মধুটিলা ইকোপার্ক নানা সমস্যায় জর্জরিত
মো: মঞ্জুরুল আহসান, নালিতাবাড়ী(শেরপুর) প্রতিনিধি:
শেরপুরের নালিতাবাড়ী মধুটিলা ইকোর্পাক নানা সমস্যায় জর্জরিত। দেশের দুর-দুরাšত থেকে দর্শনার্থীরা প্রকৃতির নান্দনিক দৃশ্য দেখতে আসে। শীতের মৌসুমে মানুষের ভীড়ে মুখরিত হয়ে আসে পার্কটি। ফলে সরকারের রাজস্বতে যুক্ত হয় লক্ষ লক্ষ টাকা। কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর অযত্নে পার্কটির অপরূপ সৌন্দর্য এখন ধ্বংসের সন্মুখীন। সরেজমিনে গেলে দর্শনার্থীরা পার্কটির নানা সমস্যা সম্পর্কে এই প্রতিনিধিকে অবহিত করেন।
পার্কটির চারদিকের বাউন্ডারির কিছু অংশ দেয়াল থাকলেও বেশির ভাগ এলাকায় খোলা। ফলে পার্কের মূল ফটক ছাড়াও যে কোন দিক দিয়ে মানুষ সহ গরু ছাগল প্রবেশ করছে অনায়াসে।
ডিসপ্লে দেখে বুঝার উপায় নেই কোথায় কি আছে। ক্যানটিনের অবস্থা ভাল নয়। ১০টি পিকনিক স্পটের মধ্যে ২টি গোলঘর আর ৮টি দেয়াল বেষ্টিত ঘরের কোন টিতেই পানির ব্যবস্থা নেই, বসার ব্যবস্থা নেই। চমৎকার লেক থাকলেও খননের অভাবে পানি ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। লেকে ভ্রমনের জন্য রয়েছে ২টি নৌকা, তাও ফুটো হয়ে ও ভেঙ্গে অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। আর পেডেল বোট ৮টি ভাংগা অবস্থায় পড়ে আছে ডাঙায়।
শিশুদের মনোরঞ্জণের জন্য নামমাত্র রয়েছে শিশুপার্ক। যাতে শিশুদের খেলা করার সরঞ্জামগুলো ভেঙে অযত্নে পড়ে আছে। মনোমুগ্ধকার রেস্ট হাউজ থাকলেও মেরামতের অভাবে নিজের রূপ হারাচ্ছে। হাতি, বাঘ, ভালুক, ব্যঙ, মৎসকুমারী, সিংহ, কুমির, ক্যাঙারো সহ ভাস্কর্যগুলোর রং ওঠে বিশ্রি অবস্থা হয়েছে।
মিনি চিড়িয়াখানায় একসময় প্রায় এক ডজন হরিণ ছিল। পরিচর্যার অভাবে ও বয়স বৃদ্ধি হওয়ায় অনেক হরিণ মরে গিয়েছে। বর্তমানে ৪টি হরিণ কঠিন অবস্থায় জীবনযাপন করছে। দর্শনার্থীদের জন্য তৈরি বসার বেঞ্চগুলো ভেঙে গেছে। সিটলের ছাতাগুলো বিশ্রি হয়ে আছে।
পার্কের ভেতরের রাস্তাগুলো ঝোপঝারে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। ফলে সেই রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়া দু:সাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছিনতাইকারী সহ অপরাধীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে। সুউচ্চ টাওয়ার, স্টার ব্রিজ সহ অন্যান্য স্থাপনাগুলোর রং ওঠে গিয়েছে। রয়েছে বিদ্যুৎ সমস্যা।
সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে জনবল। মাত্র ৬ জন জনবল দিয়ে চলছে পার্কটি। যেখানে ২০/২২ জন মানুষ দরকার সেখানে ৬ জনবলে কতটুকু কাজ হবে তা সমাধান করা জরুরি।
১৯৯২ সালে নালিতাবাড়ী উপজেলার পোঁড়াগাও ইউনিয়নের সমশ্চুরায় পাহাড়ি উঁচুনিচু টিলাকে ঘিরে ৩৮০ একর ভূমিতে স্থাপিত হয় মধুটিলা ইকোপার্ক। (২০০৪-২০০৫) অর্থবছরে পার্কটি পূণাঙ্গ রূপ লাভ করে। বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের গারো পাহাড়ের নান্দনিক দৃশ্য ফুটে ওঠে একমাত্র এই পার্কটিতেই। ফলে প্রতিবছর হাজার হাজার দর্শনার্থী পার্কটিতে বেড়াতে আসে। সরকারের ফান্ডে প্রবেশ করতে থাকে লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব। বহু বেকার মানুষেরও কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা হয় পার্কে। বিশেষ করে ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত চলে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়।
রেঞ্জ কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান আকন্দ জানান, (২০১২-২০১৩) অর্থ বছরে পার্ক থেকে সরকারি রাজস্ব জমা হয় ৮ লাখ ৮৩ হাজার ২৭০ টাকা। (২০১৩-২০১৪) অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১৯ লাখ ৮০ হাজার ৯৩১ টাকা। ২০১৪ সালের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত রাজস্ব আদায় হয়েছে ১২ লাখ টাকা। বিভিন্ন স্থাপনা গুলো রং করে মেরামত করা, ঝোপঝার পরিস্কার করা খুব জরুরি এবং এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে যাওয়ার জন্য ঝুলন্ত ব্রিজ নির্মাণ করা প্রয়োজন বলে তিনি জানান। তবে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ না করলে পার্কটির রক্ষণাবেক্ষন করা কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। মিনি চিড়িয়াখানায় বাণর সহ অন্যান্য প্রাণি সংরক্ষণ, পার্ক এলাকায় বিদ্যুতায়ন এবং শুধুমাত্র পার্ক রক্ষানাবেক্ষনের জন্য আলাদা জনবল নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। বিভিন্ন সমস্যাগুলোর সমাধান না হলে এ অবস্থায় আসন্ন শীত মৌসুমে পার্ক চালানো কোনক্রমেই সম্ভব হবে না বলে তিনি ব্যক্ত করেন।
দর্শনার্থীরা জানান, পার্কের এই বিভিন্ন রকম সমস্যগুলো না হলে আস্তে আস্তে পার্কটির সৌর্ন্দয্য নষ্ট হয়ে যাবে। ফলে ভ্রমণ প্রিয় মানুষের আগমন কমবে এবং সরকার হারাবে বিপুল পরিমান রাজস্ব।
আসন্ন মৌসুমের জন্য পার্কটির প্রবেশ গেট ১৩ লাখ ৩৭ হাজার ৫শ’ টাকায় ইজার নিয়েছেন মেসার্স খন্দকার ট্রেডার্স। ইজারাদারদের প্রতিনিধি গেটের টিকিট মাস্টার মামুন মিয়া জানান, পার্কটির যে সমস্যাগুলো বর্তমান, তা সরকার নিরসন না করলে তাদের ব্যবসায় এবার দারুন লোকসান হবে। আসল টাকা ওঠবে কি-না তা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছে ইজারদার।