তা বাস্তবতার সাথে কোন সত্যতা নেই। কারণ মেডিকেল সাইন্স কখনই ঝাড়ফুঁকে বিশ্বাস করে না।