হোয়াইটওয়াশ মিশনের মহানায়করা
জিম্বাবুয়েকে দ্বিতীয় বারের মতো ৫ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করেছে বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে এমন সাফল্যে ব্যাটে-বলে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন সাকিব আল হাসান। সঙ্গে মুশফিকুর রহিম, মাশরাফি বিন মর্তুজা, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, এনামুল হক বিজয় ও তাইজুল ইসলামও আলাদা আলাদাভাবে জয়ের রূপকার। আসুন তাদের কীর্তিগুলো দেখে নিই।
সাকিব আল হাসান : বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন এই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে মাঠে ফিরেই ব্যাট ও বল হাতে নিজেকে ছাড়িয়ে গিয়েছেন সাকিব। টেস্টের মতো ৫ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজেও সর্বোচ্চ উইকেট নিয়েছেন তিনি। ৫ ম্যাচে তার সংগ্রহ ১১ উইকেট। ব্যাট হাতে সাকিবের রান ১৪২।
সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে সেঞ্চুরিও পেয়েছেন সাকিব। একই ম্যাচে সেঞ্চুরির সঙ্গে ৪ উইকেট নিয়ে বিশ্বের বিরল রেকর্ডবুকেও জায়গা করে নিয়েছেন সাকিব আল হাসান।
মাশরাফি বিন মর্তুজা : অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পেয়েই চমক দেখিয়েছেন মাশরাফি। হারের বৃত্তে আটকে থাকা বাংলাদেশকে জয়ের পথে ফিরিয়ে আনতে নেতৃত্বও দিয়েছেন বল হাতে। দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানদের আতঙ্কের নামও ছিলেন মাশরাফি। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে জিম্বাবুয়ের ব্যাটিং লাইনআপ ধসিয়ে দিয়েছেন। ৫ ম্যাচে মাশরাফির উইকেট সংখ্যা ৯টি। বিশ্বকাপের আগে বল হাতে মাশরাফির এই দারুণ পারফরম্যান্সে স্বস্তি ফিরেছে বাংলাদেশ শিবিরেও। আবার এক ম্যাচে ব্যাটেও সেই মাশরাফিকে খুঁজে পেয়েছে ভক্তরা।
এনামুল হক বিজয় : জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে ব্যাট হাতে নৈপুণ্য দেখিয়েছেন এনামুল হক বিজয়। ওয়ানডে সিরিজ ৩-০ তে জয় নিশ্চিত করার পেছনে বাংলাদেশ দলের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তিনি। তৃতীয় ওয়ানডেতে বিজয়ের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের স্কোর ২৯৭ তে পৌঁছায়। তার আগে চট্টগ্রামে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৮০ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেছেন বিজয়। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৫ ওয়ানডে ম্যাচ সিরিজে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২০০ রান সংগ্রহ করেছেন তিনি।
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ : পার্শ্ব নায়কের মতো বাংলাদেশ দলে ভূমিকা রাখলে মূল ফোকাসে আসা হয় না মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের কখনই। তবে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চতুর্থ ওয়ানডেতে ব্যাটিং হাতে নায়কের ভূমিকা পালন করেছেন তিনি। ওই ম্যাচে দলের বিপর্যয়ের সময় ওয়ানডেতে ক্যারিয়ার সেরা অপরাজিত ৮২ রানের ইনিংস খেলেছেন। তার দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের সুবাদেই ওই ম্যাচে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। পঞ্চম ওয়ানডেতেও অপরাজিত ৫১ রানের ইনিংস খেলেছেন তিনি। ৫ ম্যাচে মাহমুদউল্লাহের সংগ্রহ তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৭৯ রান।
মুশফিকুর রহিম : অতিথি জিম্বাবুয়েকে দ্বিতীয় বারের মতো ৫ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশের অন্যতম নায়ক মুশফিকুর রহিমও। ওয়ানডেতে অধিনায়কের দায়িত্ব না থাকায় অনেকটাই নির্ভার ছিলেন তিনি। মাঠে তাই ব্যাট হাতে প্রমাণ দিয়েছেন। দলের বিপদের সময় ব্যাট হাতে দায়িত্বশীল ইনিংস খেলে ম্যাচও জিতিয়েছেন অনেকবার। সদ্যসমাপ্ত সিরিজেও সর্বোচ্চ ২১৩ রান সংগ্রহ করেছেন মুশফিকই। যে কারণে ওয়ানডে সিরিজ সেরা খেলোয়াড় পুরস্কার ওঠেছে তার হাতেই।
তাইজুল ইসলাম : বিশ্ব ওয়ানডে ক্রিকেটে নতুন ইতিহাস রচনা করেছেন বাঁহাতি তরুণ স্পিনার তাইজুল ইসলাম। ৪৪ বছরের ওয়ানডের ইতিহাসে এই প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেক ম্যাচেই হ্যাটট্রিক উইকেট শিকারের রেকর্ড গড়েছেন তিনি। ওয়ানডেতে এমন কীর্তি আগে আর কোনো ক্রিকেটার দেখাতে পারেননি। সোমবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পঞ্চম ওয়ানডেতে এই বিশ্ব রেকর্ড গড়ে তাইজুল ওঠে গেছেন নতুন উচ্চতায়; এক নতুন মাইলফলকে নাম খোদাই করে রেখেছেন। ৭ ওভার বল করে দিয়েছেন মাত্র ১১ রান; নিয়েছেন হ্যাটট্রিকসহ ৪ উইকেট। তাইজুলের ঘূর্ণি-জাদুতে জিম্বাবুয়েকে ৫-০ তে হোয়াইটওয়াশের সহজ অভিযাত্রা নিশ্চিত হয়েছে বাংলাদেশ।