বাবা হত্যা : মা ও পরকীয়া প্রেমিকের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিল মেয়ে
বাবা হত্যার বিচার চেয়ে মা ও তাঁর পরকীয়া প্রেমিকের বিরুদ্ধে আদালতে অকপটে সাক্ষ্য দিলেন নিহতের মেয়ে এ্যামি জাহান (১৩)।
এ্যামি মুগদাপাড়া কাজী জাফর আহমেদ উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী।
আজ মঙ্গলবার ঢাকার সপ্তম বিশেষ জজ আদালতে এ মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য ছিল। এ দিন এ্যামি ও তার ছোট ভাই রাব্বানীও (১০) সাক্ষ্য দিতে আদালতে হাজির হয়। তবে এ্যামির সাক্ষ্য শেষ না হওয়ায় রাব্বানীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়নি। রাব্বানী মুগদাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র।
এ্যামি তার জবানবন্দিতে বলে, আসামি জসিমকে আমি চিনি। আমাদের বাসায় সে আসা-যাওয়া করত। আব্বুর সঙ্গে আম্মু শুধু ঝগড়া করতেন। ঝগড়ার সময় আম্মু আব্বুকে মেরে ফেলার হুমকি দিতেন। আব্বু বাসায় না থাকলে জসিম আঙ্কেল প্রায়ই আমাদের বাসা আসত। জসিম আঙ্কেল এলে মা আমাদের দুই ভাই-বোনকে এক ঘরে আটকে রাখতেন। তারা এক ঘরে থাকতেন। জানালার ফাঁক দিয়ে আমরা উঁকি মেরে দেখার চেষ্টা করতাম। কিন্তু তাদের জানালায় পর্দা দেওয়া থাকায় কিছু দেখতে পেতাম না। আম্মু মারধর করবেন এ ভয়ে আমরা আব্বুকে কিছু বলতাম না।
আমার বাবা জাহাঙ্গীর ঘটনার দিন দুপুরের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন। প্রাইভেট পড়ার উদ্দেশে আমাকে ও আমার ভাইকে নিয়ে মা রওনা দেন। নিচে নেমে মা বলেন, ময়লার গাড়ি আসবে। তোমরা যাও আমি গাড়িতে ময়লা তুলে বাসায় তালা দিয়ে আসছি। আমরা পড়তে চলে যাই। পড়া শেষে সুমি আপুর বাসায় গেলে সেখানে আমার মা যান। আমাদের নিয়ে আসার সময় মা সুমি আপুকে বলেন, তোর আঙ্কেলের শরীরটা বেশি ভালো যাচ্ছে না, তার বয়স হয়েছে। কাল হাসপাতালে নিয়ে যাব। দোয়া করিস।
আমরা বাসায় আসার পরও আব্বুকে শুয়ে থাকতে দেখে ডাকাডাকি করি। কিন্তু আব্বু ওঠেন না। মা এসে বলেন, তোর আব্বু স্ট্রোক করে মারা গেছে। আমি তাড়াতাড়ি করে আঙ্কেলদের খবর দিতে যাই। তাদের মধ্যে একজন ডাক্তার ছিলেন। তিনি আমার সঙ্গে এসে আব্বুকে দেখে বলেন, গলায় লাল দাগ কেন?
আম্মু জানান, দুপুরের খাবার থেকে হয়তো এলার্জি হয়েছিল। কিন্তু ডাক্তার আঙ্কেল বলেন, এটা এলার্জির নয়, গলায় ফাঁস দেওয়ার দাগ। পরে তিনি পুলিশকে খবর দেন।
পুলিশ আসার আগে আমার মা আমাদের শিখিয়ে দেন যে, পুলিশের পা ধরে যেন কান্নাকাটি করে বলি, আমার বাবার লাশ যেন কাটাছেঁড়া করা না হয়। পুলিশ এসে আমার আব্বুর লাশ নিয়ে যায়। আম্মুকে গ্রেপ্তার করে। আমি আব্বু হত্যার বিচার চাই।
সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারক বারেকুজ্জামান সাক্ষ্যগ্রহণ করেন। একইসঙ্গে আগামি ২৬ নভেম্বর সাক্ষীর জেরার জন্য দিন ধার্য করেন।
সাক্ষ্যগ্রহণের পুরোটা সময় নিহতের স্ত্রী মুক্তা জাহান মাথা নিচু করে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। অপর দুই আসামি পরকীয়া প্রেমিক জসিম ও জনৈক মাহবুবুর রহমানও আদালতে হাজির ছিলেন। এরা সবাই জামিনে আছেন।
আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে মর্মে তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে মর্মে উল্লেখ করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বিমানবন্দর থানার উপপরিদর্শক আবু বকর সিদ্দিক ২০১৩ সালের ২৬ জানুয়ারি নিহতের স্ত্রী মুক্তা জাহান, তাঁর পরকীয়া প্রেমিক জসিম ও জনৈক মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ১৩ আগস্ট বিমানবন্দর থানার কাওলার সিভিল এভিয়েশনের স্টাফ কোয়ার্টারে নিজ বাসায় খুন হন জাহাঙ্গীর। তিনি পেশায় ড্রাইভার ছিলেন। এ ঘটনায় নিহতের খালাতো ভাই মো. আবদুল লতিফ বিমানবন্দর থানায় অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।