একের পর এক সংঘাত, মুখে কুলুপ ছাত্রলীগ নেতাদের
ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে সৃষ্ট সংঘাতে একের পর এক উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। প্রাণহাণির ঘটনা পর্যন্ত ঘটেছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে এসব ঘটনা নিয়ে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে কেউ মুখ খুলতে চাননি। কাল শুক্রবার বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে সংবাদ সম্মেলন করবে ছাত্রলীগ।
এদিকে আজও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের ভিএক্স পক্ষের নেতারা শাহ আমানত হলের সামনে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মহড়া দেন। এতে ক্যাম্পাসজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম ও পুলিশের উপস্থিতিতে পরিস্থিতি শান্ত হয়। গত ২৭ সেপ্টেম্বর ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলি হয়। এতে তিনজন আহত হন। ৯ সেপ্টেম্বরও ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের কোন্দল-সংঘাত মেটাতে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। তার পরও সমস্যা মেটেনি।
আমাদের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ক্যাম্পাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে।
গত এক বছরে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, গত ২ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ধিত ফি বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালান ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা। ১৯ ও ২০ ফেব্রুয়ারি রংপুরের রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যালয়ে ভাঙচুর চালায় বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্রলীগ। ২২ ফেব্রুয়ারি খুলনার আজম খান কমার্স কলেজ প্রাঙ্গণে সেখানকার ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা দলীয় কোন্দল থেকে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। ২৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বদরুননেসা কলেজে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের সংঘর্ষ হয়। ওই একই দিনে মানিকগঞ্জ ছাত্রলীগের দুই নেত্রীর বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়। ২ মার্চ বিকেলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলি হয়। এ ঘটনায় কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামানকে মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। আর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বর্তমানে সিঙ্গাপুরে অবস্থান করায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
তবে ছাত্রলীগের দুজন কেন্দ্রীয় নেতা প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রলীগের এ অবস্থার জন্য দায়ী কেন্দ্রের উদাসীনতা। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি গঠিত হয় ২০১২ সালের ৮ মে। ওই সময় থেকে পদবঞ্চিতরা বিক্ষোভ করে আসছেন। গতকালই প্রথম সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা ক্যম্পাসে প্রবেশ করেন। এতে বাধা দেন ওই কমিটির সহসভাপতি অঞ্জন রায়, যিনি পদবঞ্চিতদের পক্ষ অবলম্বন করেন। ফলে সংঘর্ষ বাধে। এতদিন ধরে এ ঘটনা চললেও কেন্দ্র বিষয়টি অবহেলার চোখে দেখেছে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ যদি যথাসময়ে এসব বিষয় আমলে নিত, তাহলে এই মৃত্যুর ঘটনা হয়তো এড়ানো যেত। কাল বেলা ১১টায় শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের পরবর্তী অবস্থান জানাবে ছাত্রলীগ।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংগঠনিক দায়িত্বে পালন করছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক সারমিন সুলতানা (লিলি)।
তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা সম্যক অবগত নই। আমি একটি অনুষ্ঠানে আছি, পরে কথা বলব।’
ওই দুজন কেন্দ্রীয় নেতা জানান, কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মনিটরিং না থাকার কারণে বিভিন্ন সময় এসব অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে। চার বছরে বর্তমান কমিটি ১০১টি শাখা কমিটির মধ্যে নতুন করে মাত্র ২৭টি কমিটি করতে পেরেছে। এর মধ্যে মাত্র সাতটি কমিটি হয়েছে সম্মেলনের মাধ্যমে।
ছাত্রলীগের একজন যুগ্ম সম্পাদক বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ দু বছর। অথচ বর্তমান কমিটি চলছে চার বছর। ফলে শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। দিবসভিত্তিক কর্মসূচি ছাড়া নেই কোনো কর্মসূচি। নেতারা সংগঠনের কাজ বাদ দিয়ে ব্যস্ত থাকেন টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, তদবির–বাণিজ্য নিয়ে। যদি সম্মেলন হতো, তাহলে ক্যাম্পাসগুলোতে এমন সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটত না।