আশুগঞ্জ মাল্টি-কমপ্লেক্স কন্টেইনার নির্মাণ শুধু ঘোষণা দিয়েই ৫ বছর পার
ব্রাহ্মণবাড়ীয় সংবাদদাতা : মন্ত্রী, সচিব, দপ্তর প্রধান, হাইকমিশনারসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক একাধিক বিশেষজ্ঞ ও প্রতিনিধি দলের পরিদর্শনেই পেরিয়ে গেছে পাঁচ বছর। আলোর মুখ দেখা হয়নি আশুগঞ্জ মাল্টি-কমপ্লেক্স কন্টেইনার টার্মিনাল প্রকল্পের (আইসিটি)।
অবকাঠামোর উন্নয়ন কাজ শুরু করাতো দূরের কথা, ভূমি অধিগ্রহণই হয়নি গেল পাঁচ বছরে। ফলে ভূমির মালিকদের কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনতে গুনতে পথে বসার উপক্রম হয়েছে। সিদ্ধান্ত না হওয়ায় জমিতে কোনো ধরনের স্থায়ী অবকাঠামো বা জমি বিক্রি পর্যন্ত করতে পারছেন না তারা। যাদের চাতালকলসহ অন্যান্য ছোট ছোট শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে তারা নিজেরা কোনো কাজ করতে পারছেন না। এমনকি কেউ অধিগ্রহণের ভয়ে ভাড়াও নিচ্ছেন না। ফলে প্রস্তাবিত জমির মালিক ও ক্ষুদ্র শিল্প মালিকরা আইনি যাতাকলে পড়ে এখন নিঃস্ব হতে বসেছেন।
সর্বশেষ নভেম্বর মাসের শেষ সাপ্তাহে নৌমন্ত্রী শাজাহান খান এমপি আশুগঞ্জ নৌ-বন্দর পরিদর্শনে আসেন। তিনি প্রস্তাবিত অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার টার্মিনাল (আইসিটি) কাজ আগামী তিন মাসের মধ্যে শুরু করার আশ্বাস দেন।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৮ সালে দ্বিতীয়বারের মত ক্ষমতা গ্রহণের পর আশুগঞ্জ নদীবন্দরকে ‘পোর্ট অব কল’ ঘোষণা করেন। পাশপাশি আন্তঃদেশীয় নৌ-বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য আশুগঞ্জ বন্দরে আন্তর্জাতিক মানের অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার টার্মিনাল (আইসিটি) প্রকল্প স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। এ প্রকল্প স্থাপনের জন্য ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে একনেকের সভায় ২৪৫ কোটি টাকা অনুমোদন দেওয়া হয়। এ ছাড়া ২০১০ সালে ভারতের তৎকালীন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জীর ঢাকা সফরে দুই দেশের মধ্যে সম্পাদিত এক বিলিয়ন ডলারের ঋণ সহায়তা চুক্তির আওতায় নির্ধারিত ১৪টি প্রকল্পের অন্যতম আশুগঞ্জ আঞ্চলিক ট্রান্সশিপমেন্ট কেন্দ্রের জন্য বরাদ্দ ছিল ৩৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। সম্ভাব্য প্রায় ১০০ বিঘা ভূমি অধ্যুষিত এ প্রকল্পে ছিল তিনটি আন্তর্জাতিক মানের টার্মিনাল জেটি, কাস্টমস অফিস, বিআইডব্লিউটি’র অফিস, বন্দর কর্তৃপক্ষের অফিস, কন্টেইনার টার্মিনাল, ক্রেন ইয়ার্ড, ওয়্যার হাউজ, ইলেকট্রিক সাবস্টেশন, ট্রাক ইয়ার্ড, রেস্ট হাউজসহ বিভিন্ন স্থাপনা।
বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান গত মার্চ মাসে আশুগঞ্জ বন্দর পরিদর্শনে এসে জানিয়েছিলেন, মংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্যবাহী জাহাজ আশুগঞ্জে সরাসরি যেন আসতে পারে এ জন্য মাল্টি-কমপ্লেক্স কন্টেইনার টার্মিনাল স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এ জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে প্রায় আড়াইশ কোটি টাকা।
কিন্তু আশুগঞ্জে ভূমির দাম বেশি হওয়ায় সরকারের কাছে বরাদ্দ পুনর্বিবেচনার জন্য রিপোর্ট পাঠান হয়। তখন তিনি আরও বলেছিলেন, চলতি বছরের মে মাসের মধ্যে কাছ শুরু করা হবে। কিন্ত বাস্তবে ঘোষণার ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত জমি অধিগ্রহণই শুরু হয়নি।
অধিগ্রহণের জন্যে দু’দফা নোটিশ প্রদান করা হলেও পরবর্তী সময়ে কোনো সরকারি নির্দেশনা না আসায় ভূমিদাতাগণ হতাশ ও সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। পাশপাশি ভূমির মালিকরা দ্রুত অধিগ্রহণ অথবা জমির স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে মিছিল ও সমাবেশ করেছেন।
ভূমির মালিক জামাল মিয়া জানান, আমাদের জমি অধিগ্রহণ করা হোক অথবা জমি ফিরিয়ে দেওয়া হোক। আর কিছু দিন গেলে আমাদের পথে বসতে হবে।
এ বিষয়ে প্রকল্পের পরিচালক মাইদুল ইসলাম কোনো কথা না বললেও বিআইডব্লিউটিএ’র পরিচালক মো. শফিকুল হক জানান, আশুগঞ্জ মাল্টি-কমপ্লেক্স কন্টেইনারের নির্মাণ প্রকল্পে প্রায় পাঁচশ কোটি টাকা ব্যয় হবে। বাংলাদেশ ও ভারত যৌথভাবে প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি শেষ করে ভারতকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ভারত আমাদের প্রস্তাবটি যাচাই-বাছাই করে প্রায় চূড়ান্ত করেছে।
তিনি আশা প্রকাশ করে জানান, জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে আশুগঞ্জ মাল্টি-কমপ্লেক্স কন্টেইনারের নির্মাণ কাজ শুরু করা যাবে।
নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খান এমপি অবশ্য জানিয়েছেন, আগামী তিন মাসের মধ্যে আশুগঞ্জে অত্যাধুনিক নৌ-বন্দরের কাজ শুরু হবে।
এদিকে, ঘোষণার পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও বন্দরের অবকাঠামোর কোনো উন্নয়ন না হওয়ায় হতাশ স্থানীয়রাও। তারা বন্দরের সার্বিক অবকাঠামোর উন্নয়নে দ্রুত নির্মাণ কাজের দাবি জানিয়েছেন।