এইচ টি ইমামের ওপর ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী

কার্টুন: শিশিরগত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ও ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের প্রতিষ্ঠিত করা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বক্তব্যের কারণে সরকার ও দল বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী তাঁর রাজনৈতিক উপদেষ্টার প্রতি এই ক্ষোভ ও বিরক্তি প্রকাশ করেন। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও আলাউদ্দিন আহমেদ।
সূত্রগুলো জানায়, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এইচ টি ইমাম ওই দিন সম্পূর্ণ অকারণে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে বক্তব্য দিয়েছেন। সংসদীয় বোর্ডের দুজন সদস্যও এ সময় এইচ টি ইমামের বক্তব্যে সরকার ও দলের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন। বোর্ডের অন্য সদস্যরাও তাতে একমত পোষণ করেন বলে জানা গেছে। এ অবস্থায় এইচ টি ইমামের স্বপদে থাকা কঠিন হয়ে উঠতে পারে বলেও মনে করছেন কেউ কেউ।
গত বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) ছাত্রলীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এইচ টি ইমাম ৫ জানুয়ারির নির্বাচন সম্পর্কে বলেছেন, ‘নির্বাচনের সময় বাংলাদেশ পুলিশ ও প্রশাসনের যে ভূমিকা, নির্বাচনের সময় আমি তো প্রত্যেকটি উপজেলায় কথা বলেছি, সব জায়গায় আমাদের যারা রিক্রুটেড, তাদের সঙ্গে কথা বলে, তাদের দিয়ে মোবাইল কোর্ট করিয়ে আমরা নির্বাচন করেছি। তারা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে, বুক পেতে দিয়েছে।’ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তোমাদের লিখিত পরীক্ষায় ভালো করতে হবে। তার পরে আমরা দেখব।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সভায় সভাপতিত্ব করেন l ছবি: পিআইডির সৌজন্যেএ বক্তব্যের পর থেকেই আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা এবং মন্ত্রীরাও প্রথম আলোর কাছে অনানুষ্ঠানিকভাবে এইচ টি ইমামের বক্তব্য নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তাঁরা দলীয় এবং সরকারি পদ থেকে এইচ টি ইমামকে অপসারণ করা উচিত বলে মন্তব্য করেন। এ প্রসঙ্গে এই নেতারা সম্প্রতি নিউইয়র্কে দেওয়া আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্যের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, তিনিও সরকার এবং দলকে বিপদে ফেলেছিলেন। তাঁকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। সরকার ও দল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এইচ টি ইমামও একইভাবে দল ও সরকারকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন।
এ ছাড়া আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত গতকাল এক অনুষ্ঠানে এইচ টি ইমামের কড়া সমালোচনা করেন।
২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর সাবেক আমলা এইচ টি ইমাম প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রশাসন উপদেষ্টা হিসেবে সরকারের অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তিতে পরিণত হন। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। গত ১২ জানুয়ারি বর্তমান সরকার শপথ নেওয়ার পর তিনি মন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পান।
এইচ টি ইমাম বঙ্গবন্ধুর আমলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব ছিলেন। তবে তিনি ১৫ আগস্টের পর খোন্দকার মোশতাকের রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানও পরিচালনা করেন।
১৫ নভেম্বর থেকে মনোনয়ন ফরম বিতরণ: গতকাল সংসদীয় বোর্ডের বৈঠক হয়েছিল মূলত সিরাজগঞ্জ-৩ (রায়গঞ্জ-তাড়াশ) উপনির্বাচনে দলের প্রার্থী মনোনয়নের জন্য। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ১৫ থেকে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে দলীয় ফরম বিক্রি করা হবে। আওয়ামী লীগের ধানমন্ডির কার্যালয় থেকে ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে তা সংগ্রহ করা যাবে।
১৭ নভেম্বর সংসদীয় বোর্ড আবার বৈঠকে বসে মনোনয়নপত্র সংগ্রহকারী প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেবে। ওই দিনই প্রার্থী ঘোষণা করা হবে। আগামী ২৩ ডিসেম্বর এই আসনে উপনির্বাচন হওয়ার তারিখ নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ২০ নভেম্বর এবং প্রত্যাহার ৩০ নভেম্বর।
গত ৬ অক্টোবর আওয়ামী লীগের সাংসদ ইসহাক হোসেন তালুকদারের মৃত্যুতে আসনটি শূন্য হয়।

 

 

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend