বর্ধমানে বোমা বিস্ফোরণ ১১ ‘বাংলাদেশী’র পরিচয় চায় ভারত
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় বাংলাদেশের কাছে ১১ ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত হতে চায় সে দেশের জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ)। ওই ১১ ব্যক্তির ছবি, মোবাইল নম্বর ও আত্মীয়-স্বজনসহ বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সম্বলিত তালিকা হস্তান্তর করা হয়েছে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, সোম ও মঙ্গলবার ঢাকায় সফররত এনআইএ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত ৬ সদস্যের প্রতিনিধির দুই দফা বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে ভারত ও বাংলাদেশের জঙ্গিদের সখ্য রয়েছে— এমন তথ্য জানিয়ে ১১ সদস্যের নামের একটি তালিকা দিয়েছে ভারত। ওই তালিকা থেকে ৪ জন যে বাংলাদেশী তা নিশ্চিত করেছে এ দেশের প্রতিনিধি দল। পরিচয় নিশ্চিত হওয়া ব্যক্তির মধ্যে রয়েছে— জেএমবি সদস্য বোমারু মিজান, সালাউদ্দিন, জামাই ফারুক ও ভারতে আটক হওয়া সাজিদ। এ ছাড়াও বাকি আট ব্যক্তির ছবি ও নামের সঙ্গে বাংলাদেশের জঙ্গিদের নামের কোনো মিল পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে এই আটজন ভারতে গিয়ে নাম পরিবর্তন করে আশ্রয় নিয়ে থাকতে পারে। এ নামের মধ্যে রয়েছে— কাওসার, আনোয়ার শেখ, রেজাউল করিম, আমজাদ হোসেন, আবুল কালাম, বোরহান উদ্দিন, জহিরুল, হাবিবুর রহমান। এ নামগুলোর মধ্যে একই ব্যক্তির একাধিক নাম রয়েছে।
এর আগে দুপুর আড়াইটার দিকে ভারতের এনআইএ’র ৫ ও বাংলাদেশের ৬ সদস্যের মধ্যে বৈঠক শুরু হয়ে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলে। বৈঠকে ভারতীয় গোয়েন্দারা বর্ধমানের বিস্ফোরণের তদন্তে যে সব তথ্য পেয়েছে তা উত্থাপন করে। এ সময় বর্ধমানে বিস্ফোরণস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া বোমা ও অস্ত্রের ছবি প্রদর্শন করা হয়। বাংলাদেশের গোয়েন্দারা ওই বোমার ছবি দেখে প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করেছে এগুলো বোমারু মিজানের বানানো হতে পারে।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, গত ২ অক্টোবর বর্ধমানে বিস্ফোরণের ঘটনার পর ভারতের গোয়েন্দারা জানতে পারে ওই বাসা ভাড়া নেওয়া হয় মার্চ মাসে। যেখানে বাংলাদেশের নাগরিক ছিল। এ তথ্যে বাংলাদেশের গোয়েন্দারা ধারণা করছে যে, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ত্রিশালের সাইনবোর্ড এলাকায় প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে পুলিশ হত্যা করে জেএমবির শূরা সদস্য রাকিবুল হাসান ও সালাউদ্দিন সালেহীন ওরফে সানি (৩৮) এবং বোমা বিশেষজ্ঞ মিজানকে (৩৫) ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল। এ ঘটনার পর ভারতে পালানোর পথে রাকিবুল হাসান বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। সালেহীন ও বোমারু মিজান হয়ত ভারতের বর্ধমানে গিয়ে আশ্রয় নেয়।
এনআইএ’র দেওয়া তথ্য অনুসারে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে কখনো জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেনি। এর আগে ভারত ও পাকিস্তান কেন্দ্রীয় জঙ্গি সংগঠনের বিষয়ে এনআইএ বিভিন্ন ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করেছে। জেএমবি এবং বর্ধমান বিস্ফোরণের পর এনআইএ’র তদন্তে উঠে এসেছে, জেএমবি সদস্যরা বর্ধমানে ছোট ছোট মাদ্রাসা তৈরি করেছে। সেখানে বিয়ে করে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে বসবাস করছে অন্তত অর্ধশত ব্যক্তি। তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সদস্যদের বেশ মিল রয়েছে। উভয় দেশের গোয়েন্দারা নিশ্চিত হয়েছে যে, ভারত ও বাংলাদেশের জঙ্গিরা পশ্চিমবঙ্গে জেএমবির ব্যানারে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলছে।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার (ডিবি) মনিরুল ইসলাম দ্য রিপোর্টকে বলেন, এনআইএ’র পক্ষ থেকে ১০-১২ জনের একটি নামের তালিকা নিয়ে বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। ওই তালিকা অনুসারে ৪-৫ জনের পরিচয় সম্পর্কে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে। অন্যদের বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এ ছাড়াও ত্রিশালের ঘটনার পর কয়েকজন জঙ্গি ভারতে পালিয়ে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, তারা বর্ধমানে ভারতীয় জঙ্গিদের কাছে আশ্রয় নিয়েছিল।