প্রশ্নপত্র ফাঁসের সংস্কৃতি কি বন্ধ হবে?
প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় এবারও প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে। গত বছর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় কয়েকটি বিষয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠেছিল। ওই পরীক্ষার অন্তত দুইটি বিষয়ে প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রমাণ পেয়েছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি।
মিডিয়া খবর দিয়েছে— মঙ্গলবার সমাপনীর ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাড্ডার একটি কোচিং সেন্টার থেকে এই প্রশ্ন ছড়িয়ে পড়ে বলে অভিযোগ করেছেন কয়েকজন অভিভাবক। এর আগে রবিবার ও সোমবার যথাক্রমে অনুষ্ঠিত ইংরেজি ও বাংলা পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসেরও অভিযোগ ওঠে। ফাঁসের অভিযোগ বেশি ওঠে ঢাকা, বগুড়া, দিনাজপুর, রংপুর, টাঙ্গাইলসহ কয়েকটি জেলায়। সোমবার টাঙ্গাইলের বাসাইলে হাতে লেখা প্রশ্নপত্র শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিলির উদ্দেশে ফটোকপি করার দায়ে এক কিন্ডারগার্টেনের মালিক ও এক ফটোকপি ব্যবসায়ীকে কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ এনে মঙ্গলবার রাজধানী ও বিভিন্ন জেলায় অনেক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করেছেন অভিভাবকরা
প্রশ্নপত্র ফাঁস বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের খবর পাচ্ছেন সাংবাদিক ও অন্যান্য মাধ্যমে। তবে ৬৪ জেলা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে কিছু জানায়নি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অভিযাগ পাওয়া গেলে যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান, একটি সংঘবদ্ধ চক্র বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে এ সব কাজ করছে। কী সেই উদ্দেশ্য তারাই তা ভাল বলতে পারবে। ভালভাবে পরীক্ষা গ্রহণে সমন্বিত উদ্যোগ দরকার জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, তারা চাইছে না ভালভাবে পরীক্ষা হোক। যদি চাইত তাহলে সঙ্গে সঙ্গে জানিয়ে সরকারকে সাহায্য করত। মঙ্গলবারের পরীক্ষায় শতভাগ মিল পাওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরে এই পরীক্ষা বাতিল করা হবে কিনা- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, সারাদেশ থেকে প্রতিবেদন নিতে হবে। পাবলিক পরীক্ষা হুট করে বাতিল করতে পারি না। সারাদেশে প্রভাব আছে কিনা, দেখতে হবে। আমরা সর্বাধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে বিজি প্রেসে প্রশ্ন ছাপাচ্ছি। সেখান থেকে নিরাপত্তা দিয়ে প্রশ্নপত্র উপজেলায় পাঠানো হচ্ছে, কিভাবে কোথা থেকে কারা এ সব করছে, তা দেখতে হবে। তিনি বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে থাকলে মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায় আমিই নেব। তবে তদন্ত শেষে বোঝা যাবে আমি ও সচিব কতটুকু দায়ী। দেশের ছয় হাজার ৭৯১টি এবং দেশের বাইরে ১১টি কেন্দ্রে পঞ্চম শ্রেণীর ২৭ লাখ ৮৮ হাজার ৪৪ জন এবং মাদ্রাসার তিন লাখ পাঁচ হাজার ৭২১ জন শিক্ষার্থী ইবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে।
মন্ত্রী কথা দিয়েছেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের তথ্য প্রমাণিত হলে তিনি তার দায় নেবেন। কী দায় নেবেন আমরা তা জানি না, তবে গত কয়েক বছর যাবত বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষা, ভর্তি পরীক্ষা, বিসিএসসহ চাকরির পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অসংখ্য অভিযোগ এবং নজির মিলেছে কিন্তু দায় নিয়ে কোনো মন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন- এমনটা আমাদের জানা নেই। তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী যেহেতু দায়িত্ব নিয়ে বলেছেন, সেহেতু আমরা আশা করি তিনি তার কথার প্রতি সন্মান দেখাবেন। দায় নিয়ে পদত্যাগ করুন সেটা আমাদের কাম্য নয়। আমাদের চাওয়া দোষীদের বিরুদ্ধে শুধু ব্যবস্থা নেওয়া নয়, আমাদের চাওয়া সব ধরনের পরীক্ষা থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের এই সংস্কৃতি যাতে বন্ধ হয় তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হোক। মিডিয়া বা বিশেষ গোষ্ঠীর ওপর দায় চাপিয়ে দেওয়া খুবই সহজ। এ সহজ কাজটি করে অপরাধীদের পার পেয়ে যাওয়ার সুযোগ যাতে মন্ত্রী বাহাদুর না করে দেন— সেটিই আমাদের চাওয়া