জঙ্গি দমনে অভিযানে নামছে বাংলাদেশ-ভারত
জঙ্গি দমনে এবার বাংলাদেশ-ভারত একসাথে অভিযানে নামছে। এ ক্ষেত্রে পারস্পরিক তথ্য আদান-প্রদান করে বাংলাদেশ ও ভারত নিজ নিজ দেশে জঙ্গি দমনে অভিযান আরও জোরদার করবে। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আগামীকাল সোমবার বাংলাদেশে আসছে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থার (এনআইএ) একটি প্রতিনিধি দল। পরদিন পুলিশ সদর দফতরে দুই দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে একটি বৈঠক। বর্ধমান বিস্ফোরণের পর নড়েচড়ে বসা ভারত দীর্ঘ তদন্তের মাধ্যমে যেসব তথ্য পেয়েছে তা উপস্থাপন করবে বৈঠকে। অনুরূপভাবে বাংলাদেশও জঙ্গিদের ব্যাপারে ভারতকে তথ্য দেবে।
জানা যায়, এনআইএ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকের জন্য পুলিশ সদর দফতর, র্যাব, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ও স্পেশাল ব্রাঞ্চের একজন করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা (জঙ্গি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ) নিয়ে একটি টিম গঠন করা হয়েছে। বৈঠকে কি কি বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে ইতিমধ্যে তা ঠিক করেছে বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা। বাংলাদেশ টিমের নেতৃত্ব দেবেন পুলিশ সদর দফতরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। আর এনআইএ’র তিন সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন আইজি সঞ্জীব কুমার সিং। বাকী দুই সদস্য হলেন, ডিআইজি অনুরাগ তঙ্কা ও ডিআইজি সাজিদ ফরিদ সপু।
বাংলাদেশ টিমের একজন সদস্য বলেন, ‘জঙ্গিদের ব্যাপারে এতদিন ভারতের কাছে নানাভাবে তথ্য দেয়া হলেও তারা বিষয়টিকে খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি। বর্ধমান বিস্ফোরণের পর তাদের টনক নড়েছে। তদন্তের মাধ্যমে তারা বুঝতে পেরেছে সমস্যাটি কত গভীর। যা দু’দেশের জন্যই হুমকি।’তিনি বলেন, ‘জঙ্গিদের ব্যাপারে বাংলাদেশ কূটনৈতিক মাধ্যমে অনেক তথ্য দিয়েও ওপাশ থেকে সাড়া পায়নি। বিশেষ করে বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ জঙ্গি নেতা সোহেল মাহফুজ ভারতের মুর্শিদাবাদ পালিয়ে আছে। মাওলানা সাঈদ গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে, মুর্শিদাবাদে মহিলা মাদ্রাসার শিক্ষক সেজে বেশ কয়েকজন জঙ্গি নেতা সেখানে আছে। সে তথ্যও ভারতের গোয়েন্দাদের জানিয়ে দেয়া হয়েছিল। তারপরও তারা এতদিন এসব বিষয়ে খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি।’
বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের অন্য এক সদস্য জানান, ‘শুধু জঙ্গি নয়, ভারতে পালিয়ে থাকা সন্ত্রাসীদের ব্যাপারেও এনআইএ’র সঙ্গে আলোচনা হবে। কারণ, কয়েকজন সন্ত্রাসী ভারতে বসে বাংলাদেশে চাঁদাবাজি করছে। তারা গ্রেফতার না হওয়ায় দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসছে না। ভারত যদি তাদের ফেরত নাও দেয়, গ্রেফতার করে ওদের কারাগারে রাখলেও বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা অনেকটাই ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু ভারতীয় গোয়েন্দাদের নজরে থাকার পরও এসব সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না। এছাড়া আইমান আল জাওয়াহিরির ভিডিও বার্তার পর বাংলাদেশ ও ভারতে জঙ্গিরা বেশ তত্পর হয়ে ওঠেছে।’
বাংলাদেশের প্রতিনিধি টিমে থাকা আরেক সদস্য বলেন, ‘ইতিমধ্যে বাংলাদেশের গোয়েন্দা পুলিশ বেশ কয়েকজন জঙ্গি নেতা ও সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। ভারতেও এখন চলছে জঙ্গি বিরোধী অভিযান। দুই দেশই তথ্য আদান-প্রদান করে নিজ নিজ দেশে আলাদাভাবে অভিযান চালাবে। শুধু সীমান্তের নোম্যান্স ল্যান্ডে বিএসএফ ও বিজিবির সহায়তায় যৌথ অভিযান হতে পারে। সীমান্ত এলাকার জঙ্গি আস্তানার ব্যাপারেও সতর্ক দুই দেশ।’
বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা আরও জানান, ভারতে গ্রেফতার সাজিদকে জিজ্ঞাসাবাদ করে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, বাংলাদেশে নাশকতার পরিকল্পনা কার্যকর করতে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, কুষ্টিয়াসহ আরো কয়েকটি জেলায় তাদের সদস্যরা ছড়িয়ে রয়েছে। গোয়েন্দারা জানার চেষ্টা করছে সম্ভাব্য কোন পথে, কিভাবে নাশকতা ঘটানো হতে পারে। সাজিদ চক্রের অন্যতম প্রধান হোঁতা হওয়ায় তার কাছ থেকে পরিকল্পনার অনেকটাই জানা সম্ভব।
সূত্র:ইত্তেফাক