মুক্তিযোদ্ধা সনদ নেয়া চাকরিজীবীদের মধ্য এক-তৃতীয়াংশই ভুয়া
অনেক সরকারি চাকরিজীবী যোগদানের সময় নিজেদেরকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ঘোষণা করেননি। কিন্তু পরবর্তি সময়ে চাকরির বয়স বৃদ্ধির জন্য নিজেদেরকে মুক্তিযোদ্ধা ঘোষনা করে সনদ নিয়েছেন তাদের এক তৃতীয়াংশই ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের গত এক বছরের পরিসংখ্যানে এরকম তথ্য পাওয়া গিয়েছে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সরকারি চাকরিতে মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য যাঁরা মুক্তিযোদ্ধা সনদ সংগ্রহ করেছেন, এর এক-তৃতীয়াংশই ত্রুটিপূর্ণ। তাঁদের মুক্তিযোদ্ধা দাবি সঠিক না হওয়ায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় তাঁদের প্রত্যয়ন করেনি।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, গত বছরের জুলাই থেকে এ বছরের জুন পর্যন্ত চাকরিজীবীদের মুক্তিযোদ্ধার সনদ প্রত্যয়নের জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থা থেকে ৭৯৭টি প্রস্তাব আসে। তদন্ত শেষে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সঠিক বলে ৪৭১ জনকে প্রত্যয়ন করা হয়। ২৯৪ জনের আবেদন সঠিক নয় বলে জানানো হয়। সঠিক না হওয়ার এই হার এক বছরের মোট আবেদনের ৩৬.৮৮ শতাংশ। ওই সময়কালে ৩২ জনের সম্পর্কে কোনো তথ্য জানানো হয়নি। গত জানুয়ারি পর্যন্ত ১৬ হাজার ৯৯ জনকে প্রত্যয়ন করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যাঁদেরকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রত্যয়ন করা হয়নি তাঁদের অধিকাংশের ক্ষেত্রেই প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বয়স। ১৯৭১ সালে যাঁদের বয়স ১৩ বছরের কম ছিল তাঁদের প্রত্যয়ন করা হয়নি। অনেকেই বয়স প্রমাণের উপযুক্ত প্রমাণ দিতে পারেননি। কারো কারো সনদই ভুয়া ছিল।
সূত্র মতে, চাকরি ছাড়াও নিয়োগ কিংবা ভর্তির জন্য মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কিংবা নাতি-নাতনি কোটায় যাঁরা আবেদন করেন, তাঁদের সনদ যাচাই-বাছাইয়ের জন্যও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আসে। এই সনদ যাচাই-বাছাই করতে গিয়েও অনেকে ভুয়া হিসেবে ধরা পড়েন। তবে এই হার চাকরিজীবীদের মতো এত বেশি নয়। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের জুলাই থেকে এ বছরের জুন পর্যন্ত চার হাজার ৩৪৮ জনের সনদ যাচাইয়ের জন্য প্রস্তাব এসেছিল। এর মধ্যে প্রত্যয়ন করা হয়নি ৪০৫ জনকে। প্রত্যয়ন না করার এই হার এক বছরের যাচাই-বাছাইয়ের ৯.৩১ শতাংশ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সনদ প্রত্যয়ন না করার মধ্যেই দায়িত্ব শেষ করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় হতে যাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রত্যয়ন করা হয়নি তাঁদের সনদ কিংবা গেজেট বাতিলের তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় না। সরকারের পাঁচ সচিবের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধার সনদ জালিয়াতির অভিযোগ উঠলে এর মধ্যে চারজনের সনদ বাতিল এবং একজনের সনদ স্থগিত করে সরকার। এ পর্যন্ত মাত্র আড়াই শ জনের সনদ বাতিল করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে প্রায় ৪৫ হাজার জনকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, সনদ দেওয়া হয়েছে। এর অধিকাংশই সঠিক নয়। তিনি বলেন, ভুয়াদের বাদ দিয়ে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার তালিকা তৈরি করার জন্য খুব শিগগির সারা দেশে যাচাই-বাছাই শুরু হবে।
সূত্র:কালেরকন্ঠ