‘খুনি টিপু সুলতানের বিচার চাই’
আমার মেয়েকে খান টিপু সুলতান, তার স্ত্রী ডা. জেসমিন আরা বেগম ও ছেলে হুমায়ুন সুলতান সাদাব পরস্পর যোগসাজসে খুন করেছে। আমি এ খুনের বিচার চাই বলে ডা. মাহজাবিন হত্যার বিচার দাবি করেন তার বাবা প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম।
বুধবার সকালে যশোর প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন ডেকে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি মেয়ে খুনের সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যয়বিচার পাওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করেন।
যশোর-৫ (মণিরামপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য খান টিপু সুলতানকে ‘নরপিশাচ’ উল্লেখ করে নুরুল ইসলাম বলেন, ডা. শামারুখ মাহজাবিনের উচ্চতা ছিল পাঁচ ফুট আড়াই ইঞ্চি। এ মেয়ে পাঁচ ফুট উঁচু গ্রিলের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে কীভাবে আত্মহত্যা করে?
তিনি বলেন, খান টিপু সুলতানের অনেক অপকর্মের স্বাক্ষী ছিলেন আমার মেয়ে। তার অনেক জালিয়াতির ডকুমেন্ট তার হস্তগত হয়। এই কারণে নিজের মুখোশ উন্মোচন হওয়ার আগেই সে আমার মেয়েকে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে।
প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম বলেন, টিপু সুলতান অত্যন্ত প্রভাবশালী। সে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পক্ষে নেয়ার জন্য ঢাকা মেডিকেলের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধানকে ভীষণ চাপ দিচ্ছে। এ অবস্থায় একমাত্র মিডিয়াই পারে সুবিচার নিশ্চিত করতে।
নূরুল ইসলাম বলেন, মৃত্যুর পর মাহজাবিনের জিহ্বা মুখের ভেতরই ছিল। চোখ ছিল স্বাভাবিক। কণ্ঠনালীর দুই পাশে আঙুলের দাগ, নখের আঁচড়, বাম হাতের কব্জির নিচে ক্ষত, পিঠে রক্ত জমাট বাঁধা ছিল। এ সব দেখে আমি নিশ্চিত, আমার মেয়েকে খুন করা হয়েছে।
মৃত মেয়ের শারীরিক অবস্থার বর্ণনা দিতে গিয়ে পিতা নূরুল ইসলাম কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় সংবাদ সম্মেলনস্থলের পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে।
কেন ডা. শামারুখকে খুন করা হতে পারে- এমন প্রশ্নের জবাবে নূরুল ইসলাম বলেন, খান টিপু সুলতান মানুষ নয়, নরপিশাচ। সে আমার মেয়েকে উচ্চশিক্ষাগ্রহণে বাধার সৃষ্টি করেছে। বিসিএস ও এফসিপিএস পরীক্ষায় অংশ নিতে দেয়নি। তার ছেলে বেকার। সে কারণে পুত্রবধূ উচ্চশিক্ষিত হোক, তা সে চায়নি। বাবা-মার দয়ায় বেঁচে থাকা বেকার ছেলের পক্ষে টিপুর বিরুদ্ধাচারণ করা সম্ভব হয়নি।
‘বিয়ের সময় জামাইকে ব্যারিস্টার হিসেবে জানতাম’ উল্লেখ করে নূরুল ইসলাম বলেন, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতিসহ যশোরের সব মানুষ জানেন, টিপু সুলতানের ছেলে সাদাব ব্যারিস্টার। কিন্তু বিয়ের পর আমরা জানতে পারি সে একটা বেসরকারি কলেজ থেকে এলএলবি পাস করেছে। কিন্তু দুইবার বার কাউন্সিলে পরীক্ষা দিয়েও উত্তীর্ণ হতে পারেনি। সে কারণে সাদাব আদালতে প্রাকটিস করতে পারে না।
টিপু সুলতানকে সীমাহীন লোভী উল্লেখ করে মাহজাবিনের বাবা বলেন, বিয়ের পর নানা উছিলায় সাবেক এ সংসদ সদস্য আমার কাছ থেকে যৌতুক আদায় করেছেন। আমি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে, বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে ধার করে টিপুর দাবি পূরণ করেছি। তার পরও আমার মেয়েকে বাঁচতে দেয়া হলো না। প্রসঙ্গক্রমে তিনি এ যাবত দেওয়া যৌতুকের তালিকা, সেগুলো কোথা থেকে কেনা হয়েছে ও দাম কত তা প্রকাশ করেন।
উল্লেখ্য, গত ১৩ নভেম্বর রাজধানীর ধানমন্ডির ৬ নম্বর রোডের ১৪ নম্বর বাসভবনে গলায় ফাঁস দেয়া অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ডা. শামারুখ মাহজাবিনকে। গ্রীন রোডের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেয়ার পর ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আইন সহায়তা কেন্দ্রের উপদেষ্টা জি বি আলম, বিএএফ শাহীন কলেজের অধ্যক্ষ মকবুল হোসেন, আইডিইবির সভাপতি প্রকৌশলী আবুল হোসেনসহ আরো অনেকে।