আসছে স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি
দেশের হতদরিদ্র মানুষের নিরাপদ স্বাস্থ্যসেবা দিতে ‘স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি’ প্রণয়ন করছে সরকার। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইকোনমিক ইউনিটের তত্ত্বাবধানে এই কর্মসূচি প্রণয়ন করা হচ্ছে।
কর্মসূচি প্রণয়নে নিয়োজিতরা জানান, দেশের ২৯ শতাংশ হতদরিদ্র মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সরকার। প্রতিটি উপজেলার হতদরিদ্র মানুষ ৫০টি রোগের জন্য এ চিকিৎসাসেবা পাবেন। এক্ষেত্রে ১ জন রোগী বছরে প্রায় ১ লাখ টাকার চিকিৎসাসেবা পেতে পারেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইকোনমিক ইউনিটের ডেপুটি ডিরেক্টর ডা. আমিনুল হাসান এ প্রকল্পের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৪ হাজার ৪০০টি রোগ শনাক্ত করে শ্রেণীবদ্ধ করেছে। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে ইউনিভার্সাল হেলথ কভারেজের অধীনে ৭০ শতাংশ রোগী এই সেবা পেয়ে থাকে। বাংলাদেশে এ ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এই প্রকল্পকে হেলথ বেনিফিট প্যাকেজ বা স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি হিসেবে পরিচিত করানো হচ্ছে।
কর্তৃপক্ষ জানায়, ইতোমধ্যে টাঙ্গাইল জেলার ৩টি উপজেলা ও টাঙ্গাইল সদর হাসপাতালে পাইলট প্রকল্প হিসেবে ‘স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি’ চালু করা হয়েছে।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. রিদওয়ান-উর-রহমানের নেতৃত্বে ৮ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচির জন্য সারা দেশের বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে ৫০টি রোগ নির্ধারণ করবেন।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের রেজিস্ট্রার শাহজাদা সেলিম দ্য রিপোর্টকে বলেন, গত ২৩ অক্টোবর রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহণ করেছি। স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচির বিষয়টি এখন চূড়ান্ত হওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. মো. রিদওয়ান-উর-রহমান দ্য রিপোর্টকে বলেন, দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ২৯ শতাংশের জন্য এই কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সরকার। আমরা ভেরি কমন ৫০০ থেকে ১০০০ রোগ নির্ণয় করছি। এই রোগগুলোর সেবা পেতে জেলা, উপজেলা ও শহরে কী পরিমাণ খরচ হয় সে বিষয়ে একটি ধারণাপত্র তৈরি করছি।
স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইনে সামরিক বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও তাদের আত্মীয়স্বজন এবং বাংলাদেশের নাগরিক নন এমন কেউ এ সুবিধা পাবেন না।
স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি পরিচালনার জন্য ‘জাতীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষা তহবিল’ নামে একটি তহবিল গঠন করা হবে। সরকারের বরাদ্দকৃত অর্থ, কার্ডধারীদের দেওয়া চাঁদা, যে কোনো সংস্থার কাছ থেকে অনুদান, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে পাওয়া সাহায্যসহ বিভিন্ন উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহ করা হবে।
সরকার পরিচালিত ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ ও সরকারি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান থেকে সেবা পাবেন স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচির আওতাভুক্তরা।
এই কর্মসূচির অধীনে দরিদ্র সীমার নিচে জীবনযাপন করা জনগোষ্ঠী, প্রান্তিক আয়ের মানুষ, মধ্যম আয়ের মানুষ, উচ্চ মধ্যম ও উচ্চ আয়ের মানুষ তালিকাভুক্ত করবেন কর্তৃপক্ষ। পরিবার প্রধান কার্ডধারী হলেই পরিবারের সবাই চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করতে পারবেন। এ ছাড়াও অনাথ আশ্রম, বৃদ্ধাশ্রম ও কিশোর কেন্দ্রের অধিবাসীদের সরকারি চাঁদায় কার্ড প্রদান করা হবে।
স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচির পরিচালক ডা. আমিনুল হাসান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ২০১৪ সালের জুলাই থেকে এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ছিল। জার্মান সরকার আমাদের অনুদান দেওয়ার কথা, কিন্তু হঠাৎ করে তারা অনুদান দিচ্ছে না। তবে আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে বলেছি, আশা করছি আগামী বছরের মার্চ মাস থেকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হবে।