সাংবাদিকদের দায়িত্ববোধ নিয়ে প্রশ্ন তুললেন প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি : বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মোহাম্মদ মমতাজ উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেছেন, নারায়ণগঞ্জে ৭ খুনের মতো এতবড় একটা ঘটনায় যখন দেশ কাঁপছিল, তখন আপনারাই রহস্য উদ্ঘাটন করেছিলেন। আপনারা মনের মাঝখানে সেতুবন্ধন তৈরি করেন, গণতন্ত্র রক্ষা করেন। সেই আপনারাই কি কখনও চেষ্টা করেছেন প্রেস কাউন্সিলকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করার। নিজের বিবেকের কাছেই জিজ্ঞাসা করেন, আপনারা আপনাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছেন কিনা।
নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রেস কাউন্সিল এ্যাক্ট ১৯৭৪ ও প্রেস কাউন্সিল প্রণীত আচরণবিধি নিয়ে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, সারাদেশে ৫ হাজার ৩০০ অনলাইন রয়েছে, যা নীতিমালার মধ্যে আসা প্রয়োজন। এছাড়া পেশাদার সাংবাদিকদেরও তালিকাভুক্ত করা প্রয়োজন। কুমিল্লায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানিয়েছে প্রেস স্টিকার সাঁটানো মোটরসাইকেলে করে ফেনসিডিল আনা হচ্ছে। চট্টগ্রামের সাংবাদিকরা জানিয়েছে প্রেস স্টিকার লাগানো মাইক্রোবাস দিয়ে হাজার হাজার পিস ইয়াবার চালান আসছে। অবৈধ প্রেস স্টিকার ব্যবহারের বিষয়ে জেলা ও পুলিশ প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে। এ ছাড়া যে সকল সংবাদপত্রে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করা হয়ে থাকে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, আমাকে এক সাংবাদিক দুঃখ করে বলেছিল- স্যার, আমাদের কি লেবার বানিয়ে দিলেন। অথচ রোয়েদাদে আপনাদের চাকুরিচ্যুতির বিষয়ে তিনটি ধারা রয়েছে যা আপনারা অনেকেই পড়েও দেখেননি। ভাল সাংবাদিককে আমি সালাম দিব। আর অপসাংবাদিকদের জানাব ঘৃণা। আমরা চাই ভাল সাংবাদিক সৃষ্টি হোক। তবে আমরা মাহমুদুর রহমানের মতো সাংবাদিক যেন না পাই, যে কিনা দেশকে ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিল।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের অনুমতি ব্যতীত অত্র জেলা থেকে প্রকাশিত দৈনিকগুলো এক মাসের মধ্যে জেলা প্রশাসন বন্ধ করতে পারবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এছাড়া সাংবাদিকদের বিভিন্ন বক্তব্যও তিনি মন্ত্রণালয়ে জানানোর পাশাপাশি সংসদেও তুলে ধরবেন।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক আনিছুর রহমান মিঞা বলেন, আজকে এই সভার পরে আমার ধারণা পাল্টে গেছে। আমি শুনেছি এক সময়ে বালুর ট্রলারের হেলপার ছিল সেও এখন নারায়ণগঞ্জের একটি দৈনিকের সম্পাদক হয়ে গেছে। ওই ব্যক্তি প্রেস কাউন্সিলের সনদ পাবে সেটা আমরা আশা করব না। বেশ কিছুদিন পূর্বে সংবাদপত্র মালিক সমিতি আমার কাছে অভিযোগ দিয়েছিলেন। আমি ওই সময়েই তাদের দেওয়া অভিযোগ তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছি। তবে যেহেতু অনেক পত্রিকা সেহেতু একটু সময় লাগবে। এছাড়া রওশন আরা বেগমের বিষয়টিও আমি দেখব। এছাড়া প্রেস স্টিকার লাগানো গাড়ি যাতে তল্লাশির আওতায় আনা হয় সে বিষয়টিও আমি দেখব। তবে এতে যেন কোন প্রকৃত সাংবাদিক হয়রানির শিকার না হয়। যত্রতত্র সাংবাদিকদের কার্ড পাওয়ার বিষয়ে তিনি অচিরেই পেশাদার সাংবাদিকদের তালিকা তৈরি করা হবে। এছাড়া জেলা পর্যায়ে সাংবাদিকদের বেতন বা সম্মানী যাতে বৃদ্ধির বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। নতুন পত্রিকা প্রকাশের ক্ষেত্রে তিনি সহযোগিতা করবেন এবং ভাল সাংবাদিকদের পাশে তিনি সবসময়ই থাকবেন বলে জানান।
এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের সচিব শ্যামল চন্দ্র কর্মকার, নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও বাসসের উপ-বার্তা প্রধান কবি হালিম আজাদ, সাধারণ সম্পাদক ও এনটিভির জেলা প্রতিনিধি নাফিজ আশরাফ, সাবেক সভাপতি ও দৈনিক ডান্ডি বার্তার সম্পাদক হাবিবুর রহমান বাদল, যুগ্ম-সম্পাদক ও সময় টিভির জেলা প্রতিনিধি শরীফ উদ্দিন সবুজ, এটিএন বাংলা ও যুগান্তরের জেলা প্রতিনিধি আব্দুস সালাম, বিটিভির জেলা প্রতিনিধি মাহফুজুর রহমান, ডেইলি ইন্ডিপেনডেন্টের মোস্তফা করিম, দৈনিক খবর প্রতিদিনের সম্পাদক এস এম ইকবাল রুমি, দৈনিক মানবজমিনের স্টাফ করেসপনডেন্ট বিল্লাল হোসেন রবিন, দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি ও নিউজ নারায়ণগঞ্জের হেড অব নিউজ শরীফ সুমন, ইন্ডিপেনডেন্ট টিভির জেলা প্রতিনিধি মজিবুল হক পলাশ।
সভায় সাংবাদিকরা ঢাকায় অফিসে কর্মরতদের সঙ্গে বেতন বৈষম্য, নিয়োগপত্র প্রদান না করা, প্রেস স্টিকারের অপব্যবহার, রাজনৈতিক প্রভাবে চাকরিচ্যুত করা, জেলা প্রশাসনের অনুমতি ব্যতিরেকে অন্য জেলার ডিক্লারেশনে প্রকাশিত পত্রিকা বের হওয়াসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়।