‘জানুয়ারির মধ্যেই সরকারের বিদায়’
নতুন বছরের প্রথম মাসের মধ্যেই সরকারের পতন চায় বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। এ লক্ষে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই হরতাল, অবরোধ, মার্চ ফর ডেমোক্রেসি ও ঢাকা ঘেরাওয়ের মত ‘শর্টটার্ম’ আন্দোলন কর্মসূচি দিতে পারে তারা।
রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে রবিবার রাতে বিশ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। রাত সোয়া ৯টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত এ বৈঠক চলে।
বৈঠক সূত্র দ্য রিপোর্টকে জানায়, জোটের অধিকাংশ শীর্ষ নেতারই অভিমত ভোটারবিহীন প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় থেকে যাওয়া বর্তমান সরকারকে আরও বেশি সময় দিলে তারা জেঁকে বসবে। তাই শিগগিরই কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকারের পতন ঘটাতে হবে। এ জন্য জনগণের স্বার্থবিরোধী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডকে ইস্যু হিসেবে নিয়ে আন্দোলনের মাঠে নামতে হবে। এতে সরকারবিরোধী আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততা ও জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে।
সূত্র মতে, বৈঠকে অধিকাংশ নেতাই তাদের বক্তব্যে আগামী বিজয় দিবসকে জোটগতভাবে অত্যন্ত জাঁকজমকের সঙ্গে পালনের পক্ষে মত দেন। তাদের মতের সঙ্গে ঐক্যমত পোষণ করে জোট নেতা খালেদা জিয়াও এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ মহান স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসকে তাদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি বলে মনে করে। তারা মনে করে তারাই মুক্তিযুদ্ধে ‘সোল এজেন্ট’।
অথচ বিএনপিসহ বিশ দলীয় জোটের মধ্যেই বেশি সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধার অবস্থান। বিএনপি মুক্তিযোদ্ধার গড়া রাজনৈতিক দল। সেজন্য বিজয় দিবসকে ঘিরে বিএনপি ও জোটকে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। একই সঙ্গে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে জাঁকজমকভাবে এ অনুষ্ঠান পালন করা হবে।
বৈঠকে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূইয়া দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘বৈঠকে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আন্দোলন কর্মসূচি ও জনসম্পৃক্ততার বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে ফলপ্রসু আলোচনা হয়েছে। জোট নেতারা নিজেদের বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। জোট নেতা (খালেদা জিয়া) মনযোগ দিয়ে শুনেছেন। তিনি এ ব্যাপারে সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নেবেন।’
বৈঠকে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদ সদস্য ডা. রিদওয়ান উল্লাহ শাহেদী, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) প্রধান শফিউল আলম প্রধান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, জাতীয় পার্টির (জাফর) টিআইএম ফজলে রাব্বি ও মোস্তফা জামাল হায়দার, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের সভাপতি এইচ এম কামরুজ্জামান খান, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মোর্তুজা, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, খেলাফত মজলিশের মাওলানা মো. ইব্রাহিম, ইসলামিক পার্টির চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট আব্দুল মবিন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মহিউদ্দিন ইকরাম, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ভাসানী) চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম চৌধুরী, ডেমোক্রেটিক পার্টির (ডিএল) মহাসচিব সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, পিপলস লিগের সভাপতি গরীবে নেওয়াজ, সাম্যবাদী দলের চেয়ারম্যান সাঈদ আহমেদ অংশ নেন। এ ছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শুরুর আগে জোটের শরিক লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান দ্য রিপোর্টকে জানিয়েছিলেন, বৈঠকে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আগামী দিনের আন্দোলন কর্মসূচি ও কর্মপন্থা ছাড়াও অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা হবে।