সম্পর্ক ‘সঠিক পথেই’
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক আরো এগিয়ে নিতে দুই দেশের পারস্পরিক আস্থা ও ঐকমত্যের ওপর জোর দিয়েছেন উভয় দেশের সাবেক কূটনীতিকরা।
শুক্রবার ঢাকায় আয়োজিত বাংলাদেশ-ভারত হাই কমিশনার সম্মেলনের প্রথম দিন ‘লেসন ফর্ম দি পাস্ট’ অধিবেশনে দুই দেশের সাবেক হাই কমিশনাররা নিজেদের অভিজ্ঞতার আলোকে বিভিন্ন বিষয়ে খোলামেলা আলোচনায় অংশ নেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী সিনেট হলে এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী।
দুই দেশের বর্তমান হাই কমিশনার, ডেপুটি হাই কমিশনারসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এ অধিবেশনে অংশ নেন।
১৯৮৫ থেকে চার বছর ঢাকায় ভারতের হাই কমিশনারের দায়িত্ব পালন করা আই এস চাধা বলেন, দুই দেশের সম্পর্ক জোরদারে পারস্পরিক আস্থা বৃদ্ধি ও জাতীয় ঐকমত্যের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
তিনি বলেন, “দুই দেশেরই সৌভাগ্য যে তাদের শক্তিশালী রাজনৈতিক নেতৃত্ব রয়েছে।”
সাবেক হাই কমিশনার মুচকুন্দ দুবে যখন ঢাকায় দায়িত্ব পালন করেন, তখন বাংলাদেশে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায়। সাবেক এই কূটনীতিকের মতে, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এখন ‘অতীতের চেয়ে ভাল’।
“বিশ্বাস ও সমঝোতার ভিত্তিতে দুই দেশ এখন একসঙ্গে কাজ করছে” মন্তব্য করে দুবে বলেন, দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক এগিয়ে নেয়ার এখনই ‘উপযুক্ত সময়’।
দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার ও অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সমাধানে নীতি গ্রহণের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অংশীজনের অন্তর্ভুক্তি জরুরি বলে মনে করেন ভারতে বাংলাদেশের সাবেক হাই কমিশনার ফারুক আহমেদ চৌধুরী।
এক্ষেত্রে নাগরিক সমাজের ভূমিকাকেও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি।
ভারতে বাংলাদেশের সাবেক হাই কমিশনার সি এম শফি সামি বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক শুধু দুই দেশের জন্যই নয়, গোটা অঞ্চলের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
“ভারত বিশ্বে উদীয়মান অর্থনৈতিক পরাশক্তি। নিকট প্রতিবেশী বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতৃত্ব দিতে ভারতের জন্য সহায়ক হবে,” বলেন তিনি।
ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক ‘সঠিক পথেই’ রয়েছে মন্তব্য করে শফি সামি বলেন, সমস্যা সমাধানে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ প্রয়োজন, যাতে অমীমাংসিত বিষয়গুলো ঝুলে না থাকে।
ভারতে বাংলাদেশের সাবেক হাই কমিশনার ফারুক সোবহান মনে করেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রত্যাশিত আস্থার সম্পর্ক গড়ে না উঠায় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কেও তার নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে।
জঙ্গি দমনে যৌথ পরিকল্পনার পাশাপাশি আঞ্চলিক সহযোগিতা গড়ার উপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, শীর্ষ পর্যায়ে নিয়মিত দ্বিপাক্ষিক সিদ্ধান্তগুলো পর্যালোচনা করে করণীয় নির্ধারণ করতে হবে।
কলকাতায় বাংলাদেশের সাবেক ডেপুটি-হাই কমিশনার হারুন-অর-রশীদ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ‘সমান্তরাল ও ভারসাম্যপূর্ণ’ সম্পর্কের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
তিনি বলেন, সীমান্ত হত্যা দ্রুত শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা উচিত। এছাড়া তিস্তা চুক্তি ও সীমানা নিয়ে বিষয়গুলোও জরুরি ভিত্তিতে সমাধান করতে হবে।
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক জোরদারে নিরাপত্তার বিষয়টিতে আরো গুরুত্ব দিতে বলেন দুই দেশের সাবেক হাই কমিশনাররা। অধিবেশনের সঞ্চালনায় ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ।
ঢাকায় ভারতের সাবেক হাই কমিশনার আইপি খোসলা, বীণা সিক্রি ও বর্তমান হাই কমিশনার পঙ্কজ শরণও অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন।
অধিবেশন শেষে দুই দেশের সাবেক কূটনীতিকরা উপস্থিত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।