মানবতাবিরোধী অপরাধ – ফরিদপুরের খোকনের রায় আজ
মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা পলাতক জাহিদ হোসেন খোকনের আজ বৃহস্পতিবার।
চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ রায় ঘোষণা করবেন। ট্রাইবুনালের অপর দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ বুধবার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন।
উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে গত ১৭ এপ্রিল মামলার রায় অপেক্ষমান রাখা হয়। এটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের ১২তম রায়।
জাহিদ হোসেন খোকনের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধর্মান্তরিতকরণসহ ১১টি অভিযোগ আনা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোখলেসুর রহমান বাদল সাংবাদিকদের বলেন, ‘জাহিদ হোসেনের বিরুদ্ধে আনা ১১টি অভিযোগের সব কয়টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। ট্রাইব্যুনালের ২০(২) ধারা অনুযায়ী তার সর্বোচ্চ শাস্তি আশা করছি।’
তবে, জাহিদ হোসেনের পক্ষে ট্রাইব্যুনাল নিয়োজিত আইনজীবী আব্দুস শুকুর খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘ট্রাইবুনালে দায়ের করা মামলার অভিযুক্ত ব্যক্তি আর আমার মক্কেলের নাম এক নয়। তাই আমার মক্কেলের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আশা করি বিজ্ঞ বিচারকরা তা আমলে নিয়ে আমার মক্কেলকে বেকসুর খালাস দিবেন।’
জাহিদ হোসেন খোকন নগরকান্দা পৌরসভার মেয়র ও থানা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালনকালে তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। অভিযোগ উঠার পর থেকেই পলাতক রয়েছেন তিনি।
২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর খোকনের বিরুদ্ধে সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে তার মামলায় সাক্ষী গ্রহণ শুরু হয়।
২০১৩ সালের ৯ অক্টোবর মানবতাবিরোধী অপরাধে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করা হয়। খোকনের বিরুদ্ধে ১৬ জন নারী ও শিশুসহ ৫০ জনকে হত্যা, তিনজনকে পুড়িয়ে হত্যা, ২ জনকে ধর্ষণ, ৯ জনকে ধর্মান্তরিত করা, ২টি মন্দিরসহ ১০টি গ্রামের বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ, সাতজন গ্রামবাসীকে সপরিবারে দেশান্তরে বাধ্য করা ও ২৫ জনকে নির্যাতনসহ সুনির্দিষ্ট ১১টি অভিযোগ আনা হয়।
পালাতক খোকনকে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে ২০১৩ সালের ৩০ জুলাই দুটি জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। পরে তাকে হাজির করতে ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে জাতীয় দৈনিক জনকণ্ঠ ও ডেইলি স্টারে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
কিন্তু তিনি হাজির না হওয়ায় ওই বছরের ১৪ আগস্ট তার অনুপস্থিতিতেই বিচার শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল। একইদিনে ১৪ আগস্ট খোকনের পক্ষে রাষ্ট্রীয় খরচে আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেন আব্দুস শুকুর খানকে।
২০১৩ সালের ২৩ জুন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করার পর ১৮ জুলাই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নিয়ে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল।
২০১২ সালের ১৬ এপ্রিল শুরু হয়ে ২০১৩ সালের ২৮ মে শেষ হয় তদন্ত কাজ। পরে ২৯ মে ১৩টি অভিযোগসহ তদন্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশনের কাছে দাখিল করেন তদন্ত সংস্থা।
গত বছরের ৯ অক্টোবর ১১টি মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত করে খোকনের বিচার শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল। বিচার শুরু থেকেই পলাতক রয়েছেন তিনি।