আ’লীগকে কঠিন মাসুল দিতে হবে : মির্জা ফখরুল
দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংসের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ দেশের সবচেয়ে বড় ক্ষতি করেছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমানের মতো শেখ হাসিনাও গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছেন। এর জন্য আওয়ামী লীগকে কঠিন মাসুল দিতে হবে।’
বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৫০তম জন্মদিন উপলক্ষে শুক্রবার সন্ধ্যায় বগুড়া শহরের আলতাফুন্নেসা মাঠে আয়োজিত এক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন। ‘অকুতভয় দেশনায়ক তারেক রহমানের ৫০তম জন্মদিনের উৎসব’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বগুড়া জেলা বিএনপি।
জেলা বিএনপির ১০ দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বগুড়া বিএনপির সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলাম। পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন চান।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘গত নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি-এই তিন মাসে এ সরকার বিএনপির ৩১০ জন নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। ৬৫ জনকে গুম করেছে। এরা যদি ক্ষমতায় থাকে তাহলে আমাদের অস্তিত্ব থাকবে না। আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব থাকবে না। তাই এই সরকারের বিরুদ্ধে এমনভাবে প্রতিবাদ করতে হবে, প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে এবং রাজপথ দখল করতে হবে যাতে তারা নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়।’
সরকার নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা তুলে দিয়ে দেশের সবচেয়ে বড় ক্ষতি করেছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশকে তারা দু’ভাগে বিভক্ত করেছে। একভাগে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের পক্ষ। অন্যভাগে আধিপত্যবাদের পক্ষ।’
সরকারের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, ‘গণতন্ত্রের সব দরজা একেবারে বন্ধ করে দেবেন না। এর পরিণতি হবে ভয়াবহ। অতীতে আপনাদের যেভাবে মূল্য দিতে হয়েছে ভবিষ্যতেও সেভাবেই মূল্য দিতে হবে।’
সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়েছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এখন ছাত্রলীগ-ছাত্রলীগ মারামারি করে মরছে। গতকাল (বৃহস্পতিবার) সিলেট বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেছে। এর আগেও অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এভাবে বন্ধ হয়েছে।’
সজীব ওয়াজেদ জয়ের বেতন-ভাতা নিয়ে সরকার জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী ধর্মের ওপর আঘাত দিয়ে কথা বলার পাশাপাশি আরেকটি তথ্য ফাঁস করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘জয়কে প্রতিমাসে ২ লাখ ডলার বেতন দেওয়া হয়। বাংলাদেশী মুদ্রায় যা ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা।’
ফখরুল বলেন, আমরা সরকারের কাছে এর ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এ ব্যাপারে সরকার কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি। গতকাল একটা প্রজ্ঞাপন জারি করে বলা হয়েছে, ‘জয়কে অবৈতনিক উপদেষ্টা নিয়োগ করা হলো।’
তিনি বলেন, ‘টাকা পয়সা সব দিয়ে ফেলে এখন তাকে (জয়) অবৈতনিক ঘোষণা করা হচ্ছে। বাঙালি জাতি এতবড় বোকা না যে তারা এই প্রতারণা বুঝতে পারবে না।’
তারেক রহমান সম্পর্কে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তিনি কেবল বগুড়ার গর্ব নন, বাংলাদেশ তো বটেই সারাবিশ্বের বাংলা ভাষাভাষী মানুষের সবচেয়ে প্রিয় নেতা। তিনি আধুনিক বাংলাদেশের নতুন করে স্বপ্ন দেখিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের তরুণ সমাজকে নতুন করে স্বপ্ন দেখিয়েছেন। তিনি তার বাবার মতো রাজনীতির নতুন এক দর্শন দাঁড় করাবার চেষ্টা করেছেন।’
যারা বাংলাদেশকে একটি নতজানু রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চেয়েছেন তারাই তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছেন অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘১/১১ এর সরকার কেবল তাকে (তারেক) গ্রেফতারই করেনি, তার ওপর অকথ্য নির্যাতন করেছে। সেই নির্যাতনে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এখন তিনি আমাদের থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে অবস্থান করছেন। দুর্বার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এ স্বৈরাচার সরকারকে হটিয়ে তারেক রহমানকে দেশে আনার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘দেশের গণতন্ত্র আজ অবরুদ্ধ। মানুষের মৌলিক অধিকার আজ কেড়ে নেওয়া হয়েছে। পুলিশ-র্যাবকে অবৈধভাবে ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। দেশকে পুলিশ ও সন্ত্রাসের রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। তারা জোর করে চিরদিন ক্ষমতায় থাকতে চায়। এভাবে ক্ষমতায় থাকা যায় না। ‘৭৫ সালেও তারা পারেনি। এখনও পারবে না।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ প্রতিনিয়ত মিথ্যাচার করছে। এই মিথ্যাচার শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে দলটির সকল নেতা করছে। মিথ্যাচার করেই তারা দেশকে এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। মিথ্যাচারের মাধ্যমে তারা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে।’
ফখরুল বলেন, ‘এই সরকার একটি ভয়াবহ মারাত্মক ফ্যাসিবাদী সরকার। আওয়ামী লীগ ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক দল। জুলুমবাজ ও জনগণ নির্যাতনকারী সরকার। প্রতিহিংসাপরায়ণ সরকার।’
বগুড়ার মাটি বাংলাদেশের নতুন ধারার রাজনৈতিক দর্শনের স্রষ্টা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মভূমি আখ্যায়িত করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বগুড়ার মাটিতে শহীদ জিয়া, খালেদা জিয়া ও তাদের সুযোগ্যপুত্র তারেক রহমানের ছোঁয়া। তারেক বগুড়ার চেহারা পাল্টে দিয়েছিলেন। সে জন্য এই ফ্যাসিবাদী সরকার বগুড়ার সঙ্গে জিঘাংসার রাজনীতি শুরু করেছে। তারা এত হীন যে, এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের কথা না ভেবে হাসপাতাল থেকে ভালো ভালো সকল যন্ত্রপাতি সরিয়ে নিয়েছে। এখানকার আন্তর্জাতিকমানের স্টেডিয়ামে গত ৬-৭ বছর কোনো খেলা হয় না। কি নিচু তাদের মানসিকতা!’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে বলেন, ‘রাজপথ দখলে নিয়ে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে দেশে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিতে বাধ্য করতে হবে। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে মুক্ত করতে হলে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।’
সমাবেশ শেষে স্থানীয় নেতাদের নিয়ে কেক কাটেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর পর শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে সঙ্গীত পরিবেশন করেন ঢাকা থেকে আসা শিল্পীরা।
জেলা নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, মো. শোকরানা, জানে আলম খোকা, অধ্যক্ষ মীর শাহে আলম, রেজাউল করিম বাদশা, ফজলুল বারী বেলাল, লাভলী রহমান, তৌহিদুল আলম, মেহেদী হাসান, মোশাররফ তাহাউদ্দিন নাহিন প্রমুখ।