সংসদে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে প্রস্তাব গ্রহণ- নির্বাচনের জন্য খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরই অপেক্ষা করতে হবে
জাতিসংঘ কর্তৃক সম্মানজনক ‘সাউথ সাউথ কো-অপারেশন ভিশনারী অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন করায় জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে সর্বসম্মত প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে। এর আগে এই আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করে বলেছেন, নির্বাচনে না এসে এখন ভুল বুঝতে পেরে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া এখন নির্বাচনের জন্য চেঁচামেচি করছেন। দেশে জনসমর্থন না পেয়ে এখন বিদেশীদের কাছে ধর্না দিচ্ছেন। কিন্তু হুমকি-ধামকি কিংবা ষড়যন্ত্র করে লাভ হবে না। আগামী নির্বাচনের জন্য খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরই অপেক্ষা করতে হবে।
আজ রবিবার রাতে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন সরকারি দলের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। এর ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নেন সরকারি দলের বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, অধ্যাপক আলী আশরাফ, অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু, মাহবুবউল আলম হানিফ, উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ, ড. আবদুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান, ড. হাছান মাহমুদ, পংকজ দেবনাথ, অ্যাডভোকেট তারানা হালিম, ফজিলাতুন নেসা বাপ্পি, ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন, জাসদের মইনউদ্দীন খান বাদল, বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী, জাতীয় পার্টির রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশিদ, তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, বিএনএফের আবুল কালাম আজাদ এবং স্বতন্ত্র সদস্য হাজী মো. সেলিম ও ডা. রুস্তম আলী ফরাজী।
শিল্পমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার কঠোর সমালোচনা করে বলেন, উনি বলেন দেশে নাকি কোনোই উন্নয়ন হয়নি! উনি কোনো গণতান্ত্রিক দেশে বসবাস করেন? বিএনপি নেত্রী না দেখলেও দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবেই। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ সারাবিশ্বের কাছে উন্নয়নশীল সমৃদ্ধিশালী দেশের মর্যাদা পেয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, গণতনে্ত্রর প্রতি প্রধানমন্ত্রীর অবিচল আস্থা আগামীতেও দেশকে উন্নয়নের স্বর্ণশিকড়ে উন্নীত করবে। তথ্য প্রযুক্তিতে বাংলাদেশ আজ সারাবিশ্বের কাছে অগ্রগামী দেশ হিসেবে পরিচিত। আমাদের উন্নয়ন প্রক্রিয়া সারাদেশে বিস্মৃত হওয়ার কারণেই বিশ্বমন্দার মধ্যেও আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছি।
কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে বসে যারা পাকিস্তানের স্বপ্ন দেখেন, তাদের নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যেতে পারে না। ‘৭৫-এর পর থেকে বিপরীতমুখী অবস্থানে থেকে ক্ষমতা দখলকারীদের বাংলাদেশকে কীভাবে চুষে খাওয়া যায়, তারই প্রতিযোগিতা চলেছে। এ কারণে বিগত সরকারগুলোর সময় বাংলাদেশ কোন অর্জন বা পুরস্কার অর্জনের কথা তো দূরের কথা, তিরস্কার পাওয়ারও যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বাংলাদেশের জন্য বিরল এ সম্মান অর্জন এনে দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তঁার যোগ্য নেতৃত্ব, প্রজ্ঞা ও দক্ষ রাষ্ট্রপরিচালনার কারণেই বাংলাদেশ একটির পর একটি আন্তর্জাতিক সম্মান অর্জন করছে।
বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন না হলে গণতন্ত্রের কী হতো? হাজার হাজার মানুষ মারা যেত, দেশ ধবংস হয়ে যেত এবং গণতন্ত্রহরণ হতো। জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে বলেই অগণতান্ত্রিক শক্তি ক্ষমতায় আসতে পারেনি। বিএনপি নির্বাচনে না এসে এখন ভুল বুঝতে পেরেছে, নির্বাচনের জন্য চেঁচামেচি করছে। কিন্তু বিএনপিকে আগামী ৫ বছর নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
জাসদের মইন উদ্দীন খান বাদল বলেন, খালেদা জিয়া না জেতা পর্যনত্ম কোনো নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কি না, জানি না। রাষ্ট্রকে হামলা করলে রাষ্ট্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবেই। গণতন্ত্র আছে বলেই খালেদা জিয়া রাষ্ট্রকে হামলা করলে তাঁকে আক্রান্ত হতেই হবে, মামলারও মুখোমুখি হতে হবে।
জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে জাতীয় পার্টি ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে না আসলে দেশের এতো অর্জন কোনদিনই সম্ভব হত না। সংঘাত-সংঘাত, সংসদ বর্জন, অশোভন আচরণ ও ফাইল ছোঁড়াছুড়ির রাজনীতিতে জাতীয় পার্টি বিশ্বাস করে না। এ দেশের কল্যাণের জন্য সরকার ও বিরোধী দল একসঙ্গে কাজ করবো।
বিএনএফে’র আবুল কালাম আজাদ বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন না হলে দেশে গণতান্ত্রিক সরকার থাকতো না। বিএনপি সেটাই চেয়েছিল। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছে। এই নির্বাচন না হলে সিপিএ, আইপিইউ বা সাউথ সাউথ পুরস্কার অর্জিত হতো না। শেখ হাসিনা চ্যালেঞ্জ নিয়েই নির্বাচন করে গণতন্ত্রকে রক্ষা করেছেন।
সরকারি দলের লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশের জন্য সুনাম অর্জন করছেন, পুরস্কার নিয়ে আসছেন- ঠিক তখন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া দেশকে অগ্রগতির মিছিল থেকে পিছিয়ে দিতে নানা ষড়যন্ত্র করছে।
তারানা হালিম প্রশ্ন রেখে বলেন, দেশের ক্ষতি করে, ধ্বংস করে কিভাবে খালেদা জিয়া দেশনেত্রী হোন? ক্ষমতার লোভে উনি দেশকে বিশ্বের কাছে ছোট করছেন। দেশকে পিছিয়ে দিতে জঙ্গিদের সঙ্গে নিয়ে খালেদা জিয়া যে অশুভ খেলা শুরু করেছে, তা কোনোদিন সফল হবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।