নাটোরে বাস দুর্ঘটনা, কান্না থামেনি স্বজনদের
নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার রাজ্জাকের মোড়ে ২০ অক্টোবর অথৈ পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা কেয়া পরিবহনের আরেকটা বাসের সংঘর্ষ হয়। এতে নিহত হন গুরুদাসপুর উপজেলার সিধুলী গ্রামের ১৪ জনসহ আশপাশ গ্রামের ৩৭ জন। আহত হন আরও ৪১ জন। নিহত ও আহতদের স্বজন ও এলাকাবাসী ভুলতে পারছেন না সেই ভয়াবহ দুর্ঘটনার কথা। দুর্ঘটনার কথা স্মরণ করে এখনও আঁতকে ওঠেন অনেকেই।
দুর্ঘটনার চারদিন পর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রত্যেক নিহতের পরিবারকে এক লাখ করে টাকা দেন।
সে সময় হাসপাতালে থাকাকালে চিকিৎসাসেবা পেলেও বাড়ি ফেরার পর টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না অনেকেই। আর্থিক অনটনে কীভাবে তারা দিনযাপন করবেন তাই ভেবে শংকিত।
সিধুলী গ্রামের বাসিন্দা সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শুকুর আলী জানান, একসঙ্গে তারা এত লোকের প্রাণহানি দেখেননি কখনও। এতজন প্রতিবেশীকে হারিয়ে তারা শোকাহত। সিধুলী গ্রামসহ আশপাশের গ্রামের মানুষের কান্নার রেশ এখনও থামেনি। আর্থিক অনটনে বাড়ি ফেরার পর অনেকে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। এ বিষয়ে তিনি সরকারসহ জনপ্রতিনিধিদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন স্বামীহারা মছিরন বেগম, জলে বেগম ও রাজিয়া বেগম। কাঁদতে কাঁদতে তাদের চোখের জলও যেন শুকিয়ে গেছে।
মছিরন বেগম জানালেন, তার চার মেয়ে। মেয়েরা যখন বাবার কথা বলে তখন তিনি কান্না চেপে রাখতে পারেন না। বলেই হু হু করে কেঁদে ওঠেন মছিরন বেগম।
জলি বেগম গর্ভবতী। অকালে স্বামী হারিয়ে তিনি দিশেহারা।
রাজিয়া বেগমের স্বামী মারা গেছেন। শ্বশুরও আহত হয়ে নির্বাক।
তাদের একটাই দাবি, তাদের আরও সহযোগিতা করা হোক।
সেদিনের সেই দুর্ঘটনায় আহত আজাহার খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে এগিয়ে এলেন। তিনি জানালেন অর্থের অভাবে তার দৈন্যদশার কথা। সহযোগিতার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসার আকুতি জানান তিনি।
এ বিষয়ে নাটোর জেলা প্রশাসক মশিউর রহমান দ্য রিপোর্টকে জানান, হাসপাতালে থাকাকালে আহতদের সুচিকিৎসা দেওয়ার বিশেষ নির্দেশনা ছিল। এখন তা নেই। তবে সাংবাদিকদের মাধ্যমে আহতদের দুর্বিষহ অবস্থার কথা শুনে জেলা প্রশাসন থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আশ্বাস দেন। পাশাপাশি নাটোর দুর্ঘটনায় আহত ও নিহতদের পরিবারের পাশে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য সমাজের বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।