ধুকে ধুকে চলছে ওয়াটার বাস

রাজধানীর একমাত্র ওয়াটার বাস (যান্ত্রিক নৌ-যান) সার্ভিস চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। ওয়াটার বাসের মাধ্যমে জনগনকে সেবা দিতে গিয়ে সরকারকে প্রতি মাসে লোকসান গুণতে হচ্ছে ৬ লাখ ৫২ হাজার ৩৩৯ টাকা। জানা গেছে, অব্যাহত লোকসানের মধ্যেই আগামী রোববার থেকে প্রায় পৌনে ৬ কোটি টাকা ব্যয় বুড়িগঙ্গায় আরো ৬টি নতুন ওয়াটার বাস নামানো হচ্ছে।

২০১৩ সালের ৪ জুলাই বিআইডব্লিউটিসি (বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন) ঢাকঢোল পিটিয়ে নগরবাসীর চলাচল সহজ করতে সদরঘাট থেকে গাবতলী নৌ-রুটে ওয়াটার বাস সার্ভিস চালু করে। কিন্তু উদ্বোধনের বছর না ঘুরতেই সার্ভিসটির প্রতি মানুষ আগ্রত হারিয়ে ফেলে।

জানা যায়, চালু হওয়ার পর থেকে সার্ভিসটি এক দিনের জন্যও লাভের মুখ দেখতে পারেনি। এই অলাভজনক প্রকল্পটি শেষ পর্যন্ত গত ২০ ফেব্রুয়ারি প্রতি মাসে ৬০ হাজার টাকায় ভাড়া দেয়া হয় লাবিবা স্টিল হাউসের কাছে। তবে এক সপ্তাহও চালাতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। এরপর প্রায় এক মাস বন্ধ ছিল সার্ভিসটি। শেষ পর্যন্ত গত ২৬ মার্চ থেকে আবার সার্ভিসটি চালু করে বিআইডব্লিউটিসি।

বর্তমানে বুড়িগঙ্গায় পুরনো এবং নতুন মিলিয়ে ছয়টি ওয়াটার বাস চলাচল করছে। পুরনো দুটির প্রতিটিতে আসন সংখ্যা ৩৫। নতুন চারটির প্রতিটিতে ৮১টি করে আসন রয়েছে। আসন সংখ্যা কম থাকায় পুরনো দুটিকে চালু রাখা গেলেও যাত্রীর অভাবে নতুন চারটিকে সব সময় বসিয়ে রাখতে হয়। প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে ৪৫ মিনিট পরপর ওয়াটার বাসগুলো ল্যান্ডিং স্টেশন থেকে ছাড়ার কথা থাকলেও সময় মতো তা ছাড়া হয় না। যাত্রীদের ওঠানামার জন্য চারটি ল্যান্ডিং স্টেশন আছে। একটি ল্যান্ডিং স্টেশন থেকে অপর স্টেশন পর্যন্ত ভাড়া সর্বোচ্চ ৪০ থেকে সর্বনিম্ন ১০ টাকা।

বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান জানান, রাজধানীর যানজট দূর করার জন্য ওয়াটার বাস সার্ভিস চালু করা হয়। প্রথম পর্যায়ে যাত্রীদের ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। তবে হরতাল-অবরোধের কারণে যাত্রীর সংখ্যা মাঝে-মধ্যে কমে যায়। কিন্তু আমরা সার্ভিসটি চালু রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। এই রুটে আরো একাধিক ওয়াটার বাস নামানোর পরিকল্পনা চলছে।

বিআইডব্লিউটিসির উপ-মহাব্যবস্থাপক (যাত্রীবাহী সার্ভিস ইউনিট) নূরুল আলম আকন্দ জানান, সদরঘাট-গাবতলী রুটে ওয়াটার বাস প্রতিমাসে মোট ১৮০টি ট্রিপ দেয়। এতে যাত্রী পরিবহন হয় গড়ে ৮ হাজার ৯৮০ জন। যাত্রীদের কাছ থেকে মোট আয় হয় ৩ লাখ ৩০০ টাকা। সার্ভিস চালাতে তেল লাগে ৯ লাখ ৫২ হাজার ৬৩৯ টাকার। ফলে প্রতি মাসে লোকসান হয় ৬ লাখ ৫২ হাজার ৩৩৯ টাকা। তিনি আরো জানান, প্রতিদিন ছয় ট্রিপ করে চলছে বাসগুলো। যাত্রীদের আকৃষ্ট করতে বাসগুলো সময় মতো ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

তবে নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান এমপি ওয়াটার বাস সার্ভিস নিয়ে আশাবাদ প্রকাশ করে বলেন, তার মন্ত্রণালয় ও বিআইডব্লিউটিসির কতিপয় কর্মকর্তা ও কর্মচারীর স্বেচ্ছাচারিতার কারণে এই সার্ভিসটি জনপ্রিয়তা অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে। তবে যে কোন মূল্যে এই সার্ভিস জনপ্রিয় করে তুলবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এটি তার জন্য চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, যাত্রী সেবার মান বাড়াতে আগামী ১৬ নভেম্বর রবিবার এই নৌ-রুটে আরো ৬ টি ওয়াটার বাস নামানো হবে। সরকার ভর্তুকি দিয়েই সার্ভিসটি চালু রাখবে বলে তিনি জানান।

সূত্র: ইত্তেফাক

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend