তামিম-ইমরুলের রেকর্ড জুটিতে প্রথম দিন বাংলাদেশের
এমন সূচনা খুব কমই দেখেছে বাংলাদেশ। এমন সূচনা ঘটেছিল শুধু একবার। ২০১০ সালে লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৮৫ রানের ওপেনিং জুটি গড়ে রেকর্ড করেছিলেন তামিম-ইমরুল। সেই রেকর্ড নিজেরাই ভাঙলেন তারা! ১৮৫ রানের জুটি টপকে বুধবার চট্রগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে লেখা হলো বাংলাদেশের ২২৪ রানের ওপেনিং জুটির নতুন রেকর্ড। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টেস্টের প্রথম দিনটা একেবারেই নিজেদের করে নিয়েছে বাংলাদেশ। দিন শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ২ উইকেটে ৩০৩ রান। সেঞ্চুরি পেয়েছেন তামিম ইকবাল (১০৯) ও ইমরুল কায়েস (১৩০)।
দুজনই উইকেটে দারুণভাবে থিতু হয়েছেন। নিজ শহর চট্রগ্রামে সেঞ্চুরি পেয়ে দারুন খুশি তামিম। দিন শেষে প্রেস কনফারেন্সে তামিম বলেন, ‘ঘরের মাঠ হলেও এখানে (চট্রগ্রাম) আমার পারফরম্যান্স তেমন ভালো ছিল না। তাই খুব করে চাইতাম এখানে আমার একটা সেঞ্চুরি হোক।’
ইমরুল কায়েসের অনুভূতিটা অন্যরকম। ‘টেস্ট দলে ঢুকতে পারবো ভাবিনি। হঠাৎ করেই সুযোগ পেয়ে রান করেছি। ভালো লাগছে। আর এও জানি রান করেই যেতে হবে রান না পেলে দলে টেকা যাবেনা’- বলছিলেন ইমরুল কায়েস।
তামিম-ইমরুলের বিদায়ের পর উইকেট আগলে রেখেছেন মুমিনুল হক। তিনি অপরাজিত আছেন ৪৬ রানে। আর মাহমুদউল্লাহ ৪ রানে। কাল এরা দুজন আবার নতুন করে শুরু করবে। শেষ পর্যন্ত কোথায় দাঁড়াবে বাংলাদেশের স্কোর- এ প্রশ্ন তামিমকে করা হলে তিনি জানান, আগামিকাল সকালের প্রথম ঘন্টাটা গুরুত্বপূর্ন। কাল টি-ব্রেক পর্যন্ত ব্যাটিং করলে বোঝা যাবে আমাদের ইনিংসটা কোথায় যাচ্ছে-সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত। তবে যত বেশি রান করা যায় আমাদের জন্য ততই ভালো।’
চট্রগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হয় সকাল ৯.৩০ মিনিটে। ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে টস জিতে আগে ব্যাট নিতে ভুল করেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম।
এ স্টেডিয়ামে বরাবরই ভালো রান ওঠে। এ বছরের ফেব্রয়ারীতে এ স্টেডিয়ামে সর্বশেষ টেস্ট ম্যাচ খেলেছিল বাংলাদেশ। সেবার শক্তিশালী শ্রীলংকার বিপক্ষে টেস্ট ড্র করেছিল মুশফিকুর রহিমের দল। শ্রীলংকার বিপক্ষে সে ম্যাচে ৫ দিনে দু’দল মিলে সর্বমোট রান করেছিল ১৫৮৯।
শ্রীলংকা প্রথম ইনিংসে তোলে ৫৮৭ রান। জবাবে বাংলাদেশ দল ইমরুল কায়েস ও শামসুর রহমানের জোড়া শতকে প্রথম ইনিংসে তুলেছিল ৪২৬ রান। দ্বিতীয় ইনিংসেও স্বাচ্ছন্দে ব্যাট করে বাংলাদেশ ও শ্রীলংকা। সাঙ্গাকারার সেঞ্চুরিতে ৪ উইকেটে ৩০৫ রান করে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষনা করে সফরকারীরা। ৪৬৭ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রা দেয় বাংলাদেশকে। মুমিনুল হকের সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশ ৩ উইকেটে ২৭১ রান তুললে উভয় দলের অধিনায়কের সম্মতিক্রমে আম্পায়ার ম্যাচটি ড্র ঘোষনা করে। সে ম্যাচেই শ্রীলংকান গ্রেট ব্যাটসম্যান কুমার সাঙ্গাকারা হাঁকিয়েছিলেন ক্যারিয়ারসেরা ৩১৯ রান। এ মাঠে সর্বোচ্চ ব্যাক্তিগত ইনিংস সাঙ্গাকারারই দখলে।
জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ গড়েছিল ইংল্যান্ড। ২০১০ সালে ৬ উইকেটে ৫৯৯ রান করে ইনিংস ঘোষনা করেছিল তারা। ২০০৬ সালে এ মাঠেই ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার জ্যাসন গিলেস্পি। ২০০৬ সালে আন্তর্জাতিক ভেন্যু হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া এই স্টেডিয়ামে সবচেয়ে বেশি রান সংগ্রাহক বাংলাদেশের মুশফিকুর রহিম। এ মাঠে ৯টি টেস্ট ম্যাচ খেলে এক সেঞ্চুরি ও পাচটি অর্ধশতকে তার রান সংখ্যা ৭২৩।
এর পরেই আছেন কুমার সাঙ্গাকারা। তিন ম্যাচে তার সংগ্রহ ৫৯৮ রান।
এখন দেখার ৩-০ তে টেস্ট সিরিজ জয়ের বিরল চিত্রের চিত্রনাট্য মুশফিকরা রচনা করতে পারেন কিনা; বন্দর নগরীর এই স্টেডিয়ামে। খেলা চলছে মাঠের ৫ নম্বর উইকেটে। অতীত অভিজ্ঞতা আর পিচের বর্তমান রুপ ধারণা দিচ্ছে রানের মধ্য দিয়েই গড়াবে চট্রগ্রাম টেস্ট। পুরো পাঁচদিন জুড়েই চলবে সাকিব-মাসাকাদজাদের লড়াই!