‘ডায়মন্ড ডাকে’র বাংলাদেশিরা…
ব্যাট বগলে নিয়ে খুব কায়দা-কেতা করে মাঠে নামলেন ব্যাটসম্যান। এসে দাঁড়ালের নন-স্ট্রাইকিং প্রান্তে। কিন্তু স্ট্রাইক নেওয়া মানে কোনো বলের মুখোমুখি হওয়ার আগেই যদি সেই ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে ফিরে যেতে হয়, তাহলে পুরো ব্যাপারটাই খুব নির্দয় চেহারা পায়। কোনো বল না খেলে আউট হওয়ার পরের মুহূর্তটি ব্যাটসম্যানের জন্য আরও ভয়াবহ। উইকেট থেকে সাজঘরের দূরত্ব যেন ওই মুহূর্তে তাঁর বড় দীর্ঘই মনে হয়। এমন দুর্ভাগ্যের শিকার ব্যাটসম্যানের মুখায়বের দিকে কখনো খেয়াল করেছেন? হতাশা-ক্রোধ আর আফসোস মিলিয়ে এক বিচিত্র অনুভূতির খেলা তখন চলতে থাকে তাঁর চেহারায়।
এমন হতাশামাখা আউটের একটা গালভরা নাম আছে ক্রিকেটে—ডায়মন্ড ডাক। শূন্য রানে আউট হওয়ার নাম তো এমনিতেই ‘ডাক’।
সেই সঙ্গে হীরা-টিরার ব্যাপার-স্যাপার ঢুকিয়ে বিষয়টিকে আরও মহিমান্বিত করা আর কী! মহিমান্বিত হওয়ার ব্যাপারই তো বটে। কোনো বল খেলতে পারলেন না অথচ আউট ! পুরো বিষয়ের মধ্যেই তো একটা বুকচাপা কষ্টের অনুভূতি মিশে। ব্যাপারটা যেন অনেকটা হাত-পা বেঁধে পানিতে নামিয়ে দেওয়ার পর বলা, তুমি তো সাঁতার দিতেই শিখলে না!’ অথচ, সাঁতার জানি কি জানি না, এই বিষয়টিই তো প্রমাণের সময় পেল না ওই দুর্ভাগা সাঁতারু।
১৯৭১ সালে শুরু হওয়া একদিনের ক্রিকেটে এখনো পর্যন্ত মাত্র ১২৫ জন ক্রিকেটার এই অভাবিত দুর্ভাগ্যের শিকার হয়েছেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটি হলো, এই ১২৫ জনের দলে বাংলাদেশি ক্রিকেটার আছেন সাত-সাতজন। আকরাম খানকে দিয়ে শুরু। এই তো সেদিন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মুমিনুল হক শিকার হলেন ব্যাপারটির। আরও নির্দিষ্ট তথ্য হচ্ছে এই ‘ডায়মন্ড ডাক’ দুর্ভাগ্যের শিকার হওয়া সাত বাংলাদেশি ক্রিকেটারের মধ্যে তিনজন বিভিন্ন সময় নেতৃত্ব দিয়েছেন বাংলাদেশ দলকে।
একদিনের ক্রিকেটে এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে বেশিবার ‘ডায়মন্ড ডাক’ দুর্ভাগ্যের শিকারও এক গ্রেট—ওয়াসিম আকরাম। পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক ও কিংবদন্তি বোলার আকরামকে মোট চারবার কোনো বল না খেলেই ধরতে হয়েছে সাজঘরের পথ। প্রিয় পাঠক, আসুন একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক গোল্ডেন ডাকের শিকার হওয়া সাত বাংলাদেশি ক্রিকেটারের দুর্ভাগ্য-প্রসূত মুহূর্তগুলোর দিকে
আকরাম খান
১৯৯৯ সালে প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে এই দুর্ভাগ্যের শিকার হয়েছিলেন আকরাম খান। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত মেরিল ইন্টারন্যাশনাল কাপের কথা নিশ্চয়ই সবার মনে আছে। ওই প্রতিযোগিতায় কেনিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে কোনো বল না খেলেই দর্শকদের হতবাক করে দিয়ে রানআউটের শিকার হয়েছিলেন বাংলাদেশের সাবেক এই অধিনায়ক। ম্যাচটিতে বাংলাদেশ হেরেছিল ৮ উইকেটে।
নাঈমুর রহমান
আকরামের পর দ্বিতীয় ডায়মন্ড ডাক আরেক সাবেক অধিনায়ক নাঈমুর রহমান। ২০০০ সালের মে মাসে এশিয়া কাপের উদ্বোধনী ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে উপুল চন্দনা ছিলেন তাঁর সেই দুর্ভাগ্যের নেপথ্য কারিগর। এ ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছিল ৯ উইকেটে।
হাবিবুল বাশার
তৃতীয় বাংলাদেশি অধিনায়ক হিসেবে ডায়মন্ড ডাক-দুর্ভাগ্য এসেছিল হাবিবুল বাশারের জীবনে। ২০০১–এর এপ্রিলে হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হাবিবুলের হাতে ডায়মন্ড-ডাক ধরিয়ে দিয়েছিলেন গাই হুইটাল। এ ম্যাচে বাংলাদেশে হেরেছিল ৭ উইকেটে।
এনামুল হক জুনিয়র
২০০৫ সালের ২৪ জানুয়ারিতে ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একদিনের ক্রিকেটে এনামুলের ‘অগ্নি-অভিষেক’ই হয়েছিল! মাসাকাদজার হাতে রানআউটের শিকার হয়ে ডায়মন্ড ডাক পেয়ে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে যখন ফিরলেন, ততক্ষণ বাংলাদেশের ৩১ রানের পরাজয় নিশ্চিত হয়েছে।
নাঈম ইসলাম
২০০৮–এর অক্টোবরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মিরপুরে রানআউটের শিকার হয়ে ডায়মন্ড ডাকের তিক্ত স্বাদ পান নাঈম। এ ম্যাচে বাংলাদেশ হারে ৭৫ রানে।
জুনায়েদ সিদ্দিক
২০০৯-এর জানুয়ারিতে মিরপুরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৪৮ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ১১ রানেই ৩ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। দুই ওপেনার তামিম ইকবাল-জুনায়েদ সিদ্দিকি রানআউটের শিকার। এর মধ্যে জুনায়েদের ভাগ্যে জোটে ডায়মন্ড ডাক! তবে এ ম্যাচের আলাদা একটা মাহাত্ম্য আছে। একজন ব্যাটসম্যানের ডায়মন্ড ডাক পাওয়ার পরও এ ম্যাচ বাংলাদেশ জিতেছিল ৫ উইকেটে।
মুমিনুল হক
সর্বশেষ ডায়মন্ড ডাকের ঘটনার শিকার বাংলাদেশের ‘লিটল মাস্টার’ মুমিনুল হক। গত বছর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে এনামুল হকের সঙ্গে ভুল–বোঝাবুঝির শিকার হয়ে এই দুর্ভাগ্য বরণ করেছিলেন মুমিনুল। বাংলাদেশ অবশ্য ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত জিতেই মাঠ ছেড়েছিল। তথ্যসূত্র: ক্রিকইনফো।