বাবুই পাখির মিলনমেলা
কবি রজনীকান্ত সেনের সেই বাবুই পাখি, যারা অন্যের অট্টালিকায় নয়, খড়কুটায় গড়ে নেয় নিজের নিবাস। সেই বাবুই পাখি এখন প্রায় দেখাই যায় না। তাই রাস্তার ধারে হঠাৎ তাদের মিলনমেলা আকর্ষণ করে পথিকের দৃষ্টি।
গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার ধাপেরহাটে দুটি গাছে বসেছে বাবুই পাখির মিলনমেলা। রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের ধাপেরহাট বাসস্ট্যান্ডের পাশে একটি আম ও একটি কৃষ্ণচূড়া গাছে শত শত বাবুই পাখির কলতানে মুখর হয়ে উঠেছে ধাপেরহাট। দূর থেকে দেখলে মনে হয় যেন গাছের ডগায় ডগায় সাদা ফুল ফুটে আছে। বাবুই পাখিদের এমন দলবদ্ধভাবে বিচরণের দৃশ্য পথচারীসহ সবাইকে সহজেই আকৃষ্ট করছে। চলন্ত পথিকও থমকে দাঁড়িয়ে বাবুই পাখির মিলনমেলা দেখে যাচ্ছেন।
মনের আনন্দেই বাবুইরা ঘুরছে ধাপেরহাটের আকাশে। ইচ্ছে হলেই উড়ে বেড়াচ্ছে। সন্ধ্যা হলে আবার এসে আশ্রয় নিচ্ছে গাছ দুটিতে। সেখানে মনের সুখে কিচিরমিচির ও টিউটিউ গান করে বাবুই পাখিরা।
সন্ধ্যায় সরজমিনে দেখা যায়, গাছের ডাল ও পাতায় পাতায় ঝুলে আছে শত শত বাবুই। এ যেন অন্যরকম এক পাখির মেলা। তাদের কলতানে মুখর বাসস্ট্যান্ড। অবশ্য আমি একটু হতাশ হলাম আগের মতো সেই দৃষ্টিনন্দন বাসা না দেখে।
স্থানীয় সংবাদকর্মী আমিনুল ইসলাম স্বাধীন ও ছোলায়মান সরকার জানান, কয়েক বছর ধরে বাবুই পাখিরা শীতের মৌসুমে এখানে এসে আশ্রয় নেয়। শীত শেষে তারা আবার চলে যায়। শীতের আগমনে মুক্ত বাতাস খুঁজতে খুঁজতেই ধাপেরহাটে এসে পড়ে বাবুইরা।
স্কুলশিক্ষক রাজু আহম্মেদ ও আবদুল মালেক সাজু জানান, তিন-চার মাস থাকে বাবুইরা এখানে। বাকি সময় কোথায় থাকে তা কেউ জানে না।
তবে বাবুইরা স্ট্যান্ডের লোকজন ও পথচারীদের বিরক্ত করে মাঝে মাঝেই। তারা যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগ করায় অনেককেই সময়-অসময় বিব্রত হতে হয়।
বাবুই পাখির এই মিলন মেলার কথা শুনে সাদুল্যাপুর শহর থেকে ছুটে এসেছেন ফুয়াদ আমীন ও ফারুকুল ইসলাম ফারুক। তারা জানান, একসঙ্গে তারা কোনো দিনই এত বাবুইর কোলাহল দেখেননি। বাবুই দেখে তারা অভিভূত হয়েছেন বলে জানান।
ধাপেরহাট বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থানরত জনপ্রিয় হোটেলের মালিক শফিউল ইসলাম জানান, ‘বাবুই পাখির বিষ্ঠায় অনেকটা নোংরা ও দুর্গন্ধময় পরিবেশ বিরাজ করে। তবু বাবুইদের মিলনমেলা দেখে আমাদের ভাল লাগে।’
ধাপেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম শিপন জানান, ‘কালের বিবর্তনে বাবুই পাখি হারিয়ে যাচ্ছে। অথচ ধাপেরহাট এলাকায় বাবুইরা অবস্থান নিচ্ছে। আমরা চাই আরও বাবুই আসুক আমাদের এলাকায়।’