মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় মোবারক হোসেনের ফাঁসির আদেশ
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা ও জামায়াতের সাবেক রোকন মোবারক হোসেনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া থানার এই রাজাকার কমান্ডারের মামলার তাকে সর্বোচ্চ এ দণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে।
আজ সোমবার সকালে এ রায় ঘোষণা করেন চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হকের সমন্বয়ে ৩ সদস্যের ট্রাইব্যুনাল।
মো. মোবারক হোসেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার মোগরা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা। ২০০৯ সালের ৩ মে খোদেজা বেগম নামের এক নারী মোবারকের বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থানায় মামলা করেন। মোবারক হাইকোর্টে আবেদন করে ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পান। তাঁর বিরুদ্ধে যখন মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তদন্ত চলছিল, তখন এই ট্রাইব্যুনাল তাঁকে জামিন দিয়েছিলেন। গত বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে। ১২ মার্চ ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ আমলে নিয়ে মোবারকের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠান। ওই সময় থেকে তিনি কারাগারে আটক রয়েছেন। গত বছরের ২৩ এপ্রিল হত্যা, অপহরণ, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে মোবারকের বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল-১।
অভিযোগ গঠনের আদেশ অনুসারে, মুক্তিযুদ্ধকালে মোবারক জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি জামায়াতের ইউনিয়ন পর্যায়ের সদস্য (রুকন) হন। একাত্তরে তিনি স্থানীয় রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন।
মোবারকের বিরুদ্ধে যতো অভিযোগ
প্রথম অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ২২ আগস্ট মোবারক ও অন্য রাজাকারেরা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া থানার টানমান্দাইল গ্রামের ২৬ জন ও জাঙ্গাইল গ্রামের সাতজনকে বাছাই করে তেরোঝুড়ি হাজতখানায় নিয়ে যান। ২৩ আগস্ট পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারেরা ওই ৩৩ জনকে দিয়ে গঙ্গাসাগর দীঘির পশ্চিম পাড়ে গুলি করে হত্যা করে মাটিচাপা দেয়।
দ্বিতীয় অভিযোগ: মুক্তিযুদ্ধকালে মোবারক ও অন্য স্বাধীনতাবিরোধীরা মিলে ‘আনন্দময়ী কালীবাড়ী’ নামের একটি হিন্দুমন্দিরের মূর্তি ভাঙচুর ও মালামাল লুটের পর এটি দখল করেন। পরে মন্দিরটির নাম রাখেন ‘রাজাকার মঞ্জিল’। ২৪ অক্টোবর মোবারক শিমরাইল গ্রামের আশুরঞ্জনকে অপহরণ করে আহত অবস্থায় চার দিন রাজাকার মঞ্জিলে আটকে রাখেন এবং ২৮ অক্টোবর তাঁকে কুড়লিয়া খালের পাড়ে নিয়ে গুলি করে হত্যা করেন।
তৃতীয় অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ১১ নভেম্বর রাত আটটা-নয়টার দিকে মোবারক তাঁর সশস্ত্র রাজাকার সহযোগীদের নিয়ে ছাতিয়ান গ্রামের আবদুল খালেককে অপহরণ করে সুহিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যান ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন। ওই রাতেই খালেককে তিতাস নদীর পশ্চিম পাড়ে বাকাইল ঘাটে নিয়ে গুলি ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়।
চতুর্থ অভিযোগ: ’৭১-এর ২৪-২৫ নভেম্বর বেলা দুইটা-আড়াইটার দিকে মোবারকের নেতৃত্বে রাজাকারের একটি দল খড়মপুর গ্রামের খাদেম হোসেন খানকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার স্টেশন রোড থেকে অপহরণ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজে স্থাপিত সেনাক্যাম্পে আটকে রেখে নির্যাতন করে। ৬ ডিসেম্বর অন্য কয়েকজন বন্দীর সঙ্গে তাঁকেও কুড়লিয়া খালের পাড়ে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়।
পঞ্চম অভিযোগ: একই বছর ২৮-২৯ নভেম্বর রাত ১১টার দিকে পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারদের সঙ্গে নিয়ে মোবারক খড়মপুর গ্রামের আবদুল মালেক ও আমিরপাড়া গ্রামের মো. সিরাজকে অপহরণ করেন। ৬ ডিসেম্বর সিরাজকে কুড়লিয়া খালের পাড়ে নিয়ে গুলি করে হত্যা করেন।