বাসচাপায় ছাত্র নিহত, ৪০ গাড়িতে আগুন ইবি বন্ধ ঘোষণা, শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ভাড়া করা বাসের চাপায় ছাত্র নিহতের ঘটনায় সংঘটিত সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সোমবারের মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া ৪০টি বাস ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মোটর শ্রমিক নেতাকর্মীরা কুষ্টিয়ার সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন।
ইবির প্রধান ফটকে রবিবার দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাড়া করা বাসের চাপায় এক ছাত্র নিহত হন। ওই ঘটনার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহনসহ ৪০টি গাড়িতে আগুন এবং প্রশাসনিক ভবনে ভাঙচুর চালান বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শতাধিক রাউন্ড গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। এতে তিন পুলিশসহ অন্তত আট ছাত্র আহত হন।
নিহত তৌহিদুর রহমান টিটু (২১) বায়োটেক অ্যান্ড জেনেটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। তিনি ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার আব্দুল আজিজের ছেলে।
সংঘর্ষের ওই ঘটনার পর অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ছাত্রদের রবিবার সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হলেও পরবর্তী সময়ে তা বাড়িয়ে সোমবার ভোর ৬টা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. আব্দুল হাকিম সরকার দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘রবিবার সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে সকল ছাত্রকে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু অসুবিধার কথা বিবেচনা করে তা বাড়িয়ে সোমবার ভোর ৬টা করা হয়। এ ছাড়া সোমবার সকাল ১০টার মধ্যে মেয়েদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
অন্যদিকে, বাস ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ক্ষতিপূরণ ও বিচারের দাবিতে বাস মালিক সমিতি, মোটর শ্রমিক ইউনিয়নসহ জেলার পাঁচ শ্রমিক সংগঠন অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘট আহবান করেছে। রবিবার দুপুর থেকে কুষ্টিয়ার সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বাসে ওঠার জন্য টিটু হ্যান্ডেল ধরলে ওই অবস্থাতেই চালক বাস ছেড়ে দেন। এ সময় ভারসাম্য রাখতে না পেরে বাস থেকে ছিটকে পড়েন তিনি। চলন্ত বাসটি মোড় নিলে তার মাথা চাকার নিচে পড়ে থেতলে যায়। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
বিষয়টি জানার পর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ও ভাড়া করা ৪০টি গাড়িতে আগুন দেন। তারা প্রশাসনিক ভবনসহ অন্যান্য ভবনে ভাঙচুর চালান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে রক্ষিত প্রথমে ১০টি বাস এবং পরে আরও ৩০টি বাস ভাঙচুর ও আগুন দেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে হামলা ও ভাঙচুর চালান।
খবর পেয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গেলে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তাদের ধাওয়া দেন এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে গাছের গুঁড়ি ফেলে এবং টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন।
ফায়ার সার্ভিসের একটি দল এসেও শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে পড়েন। তারা ঘটনাস্থলে যেতে পারেননি। এরপর তারা উপাচার্যের বাস ভবনে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স ক্যাম্পাসে আসে। তারা ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করতে শতাধিক রাউন্ড টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এতে পাঁচ শিক্ষার্থী ও তিন পুলিশ সদস্য আহত হন বলে স্বীকার করেন কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার প্রলয় চিসিম।
রবিবার বিকেল ৪টায় তিনি দ্য রিপোর্টকে বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, হল খোলা রাখতে রবিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শতাধিক ছাত্রী একটি মিছিল বের করেন। মিছিলটি প্রশাসন ভবনের সামনে থেকে প্রধান ফটক হয়ে ফের প্রশাসন ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। তারা সেখানে অবস্থান ধর্মঘট পালন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খোলা রাখার দাবিতে তারা এ সময় বিভিন্ন শ্লোগান দেন।
পরে ছাত্রীদের একটি প্রতিনিধি দল ভিসি প্রফেসর ড. আবদুল হাকিম সরকারের কাছে হল খোলা রাখার দাবি জানালে ভিসি তাদের শীতকালীন ছুটিতে ক্যাম্পাস খোলা রাখার আশ্বাস দেন।
ক্যাম্পাস ছেড়ে যাওয়ার সময় শিক্ষার্থীরা কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ বাস মালিক সমিতির শ্রমিকদের হাতে বিভিন্ন স্থানে লাঞ্ছিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।