‘শহীদ মিনার কী কারও বাপের সম্পত্তি’
বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতা এবং গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, শহীদ মিনার কি কারো বাপের সম্পত্তি? আমরা কি এ জন্যই পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে শহীদ মিনার অর্জন করেছিলাম?
সোমবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘এদেশের জনগণ’-এর ব্যানারে সামাজিক সংগঠন ‘ব্রতী’ আয়োজিত এক মানববন্ধনে অংশ নিয়ে পুলিশকে উদ্দেশ্য করে তিনি এসব কথা বলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলে দুই ভাগ্নিসহ বেগ আর্ট ফাউন্ডেশনের পরিচালক ইমতিয়াজ আলম বেগের ওপর হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শহীদ মিনার চত্বরে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করে ‘ব্র্রতী’ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
হামলার প্রতিবাদে ব্রতী বিকেল চারটায় শহীদ মিনারে মানবন্ধন আহ্বান করে। তাদের পূর্বঘোষিত মানবন্ধন শুরুর আগেই মূল বেদীতে অবস্থান নেয় ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী’দের ব্যানারে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী। পরবর্তীতে শহীদ মিনারের সামনে বামদিকে অবস্থান নেয় ‘ব্রতী’ পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি পালনের জন্য।
এসময় সাধারণ শিক্ষার্থীরা ঘটনায় জড়িত চার ছাত্রকে বহিষ্কারের প্রতিবাদে স্লোগান দিতে থাকে। তারা ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বহিরাগতদের হাত থেকে বাঁচাও’ ও ‘অন্যায় সহ্য করা হবে না’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকে।
একই সময় ব্রতীর মানববন্ধনেও উপস্থিত বক্তারা বক্তব্য দিতে থাকে। চলে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য। এক পর্যায়ে দুই পক্ষই এক সঙ্গে জাতীয় সংগীত গাওয়া শুরু করে। ফলে দুই মানববন্ধনের মাইক্রোফোনের আওয়াজে হট্টগোল সৃষ্টি হয়।
এসময় ক্ষুব্ধ হয়ে ড. কামাল উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘ওরা কারা। তাদের নাম-পরিচয় দিন। শহীদ মিনার কি কারো বাপের সম্পত্তি। অনুমতি না থাকলে তারা কীভাবে আসলো। আমরা কি এ জন্যই সংগ্রাম করে শহীদ মিনার অর্জন করেছি।
তিনি বলেন, আজ যদি বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকতেন তাদের (শিক্ষার্থীদের) এখানে আধা মিনিটও সহ্য করতেন না। আমাকে কিছু মেয়ে অভিযোগ করেছে। তাই বিচারের দাবিতে এখানে এসেছি। আমরা বিএনপি-জামায়াতের লোক নই। দুষ্কৃতকারীও নই।
ড. কামাল বলেন, আপনারা শাপলা (পুলিশের পোশাকের) পরা মানুষ। ভালো মানুষ। আপনারাতো (পুলিশ) সরকারের বাইরে কিছু করতে পারেন না। কাউকে এতো খুশি করার কী আছে? কাউকে তো চিরদিন ক্ষমতায় রাখা যাবে না।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে আশরাফ আলী বলেন, ঢাবি একটি পবিত্র অঙ্গন। এখানে বিজাতীয় সংস্কৃতির আদলে অশ্লীলতা কাম্য নয়। সাধারণ শিক্ষার্থীরাই সকল অশ্লীলতা দূর করে ক্যাম্পাসকে পবিত্র রাখবে।
পারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
এ বিষয়ে ঢাবির ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক এম আমজাদ আলী বলেন, ব্রতী অনুমতি নিলেও তারা ভিন্ন ব্যানারে একাধিক সংগঠন মানববন্ধনে উপস্থিত হয়। যে কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে মানববন্ধন করে।
এদিকে এই ঘটনায় জড়িত চারজনকেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃতরা হলেন- উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ফারুক হোসেন, পদার্থবিদ্যা বিভাগের মাসুম, পরিসংখ্যানের জিসান এবং গণিত বিভাগের জহিরুল ইসলাম। এরা সবাই প্রথমবর্ষের ছাত্র এবং শহীদুল্লাহ হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আমিনুল ইসলামের অনুসারী।
উল্লেখ্য, গত বুধবার বেগ আর্ট ফাউন্ডেশনের পরিচালক ইমতিয়াজ আলম বেগ তার দুই ভাগ্নিকে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল এলাকায় ঘুরতে যান। এ সময় শহীদুল্লাহ হলের ঐ চার ছাত্রলীগকর্মী ‘অশ্লীল কর্মকাণ্ড’র অভিযোগ এনে তাদেরকে মারধর করে।
এ ঘটনায় হলের হাউজ টিউটর অধ্যাপক জসীম উদ্দীনকে প্রধান করে ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়। কমিটিকে দ্রুত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।