জয়সুরিয়া, স্টিভ ওয়াহ-ক্যালিসের পাশে সাকিব
টেস্টে ধারাবাহিক পারফরম্যান্স করা সাকিব আল হাসান ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচেও দারুণ খেলেছেন। পয়মন্ত ভেন্যুতে ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। সেঞ্চুরির সঙ্গে চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে অভিজাত ক্লাবের সদস্য হয়েছেন তিনি। খুলনা টেস্টে সেঞ্চুরি করে হৃদয় চিহ্ন দেখিয়েছিলেন দর্শকদের। শুক্রবার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সেঞ্চুরি পূর্ণ করে কুর্নিশ করেছেন পুরো গ্যালারির দর্শকদের উদ্দেশে। শেষে হাত দিয়ে ছক্কা মারার ভান করে সেঞ্চুরির সেলিব্রেশন শেষ করেছেন তিনি।
সাকিবের সামনে এ দিন সুযোগ ছিল ৪ হাজারী ক্লাবের সদস্য হওয়ার। মাঠে নামার আগে সাকিবের প্রয়োজন ছিল ১৬৫ রানের ইনিংস। কিন্তু এ দিন সাকিব ১০১ রানে আউট হলে ৪ হাজারী ক্লাবে সদস্য থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। ওই ক্লাবের ঢোকার জন্য সাকিবের প্রয়োজন মাত্র ৬৪ রান। হয়ত দ্বিতীয় ম্যাচেই পয়মন্ত ভেন্যুতেই এই ক্লাবের সদস্য হবেন।
এই ম্যাচে ৪ হাজারী ক্লাবের সদস্য হতে না পারলেও নতুন এক ক্লাবে ঠিকই ঢুকে গেছেনে সাকিব। যেখানে নাম আছে আর মাত্র ৩ ক্রিকেটারের। ইতিহাসের চতুর্থ ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডেতে নিজ দেশের মাটিতে ২০০০ রান ও ১০০ উইকেটের ‘ডাবল’-এর ‘অভিজাত’ ক্লাবে নাম লিখিয়েছেন বাংলাদেশের এই অলরাউন্ডার। এর আগে এই কীর্তি ছিল সনাথ জয়সুরিয়া, স্টিভ ওয়াহ ও জ্যাক ক্যালিসের মতো ৩ কিংবদন্তি ক্রিকেটারের।
দেশের মাটিতে ১০০ উইকেট সাকিবের আগেই হয়ে গিয়েছিল। ২০০০ রান পূর্ণ হতে শুক্রবার দরকার ছিল মাত্র ১৬ রান। ১৯তম ওভারের শেষ বলে চিগুম্বুরার বল থার্ডম্যানে ঠেলে দিয়ে ২০০০ রান পূর্ণ করেছেন সাকিব। সঙ্গে সঙ্গেই বিরল সেই তালিকায় উঠে গেছে সাকিবের নাম।
এই অসাধারণ অর্জনের জন্য সাকিবকে খেলতে হয়েছে ৭১ ম্যাচ। রেকর্ড গড়া ম্যাচে সাকিব তুলে নিয়েছেন তার ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ ওয়ানডে সেঞ্চুরি।
শ্রীলঙ্কার সাবেক তারকা জয়সুরিয়া দেশের মাটিতে ১২৮ ম্যাচ খেলে ৩৮৮০ রান সংগ্রহ করেছেন। উইকেট নিযেছেন ১১৯টি। ১৫৩ ম্যাচ খেলে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহ ৩১৬৫ রানের পাশাপাশি নিয়েছেন ১০১ উইকেট। আর দক্ষিণ আফ্রিকার অলরাউন্ডার ক্যালিস নিজ দেশে ১৪২ ম্যাচ খেলে ৫১৭৮ রানের পাশাপাশি নিয়েছেন ১১৬ উইকেট।
এর আগে টেস্ট সিরিজে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইতিহাসের মাত্র তৃতীয় অলরাউন্ডার হিসেবে একই ম্যাচে সেঞ্চুরি ও ১০ উইকেটের কীর্তি গড়েছিলেন সাকিব। পাশাপাশি এক টেস্ট সিরিজে ২৫০ রানের পাশাপাশি ১৫ উইকেট লাভ করারও কীর্তি গড়েছেন তিনি।
দল দ্রুত ৪ উইকেট হারিয়ে যখন ব্যাকফুটে; সাকিব তখন ত্রাতা হয়ে দলের প্রয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ এক ইনিংস খেলেছেন। মুশফিককে সঙ্গে নিয়ে পঞ্চম উইকেটে ১৪৮ রানের গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়েছেন, যা কিনা পঞ্চম উইকেটে বাংলাদেশের সেরা জুটি। এর আগে এই জুটির মালিক ছিলেন সাকিব-রকিবুল। সেবার ঢাকায় দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১১৯ রানের জুটি বেঁধেছিলেন সাকিব এবং রকিবুল হাসান। আর ২০১০ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পঞ্চম উইকেটে ১১৬ রান করেছিল সাকিব-মুশফিক জুটি।
সাকিবের সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে লড়াইয়ে বড় পুঁজি দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছে। সাকিব যখন মাঠে নেমেছেন তখনই গ্যালারি সাকিব-সাকিব ধ্বনিতে মুখোরিত। সাকিব এ দিন বিধ্বংসী ছিলেন শুরু থেকেই। ৯৫ বলে সেঞ্চুরি পেরুনো সাকিব খেলেছেন বেশকিছু চোখ ধাঁধানো ইনিংস। ১০টি বাউন্ডারি ছিল তার ষষ্ঠ ওয়ানডে সেঞ্চুরিতে। কামুঙ্গোজির বলে বাউন্ডারি লাইনে পানিয়াঙ্গারাকে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেওয়ার আগে করেছেন ১০১ রানরে ইনিংস। সাকিবের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ সংগ্রহ অপরাজিত ১৩৪ রান। সাকিব যেভাবে অবলীলায় খেলেছেন তাতে আগের স্কোরকে অতিক্রম করা খুব সহজই ছিল তার জন্য। দুভার্গ্য সাকিবের, বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নিয়েছেন দেশ সেরা এই ক্রিকেটারকে।
– See more at: http://www.thereport24.com/article/70678/index.html#sthash.WAp291UY.dpuf