‘অচল’ রেলকোচ এখন সচল
বাংলাদেশ রেলওয়ের ইয়ার্ডে ছয় মাস অকেজো হয়ে পড়ে ছিল কোচটি। এরপর নকশায় পরিবর্তন এনে নতুনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। এটি এখন পুরোপুরি ব্যবহারের উপযোগী। অকেজো রেলকোচটিই এখন যাত্রী পরিবহন করতে পারবে ১২ বছর পর্যন্ত।
বলা হচ্ছে রেলওয়ের ২১১৬ নম্বর রেলকোচটির কথা। অচল এই রেলকোচটিকে সচল করার পুরো কৃতিত্ব দেশের বৃহত্তম সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার।
সম্পূর্ণ নিজস্ব নকশায় সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার ক্যারেজ হেভি রিপিয়ারিং (সিএইচআর) শপে কোচটি নির্মাণ করা হয়েছে। ছোট লাইনের বা মিটারগেজ এই কোচটি এ মাসেই লালমনিরহাট রেলওয়ের পরিবহন (ট্রাফিক) বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে।
সৈয়দপুরের কারখানায় আগে নতুন কোচ নির্মাণ করা হতো। ১৯৯৩ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারের রেলওয়ে সংকোচন নীতির ফলে কারখানার ক্যারেজ কনস্ট্রাকশন শপ অবলুপ্ত করা হয়। ফলে কারখানায় নতুন কোচ নির্মাণ বন্ধ হয়ে যায়। কারখানা সূত্র বলছে, এর পর থেকে আর কোনো কোচ নির্মাণ করা হয়নি। সেদিক থেকে বলা হচ্ছে, ২১ বছর পর একটি নতুন কোচ নির্মাণ করা হলো সৈয়দপুরের কারখানায়।
কর্মকর্তারা বলছেন, এটি নির্মাণ করতে খরচ পড়েছে ১৫ লাখ টাকা। আর একই মানের একটি কোচ চীন কিংবা ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করতে লাগে চার থেকে পাঁচ কোটি টাকা। সে হিসাবে, সরকারের অন্তত প্রায় চার কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলী (সিএমই) আবদুল মতিন চৌধুরী মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘নতুন নকশায় কোচ রূপান্তরের কাজ দেশে নতুন নয়। এমন কাজের অভিজ্ঞতা আমাদের রয়েছে। তবে বড় বিষয় হলো, এ কোচটি সৈয়দপুর কারখানায় তৈরি, অর্থাৎ সম্পূর্ণ দেশীয়। রূপান্তরের পর কোচটি আগামী ১২ বছরের জন্য সচল হলো। এ কাজটি নিয়ে আমরা নিঃসন্দেহে গর্ব করতে পারি।’
সৈয়দপুর রেলওয়ে সূত্র জানায়, ১৯৮৩ সালে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার ক্যারেজ কনস্ট্রাকশন শপে এ কোচটি নির্মাণ করা হয়। দীর্ঘদিন জরাজীর্ণ অবস্থায় থাকলেও কোচটি রেলপথে সচল ছিল। অর্থাৎ যাত্রী পরিবহন করছিল। কিন্তু এ বছরের জানুয়ারির দিকে কোচটি পুরোপুরি অকেজো হয়ে পড়ে। সে কারণে এটিকে ইয়ার্ডে ফেলে রাখা হয়। তবে কোচটির অনেক সরঞ্জাম ভালো দেখতে পেয়ে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার কর্মকর্তাদের মনে হয় একে সচল করা সম্ভব। তাই তাঁরা এটিকে কারখানায় নিয়ে আসেন এবং মেরামত শুরু করেন। পরে নকশা বদলে নতুন করেই এটিকে নির্মাণ করা হয়।
গত সোমবার সরেজমিন সিএইচআর শপের ইয়ার্ডে দেখা যায় রূপান্তরিত দ্বিতীয় শ্রেণির ওই কোচটি।
শপের ইনচার্জ ও জ্যেষ্ঠ উপসহকারী প্রকৌশলী দ্বিজয় কুমার সিংহ জানান, এখানকার শ্রমিক-প্রকৌশলীরা দেড় মাস ধরে মূল কাঠামো ভেঙে কোচটি নতুনরূপে নির্মাণ করেন। এ কারখানাতেই এর নকশা তৈরি করা হয়।
জানা গেছে, আগে কোচটিতে এক পাশে পাশাপাশি চারটি আসন স্থাপন করা ছিল। অন্য পাশে ছিল যাত্রীদের চলার পথ। আসনগুলো এক পাশে থাকায় কোচটি রেলপথে এত দিন কিছুটা ভারসাম্যহীনভাবে চলাচল করেছে। এতে এক অংশে চাপ (লোড) বেশি পড়ায় দ্রুত এর স্প্রিং বিকল হচ্ছিল।
নতুন করে নির্মাণের সময় বদলে ফেলা হয়েছে এর নকশাও। এখন দুই পাশে দুটি করে আসন রাখা হয়েছে। মাঝখানে রাখা হয়েছে চলার পথ। ৬৮ আসনের কোচটিতে আগে জানালা ছিল ১৮টি। এখন সেখানে ৩৩টি জানালা স্থান পেয়েছে। কোচটিতে প্রতিবন্ধী যাত্রীদের জন্য চারটি বিশেষ আসনের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। আরও আছে একটি টয়লেট।
সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার কার্য ব্যবস্থাপক মুহাম্মদ কুদরত-ই-খুদা প্রথম আলোকে বলেন, নতুন নকশায় রূপান্তরিত কোচটির যাত্রীরা এখন পর্যাপ্ত আলো-বাতাস পাবেন। তিনি জানান, রেলওয়ের লালমনিরহাট ট্রাফিক বিভাগে এ ধরনের ১৫টি কোচ রয়েছে। এর সব কটিই আধুনিকায়ন করার প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
প্রসঙ্গত, নতুন কোচ নির্মাণ বন্ধ থাকায় সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় এখন শুধু ক্যারেজ (যাত্রীবাহী) ও ওয়াগন (মালবাহী) কোচ মেরামতের কাজ হয়।