বিমানবন্দরে এতদিন ধরা পড়েছে চুনোপুটি, এবার রাঘববোয়াল

Goldহজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্বর্ণ চোরাচালানের ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিরোধী দলের দুই সাংসদ। পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে অনির্ধারিত আলোচনায় তাঁরা চোরাচালানের ঘটনার জন্য বিমান বাংলাদেশের চেয়ারম্যানকে দায়ী করেন।
আলোচনায় স্বতন্ত্র জোটের প্রধান হাজি মো. সেলিম বলেন, ‘কথায় বলে, শুঁটকির গুদামে বিড়াল চৌকিদার। আমাদের দশা হয়েছে তা–ই। বিমানবন্দরে কোটি কোটি টাকার স্বর্ণ চোরাচালান হয়। অপরাধী চক্র ধরা পড়েছে। এত দিন ধরা পড়েছে চুনোপুটি, এবার রাঘববোয়াল ধরা পড়েছে। পাঁচ কর্মকর্তাসহ যারা ধরা পড়েছে, তারা কোনোভাবে যাতে ছাড়া না পায় সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
হাজি সেলিম অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, ‘ব্যবস্থা না নিলে দেশের বদনাম হবে। ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। অলি-আল্লাহর নামে এই বিমানবন্দর। সেই জায়গায় আকাম-কুকাম করায় অপরাধীদের ওপর আল্লাহর গজব পড়েছে। এরা ছাড়া পেলে আল্লাহ নারাজ হবেন।’
হাজি সেলিম আরও বলেন, বিশ্বের খারাপ বিমানবন্দরগুলোর মধ্যে শাহজালাল বিমানবন্দরের অবস্থান নবম। যাতে দ্রুতগতিতে খারাপদের মধ্যে এক নম্বরে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সেজন্য বিমানবন্দরে সৎ কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দিতে হবে। শিয়ালের কাছে মুরগি বর্গা দেওয়া যাবে না।
জাতীয় পার্টির নেতা কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘বিমানের এক শ্রেণির কর্মকর্তার যোগসাজশে সোনা চোরচালান হয়। এর পেছনে বিমানের চেয়ারম্যান জড়িত। কথিত ধর্মপুত্র পলাশের দাপটে সমস্ত বিমানবন্দর তটস্থ থাকে। বিমানের শিডিউল থেকে শুরু করে সবকিছু তিনি নিয়ন্ত্রণ করেন। বিমানের চেয়ারম্যান পদে জামালউদ্দীন গত ছয় বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন। অথচ এই সময়ে তিনজন মন্ত্রীর পরিবর্তন হয়েছে। ব্যবস্থাপনা পরিচালকও (এমডি) কয়েকজন পরিবর্তন হয়েছে। পুরো পরিচালনা পর্ষদেও পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু জামালউদ্দীন বহাল তবিয়তে আছেন।’

‘ধর্মপুত্রে’ কলঙ্কিত বিমান

গণমাধ্যমের উদ্ধৃতি দিয়ে চোরাচালান চক্রের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের নাম উল্লেখ করে ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘কোন ফ্লাইট কোন শিডিউলে যাবে, তা নির্ধারণ করেন ক্যাপ্টেন শহীদ। বিমানের নিরাপত্তা খুবই দুর্বল। নিরাপত্তা যদি দুর্বল হয়, তবে আমরা আছি কোথায়? এর বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না? ইতিমধ্যে এই সিন্ডিকেটের প্রধান ধরা পড়েছে। তার নাম প্রকাশ করেছে। এদের সঙ্গে ৪২ জন আছে। আশা করি অবিলম্বে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।’

ফিরোজ রশীদ বিমানের চেয়ারম্যানকে ডেকে কৈফিয়ত তলবের জন্য বিমান মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিকে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘কেন এ ধরনের ঘটনা একের পর এক ঘটছে। আজ পর্যন্ত চেয়ারম্যান কোনো বিবৃতি দেননি। বিমানমন্ত্রী বলেছেন, চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার পরও চেয়ারম্যান একবারের জন্য তাঁকে ফোন করেননি। এটা কি সুশাসনের লক্ষণ? চোরকারবারের সঙ্গে যদি বিমানের কর্মকর্তা জড়িত থাকেন, তাহলে দেশটা কোথায়? আমরা কার কাছে বিচার চাইব? সরকার কেন মুষ্টিমেয় লোকের কাছে জিম্মি থাকবে? অপরাধী চক্রের সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে। বিমানবালা পদে থাকা পলাশের স্ত্রীকেও গ্রেপ্তার করতে হবে।’

আলোচনা শেষে স্পিকারের আসনে থাকা ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, এ বিষয়ে কোনো ক্রিমিনাল কেস হয়ে থাকলে কোনো মন্তব্য করা সমীচীন হবে না। মামলা না হয়ে থাকলে বিমানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে দেখবেন বলেও তিনি আশ্বস্ত করেন।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend