ঝিনাইগাতী আওয়ামীলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষের নেপথ্যে–
মুহাম্মদ আবু হেলাল, ঝিনাইগাতী ঃ
দীর্ঘদিন পরে হলেও শেরপুরের সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলা আওয়ামীলীগের কাউন্সিলকে ঘিরে গত ২৮ নভেম্বর শুক্রবার রাতে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে উপজেলা আওয়ামীলীগের আহবায়ক আলহাজ এসএমএ ওয়ারেজ নাইম সহ ৫ জন আহত হয়েছে। আহতদের একজন যুবলীগ কর্মী হারুন উর রশিদ অন্যজন আহবায়ক কমিটির সদস্য মজিবর রহমান। আহতদের প্রথমে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে শেরপুর সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাত থেকেই চলছে সড়ক অবরোধ, গাড়ী ভাংচুর ও পুলিশ পাহারার মধ্যে দলীয় কার্যালয়। দলীয় ত্যগী নেতা কর্মীদের সূত্রে জানা যায়, বর্তমান সরকারের ৫ জানুয়ারী নির্বাচনের পর ভিশন টুয়েন্টি টুয়েন্টি ওয়ান বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে তৃর্ণমূলের নেতা কর্মীদের সমন্বয়ে দলের ভীত মজবুত করা সহ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্য সম্পন্ন করা।
এরই ধারাবাহিকতায় গত কয়েক মাস পূর্বে কেন্দ্রীয় কমান্ডের নির্দেশে জেলা কমিটির অনুমতি ক্রমে সাবেক সভাপতি আলহাজ এসএমএ ওয়ারেজ নাইমকে আহবায়ক করে ঝিনাইগাতী উপজেলা আওয়ামীলীগের একটি আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিতে অনেক ত্যাগী নেতা কর্মী স্থান না পেয়ে এ কমিটি গঠনের শুরু থেকেই স্থানীয় নেতা কর্মীদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ জমতে থাকে। এই কমিটির ব্যাপক বিরোধিতা থাকা সত্বেও পর্যায় ক্রমে উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ৬৩টি ওয়ার্ডের কমিটি গঠনের কাজে নেমে পড়েন বর্তমান আহবায়ক কমিটি। এই আহবায়ক কমিটির মাধ্যমে ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে অনেক ত্যাগী নেতা কর্মী ওইসব কমিটিতেও স্থান না পেয়ে এসব কমিটিকে আহবায়কের পকেট কমিটি বলে আখ্যায়িত করেন। যে কারনে গত ১১ নভেম্বর মঙ্গবার পুলিশ পাহারায় ওইসব বঞ্চিত নেতারা স্থানীয় পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বর্তমান আহবায়ক কমিটির বিরুদ্ধে জনসভা করে ক্ষোভ প্রকাশ করে। তাদের অভিযোগ ছিল, বর্তমান উপজেলা আওয়ামীলীগের আহবায়ক কমিটির আহবায়ক ও সাবেক সভাপতি এসএমএ ওয়ারেজ নাইম বিধি বর্হিভূত ভাবে দলীয় গঠনতন্ত্রকে তোয়াক্কা না করে, গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তার পক্ষে কাজ না করার দোহাই দিয়ে দলের ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে তার অনুগতদের নিয়ে গঠিত হয়েছে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি । তার পরেও গত ২১ নভেম্বর শুক্রবার সন্ধায় জাতীয় সংসদের হুইপ শেরপুর জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আতিউর রহমান অতিকের সাথে ঝিনাইগাতী উপজেলা আওয়ামীলীগের আহবায়ক কমিটির নেতৃবৃন্দগণ যান ঝিনাইগাতী উপজেলা আওয়ামীলীগের কাউন্সিলের তারিখ জানার জন্য। আহবায়ক কমিটিকে হুইপ সাহেব আশ্বাস দেন, আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে কাউন্সিলের সকল কাজ সম্পন্ন করা হবে। আর এ খবর ঝিনাইগাতী উপজেলা আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে বাদ পড়া ত্যাগী নেতা কমীদের ক্ষোভ বাড়তে থাকে। ইতিমধ্যে আকস্মিক ভাবে আগামী ৪ ডিসেম্বর উপজেলা কাউন্সিলের তারিখ নির্ধারণ করলেও অদ্যবধি পর্যন্ত ওইসব ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কমিটিকে কোন অনুমোদন না দেয়ায়, যারা প্রার্থী হতে ইচ্ছুক, তারা কোন ভোটারের কাছেও যেতে পারছেন না। এ অবস্থায় বিক্ষুব্ধ ওইসব ত্যাগী নেতা কর্মীরা উপরোক্ত কারণগুলোর ব্যাখ্যা আহবায়ক এসএমএ ওয়ারেজ নাইমের কাছে চাইতে গেলে, উভয় গ্রুপের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সংঘর্ষ বেধে যায়। এতে আহবায়ক এসএমএ ওয়ারেজ নাইমসহ ৩ জন আহত হয়। এরই জের ধরে শুক্রবার রাত থেকে এ রির্পোট লেখা পর্যন্ত কয়ারীরোড মোড় নামক স্থানে রাস্তায় গাছ ফেলে রেখে চলছে সড়ক অবরোধ। বর্তমানে উভয় গ্রুপের মধ্যে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। তাই ঝিনাইগাতী উপজেলা আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের তৃণমূলের ত্যাগী নেতা কর্মীদের দলের হাই কমান্ডের নিকট প্রাণের দাবী জানিয়েছেন, সকল ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ঝিনাইগাতী উপজেলা আওয়ামীলীগের কাউন্সিলের পূর্বে পূনরায় গণতান্ত্রিক উপায়ে ওয়ার্ড ও ইউনিয়নের কমিটি গঠন করে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে উপজেলা আওয়ামীলীগের কাউন্সিল করা হউক । আর তা না হলে সামনে ঘটতে পারে আরোও বড় ধরনের সংঘাত।