ইচ্ছা থাকলেও ফিরতে পারছেন না লতিফ
দেশে ফেরার প্রবল ইচ্ছা থাকলেও সহসাই ফিরতে পারছেন না আওয়ামী লীগের সদ্য অব্যাহতি পাওয়া প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। তিনি বর্তমানে ভারতের কলকাতায় অবস্থান করছেন।
সূত্রমতে, লতিফ সিদ্দিকী সরকারের বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ করে দেশে ফেরার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তবে লতিফ সিদ্দিকীর দেশে ফেরার আগ্রহ জানতে পেরে তার ওপর আক্রমণসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে সরকারকে অবহিত করেছে গোয়েন্দা সংস্থা।
গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে এই মুহূর্তে কোনো আন্দোলন নেই। বিরোধী দলের হাতে তেমন কোনো ইস্যুও নেই। তাই লতিফ সিদ্দিকী দেশে ফিরলে বিরোধী দলগুলো জঙ্গী দলগুলোর সহায়তায় লতিফ সিদ্দিকীর ওপর হামলা চালাতে পারে। শুধু লতিফ সিদ্দিকীর ওপর হামলা নয়; এমনকি তার জীবননাশের ঘটনাও ঘটতে পারে।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে লতিফ সিদ্দিকীর নামে একাধিক মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি হয়েছে। সে সব আদালতে হাজিরা দিতে গেলেও লতিফ সিদ্দিকী ধর্মীয় উগ্রবাদীদের হামলার শিকার হতে পারেন। এ ছাড়া ধর্মপ্রাণ মানুষ রাস্তায় নেমে এলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও চরম অবনতি হতে পারে।
জানা গেছে, লতিফ সিদ্দিকী বর্তমানে কলকাতায় অবস্থান করছেন। সেখান থেকে তিনি দেশে ফেরার জন্য বিভিন্নভাবে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। আর তার এ আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতেই গোয়েন্দা সংস্থা এমন প্রতিবেদন দিয়েছে।
তবে লতিফ সিদ্দিকী তার ছোট তিন ভাই কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আব্দুল কাদের সিদ্দিকী, মুরাদ সিদ্দিকী ও আজাদ সিদ্দিকীর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করছেন না।
প্রসঙ্গত, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে ২৮ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত টাঙ্গাইল জেলার অভিবাসীদের আলোচনা সভায় পবিত্র হজ, তবলিগ জামাত, জামায়াতে ইসলামী ও প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন।
এর পর ১২ অক্টোবর লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ করে রাষ্ট্রপতি প্রজ্ঞাপন জারি করেন। একই দিন আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় দলটির পক্ষ থেকে লতিফ সিদ্দিকীকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়। পরে তার জবাবে সন্তুষ্ট না হওয়ায় আওয়ামী লীগ থেকে প্রাথমিক সদস্যপদও হারান লতিফ সিদ্দিকী।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘লতিফ সিদ্দিকী যে মন্তব্য করে পাপ করেছিলেন, সে পাপের প্রায়শ্চিত্ত তো তিনি করেছেন। মন্ত্রিত্ব হারিয়েছেন। সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পদ থেকে শুরু করে দলের প্রাথমিক সদস্যপদও হারিয়েছেন। এখন আর কী বাকি আছে।’
তিনি বলেন, ‘লতিফ সিদ্দিকী বাংলাদেশের নাগরিক। তিনি যদি দেশে ফিরতে চান, আসুক। তার তো দেশে ফেরায় আইনগত কোনো বাধা নেই।’
আপনাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তরে কাজী জাফরউল্লাহ বলেন, ‘আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়নি। তবে দলের আর কারো সঙ্গে হয়েছে কিনা, তা জানি না।’
লতিফ সিদ্দিকীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সাবেক এই মন্ত্রী বর্তমানে তার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন নিয়ে একটি বই লিখছেন। যদি দেশে ফিরতে না পারেন তাহলে আগামী ফেব্রুয়ারিতে একুশে বইমেলায় তার বইটি প্রকাশ পেতে পারে।