আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় হুইপ আতিক : শান্ত শেরপুরকে অশান্ত করার সুযোগ নেই
মহান জাতীয় সংসদের হুইপ, আতিউর রহমান আতিক এমপি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের বর্ধমানের ঘটনা এবং তার ধারাবাহিকতায় এক নারী সন্ত্রাসী গ্রেফতারের ঘটনায় সমগ্র জাতিই আজ উদ্বিগ্ন। ওই অবস্থায় যুদ্ধাপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায়ে শেরপুরবাসী খুব একটা উদ্বিগ্ন নয়। কারণ সবাই তার সাজার পক্ষে। নীরব থেকে বিএনপিও অনেকটা তার সাজাকেই সমর্থন করছে। তিনি ১০ নভেম্বর সোমবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষ রজনীগন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওই কথা বলেন। তিনি জেলার সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, যুদ্ধাপরাধের মামলায় কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকরের মুহূর্তে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি বা নাশকতারোধে শেরপুরে আইন-শৃঙ্খলার সাথে সম্পৃক্ত সকল বিভাগকে শতভাগ সতর্কাবস্থায় থাকতে হবে। এজন্য জনপ্রতিনিধিসহ সকল দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান ও সচেতন নাগরিকসহ ব্যাপক জনসচেতনতার উপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
‘রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে প্রশাসনের টেনশনও বাড়ে, ইদানিং শেরপুরেও তেমনটি লক্ষ্য করা যাচ্ছে’ উল্লেখ করে পুলিশ সুপার মোঃ মেহেদুল করিমের দৃষ্টি আকর্ষণের প্রেক্ষিতে হুইপ আতিক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে এনেই শেরপুরে আওয়ামী লীগের কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে। জেলা আওয়ামী লীগের সভায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতেই শ্রীবরদী ও ঝিনাইগাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে আহবায়ক কমিটি গঠিত হয়েছে। কমিটিগুলো সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য হলেও কিছু হাইব্রিড নেতা লাফালাফি করছে। তারা মূলতঃ দলে অনুপ্রবেশকারী ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী। তাদের ওইসব আচরণে দলের কিছু আসে যায় না। তবে তারা ওই কমিটি গঠনকে অগণতান্ত্রিক মনে করলে আমার বিরুদ্ধে কেন্দ্রে অভিযোগ করে দেখতে পারেন। নকলা ও নালিতাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি ভেঙ্গে আহবায়ক কমিটি গঠন কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীর পরামর্শে করা হয়েছে এবং সামনের দিকে অগ্রসর হতে হচ্ছে তার পরামর্শেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি সকল কর্মকান্ড পিসফুলি চালিয়ে যাচ্ছি। কাজেই বিষয়গুলো বাধাগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্র বরদাশত করা হবে না। সে বাধার নেপথ্যে যেই থাকুক না কেন? তিনি জেলা কারাগারে গ্যাস সংযোগ না থাকাসহ জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সদস্য হওয়ার পরও তার সাথে যোগাযোগ রক্ষা বা শেরপুরে গ্যাস সংক্রান্ত সমস্যা অবহিত না করায় স্থানীয় গ্যাস বিভাগকে ভৎর্সনা করেন এবং তলবের পরও পিডিবি ও পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তাগণ সভায় অনুপস্থিত থাকায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাকীর হোসেনের সভাপতিত্বে ওই সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার মোঃ মেহেদুল করিম, ২৭ বিজিবি ময়মনসিংহের উপ-অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল আমজাদ হোসেন, শেরপুর পৌরসভার মেয়র হুমায়ুন কবীর রুমান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট অঞ্জন চন্দ্র পাল, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ছানুয়ার হোসেন ছানু, শ্রীবরদী উপজেলা চেয়ারম্যান আশরাফ হোসেন খোকা, নকলা উপজেলা চেয়ারম্যান মাহবুব আলী চৌধুরী, নালিতাবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম মোখলেছুর রহমান রিপন, সিভিল সার্জন ডাঃ আনোয়ার হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক আলহাজ্ব আব্দুল ওয়াদুদ অদু, প্রেসক্লাব সভাপতি রফিকুল ইসলাম আধার, ঝিনাইগাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব এসএম আব্দুল্লাহেল ওয়ারেজ নাঈম, চেম্বারের সিনিয়র সহ-সভাপতি প্রকাশ দত্ত, কমিউনিটি পুলিশের সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মতি, মুক্তিযোদ্ধা গোলাম রব্বানী, মোয়াজ্জেম হোসেন সুরুজ, সাংবাদিক দেবাশীষ ভট্টাচার্য প্রমুখ।
সভাটি জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির নিয়মিত মাসিক সভা হলেও যুদ্ধাপরাধের মামলায় কামারুজ্জামানের চূড়ান্ত রায়ে ফাঁসি এবং তা সহসাই কার্যকর উপলক্ষ্যে সম্ভাব্য পরিস্থিতি ও প্রস্তুতির বিষয়টিই প্রাধান্য পায়। সভায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি ও নাশকতার আশঙ্কায় সোহাগপুর বিধবাপল্লীসহ শেরপুরে অবস্থানরত রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নজরদারী বাড়ানোসহ জনসচেতনতা বৃদ্ধির উপর গুরুত্বারোপ করা হয়। সভায় পূর্ববর্তী সভার কার্যবিবরণী পাঠ করেন সহকারী কমিশনার সামছুদ্দিন মুন্না। কার্যবিবরণীর তুলনামূলক চিত্রে দেখা যায়, সেপ্টেম্বর মাসে জেলার ৫টি উপজেলায় ডাকাতি-দস্যুতা, দাঙ্গা ব্যতীত দু’টি খুনসহ ১শ ১৮টি অপরাধ সংঘটিত হলেও অক্টোবর মাসে একটি খুনসহ বিভিন্ন অপরাধ সংঘটিত হয়েছে ১শ ১৯টি।