আজ বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস
আজ বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। দেশে যে মুহূর্তে ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা ৯০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে, ঠিক সে মুহূর্তেই বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে দেশব্যাপী পালিত হচ্ছে দিবসটি।
এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে- ‘প্রাতঃরাশেই শুরু স্বাস্থ্যকর খাদ্যের’। দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী পৃথক পৃথক বানী দিয়েছেন।
নিজ বানীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ডায়াবেটিস সম্পর্কে গণসচেতনতা সৃষ্টির জন্য বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির পাশাপাশি গণমাধ্যমসহ অন্যান্য সমাজহিতৈষী সংস্থাকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, নানা আর্থসামাজিক কারণে বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিস দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এ রোগটি এখন বৃহৎদাকারে দেখা দিচ্ছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের মতে নগরায়ণের কারণে জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাসে ব্যাপক পরিবর্তন এবং কায়িক পরিশ্রমের অভাবে ডায়াবেটিসের প্রকোপ দিন দিন বাড়ছে।
ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সম্মিলিত উদ্যোগের প্রতি গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ফাস্টফুড ও কোমল পানীয়সহ এমন অনেক খাবার আছে যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হলেও এসব খাবার তরুণ প্রজন্মকে আকৃষ্ট করছে।
তিনি আরো বলেন, এ ব্যাপারে সকলকে সচেতন করতে হবে এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে হবে। পাশাপাশি সকলকে কায়িক পরিশ্রম করতে উৎসাহিত করতে হবে।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস-২০১৪ পালিত হচ্ছে জেনে তিনি অত্যন্ত খুশি হয়েছেন উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশের উদ্যোগের ফলেই দিবসটি ‘জাতিসংঘ দিবস’-এর মর্যাদা লাভ করেছে।
রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস-২০১৪ উপলক্ষে গৃহীত কর্মসূচির সাফল্য কামনা করেন।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধে সরকারের পাশাপাশি বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতিসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে নিজ বানীতে বলেছেন, তার সরকার ডায়াবেটিসসহ সব ধরনের রোগ প্রতিরোধে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে বিভিন্নমুখী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। গণমুখী স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন ও নতুন নতুন হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে। হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
তিনি বলেন, সারাদেশে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে। বিপুল সংখ্যক চিকিৎসক, নার্স ও প্যারামেডিকস্ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নারী ও শিশুস্বাস্থ্যের উন্নতি হয়েছে। মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বাস্থ্যখাতে সাফল্যের স্বীকৃতি হিসাবে বাংলাদেশ ‘জাতিসংঘ এমডিজি অ্যাওয়ার্ড’ ও ‘সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছে।
ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘস্থায়ী ও জটিল রোগ হলেও এটি প্রতিরোধযোগ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন,“ আর এজন্য দরকার স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়া, কায়িক পরিশ্রম বা নিয়মিত হাঁটাচলা ও ব্যায়াম করা। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখলে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন সম্ভব”।
রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী নিজ নিজ বানীতে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস-২০১৪ উপলক্ষে গৃহীত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।
এদিকে সাম্প্রতিক গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, সারা বিশ্বে বর্তমানে ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ৪০ কোটি। এ সংখ্যা ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আশির দশকে ডায়াবেটিসের প্রবণতা যেখানে ছিল মাত্র দুই শতাংশের মতো, সেখানে আজ তা ঢাকা শহরেই প্রায় ১০ শতাংশ ছুয়েছে। এবং প্রিডায়াবেটিসের (ডায়াবেটিস এর আগের ধাপ) হার আরো প্রায় ১০ শতাংশ।
সাম্প্রতিক অপর এক গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রামাঞ্চলেও ডায়াবেটিসের সামগ্রিক প্রবণতা প্রায় ৮ শতাংশ। এভাবে বাড়তে থাকলে শুধু ডায়াবেটিসের কারণেই দেশের অর্থনৈতিক ভারসাম্য মারাত্মক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবে।
ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ যার কারণে দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের কার্যক্ষমতা হ্রাস পেয়ে হার্ট অ্যাটাক, কিডনি ফেইলিউর, অন্ধ হয়ে যাওয়া, পায়ে পচন, এমনকি পা কেটে ফেলা পর্যন্ত লাগতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সময় মতো ইন্টারভেশন (খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাত্রার পরিবর্তন), নিয়মিত হাঁটার দ্বারা প্রায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ডায়াবেটিস প্রতিরোধ সম্ভব।
বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস উপলক্ষ্যে গৃহীত কর্মসূচী:
সকাল সাড়ে ৮টায় শোভাযাত্রা, শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে শুরু হয়ে ঢাবি’র টিএসসি মোড়ে এসে শেষ হবে। সকাল ৮ টা থেকে ১১টা পর্যন্ত জাতীয় জাদুঘর, প্রেসক্লাব, নিউমার্কেট লালবাগ, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, রবীন্দ্র সরোবরে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সকাল ১০ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। বাংলাদেশ ডায়াবেটিকস সমিতির আলোচনা সভা, সকাল সাড়ে ১০টায়, বারডেম মিলনায়তনে।
সুত্রঃ প্রিয়.কম