‘শেখ হাসিনা রাজনীতির ভয়াবহ জায়গায় দাঁড়িয়ে আছেন’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজনীতিকে ভয়াবহ জায়গায় নিয়ে গেছেন। তিনি যে স্থানে দাঁড়িয়ে আছেন সে স্থানটি ভাল নয়। তার পায়ের তলায় মাটি নেই। তিনি চোরাবালির উপর দাঁড়িয়ে আছেন।’
তিনি বলেন, ‘এখান থেকে সরে না আসলে পরিণতি শুভ হবে না। কারণ ইতিহাসে আমরা দেখেছি পৃথিবীর কোনো স্বৈরাচারী শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারেনি পারে না।’
ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে ৭ নভেম্বর উপলক্ষে মহিলা দল আয়োজিত সোমবার বিকেলে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা জার্মানির হিটলার, ইতালীর মুসোলিনি, রোমানিয়ার চসেস্কু, পানামার নরিয়েগাকে দেখেছি, এমনকি পাকিস্তানের স্বৈরশাসক আইয়ূব ও ইয়াহিয়াকে দেখেছি আর বাংলাদেশের এরশাদকেও দেখেছি। এরা কেউ টিকে থাকতে পারেনি। জনগণের ওপর স্টিমরোলার চালিয়েও নিজেদের পতন তারা ঠেকাতে পারেনি। শেখ হাসিনাও দেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবেন না।’
জাতীয় সংসদে রবিবার দেওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘তিনি বলেছেন, যারা ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন, ওই নির্বাচন মেনে নিতে পারেন না, তারা অর্বাচীন।’ তিনি অর্বাচীন শব্দটি কোন অর্থে ব্যবহার করেছেন তা আমরা জানি না। কিন্তু ইউরোপ আমেরিকাসহ সারাবিশ্বের কোনো দেশই ওই নির্বাচনকে মেনে নেয়নি। বাংলাদেশের মানুষও এই নির্বাচনে অংশ নেয়নি। তাহলে কি শেখ হাসিনার ভাষায় সমগ্র দেশের মানুষ ও সারা পৃথিবীর মানুষ অর্বাচীন?’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের কথায় থলের বিড়াল বেরিয়ে গেছে। যে কারণে তিনি কয়েকদিন ঘাপটি মেরে থেকে আজকে (সোমবার) একটি প্রেস ব্রিফিং করেছেন। নিজের সাফাই গেয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, সংবাদ মাধ্যম তার বক্তব্যকে খণ্ডিত করে বিতর্ক সৃষ্টি করছে। আর তিনি যা বলেছেন, সে সব কথা নাকি প্রধানমন্ত্রী অবগত। অথচ তার নেত্রী বলেছেন তিনি কিছুই জানেন না।’
ফখরুল বলেন, ‘৭ নভেম্বর এ দেশের দেশপ্রেমিক মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিনাশের বিরুদ্ধে সে দিন সাধারণ সৈনিক-জনতা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। এ দিনটি দেশপ্রেমিক জনগণের প্রাণের অস্তিত্বের দিন। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার দিন।’
তিনি বলেন, ‘দেশপ্রেমিক জনগণের সঙ্গে বিএনপিও এ দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করতে চায়। কিন্তু দেশের বিরুদ্ধে কুচক্রিরা ৭ নভেম্বরকে পছন্দ করে না। সে কারণে তারা এ দিনটি পালন করে না, অন্যকে করতেও দেয় না। আমরা যারা পালন করতে চাই, তাদের বাধা দেয়। আমাদের সমাবেশও করতে দেয় না। কারণ তারা দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘যারা দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করেছিল, ৭ নভেম্বর তাদের মরণ ঘণ্টা বেজে উঠেছিল। সে কারণেই তারা এই দিবসটিকে অবজ্ঞা করে। পালন করতে ভয় পায়। ৭ নভেম্বর হচ্ছে সৈনিক ও জনতার বিপ্লব। এই বিপ্লব ছিল দেশ ও দেশের স্বাধীনতা রক্ষার বিপ্লব। কিন্তু আওয়ামী লীগ ৭ নভেম্বরের কোনো অনুষ্ঠান পালন করতে দেয় না। কারণ তারা দেশের সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে না।’
৭ নভেম্বর দেশকে হেফাজত করেছে দাবি করে মির্জা ফখরুল ৭ নভেম্বরের চেতনাকে সামনে রেখে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশে গণতান্ত্রিক সরকার গঠনের আন্দোলনে শামিল হওয়ার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান।
আলোচনার শুরুতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ‘ভাসানী তার সারাজীবন রাজনীতি ও মেহনতি জনগণের জন্য উৎসর্গ করে গেছেন। তিনি বার বার ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ পেলেও কোনো দিন ক্ষমতায় যাননি। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য রাজনীতিও করেননি।’
মহিলা দলের সভানেত্রী নুরী আরা সাফার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস ইয়াসমিন, মহানগর সভানেত্রী সুলতানা আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন প্রমুখ।